মাফিয়াদের হাতে জিম্মি মাদারীপুরের অর্ধশত যুবক। স্থানীয় দালালদের লাখ লাখ টাকা দিয়েও মিলছে না মুক্তি। আদরের সন্তানরা ফিরে না আসায় ঘরে ঘরে চলছে কান্নার রোল। লোভের কারণে অবৈধ পথে বিদেশযাত্রাই বার বার এমন ঘটনার জন্ম দিচ্ছে উল্লেখ করে জেলা প্রশাসন বলছে, লিবিয়ায় বন্দিদের ফিরিয়ে আনতে পদক্ষেপ নেয়া হবে।
মাদারীপুর রাজৈর উপজেলার বৌলগ্রামের রেবা বেগম। তিনি সারাক্ষণ চোখের পানি ঝড়াচ্ছেন আদরের সন্তান সামিউল কবে ফিরবে সেই আশায়। শুধু রেবা বেগমই নন, তার মতো সদর উপজেলার শিরখাড়া ইউনিয়নের রাজারহাট এলাকার লিমা বেগম কষ্ট আর উৎকণ্ঠায় আছেন স্বামী সুজন মাতুব্বরের অপেক্ষায়।
একই অবস্থা মিরাজ ফকির, সুজন মাতুব্বর, ফরিদ মোল্লা, নাঈম হাওলাদার, রুবেল মোল্লা, নাবিল খানসহ অর্ধশত যুবকের পরিবারে। দুই মাস আগে অবৈধভাবে সমুদ্র পথে ইতালি যাবার সময় লিবিয়ার মাফিয়াদের হাতে আটক হন তারা। পরে তাদের জিম্মি করে পরিবারের কাছ থেকে দফায় দফায় আদায় করা হয় মুক্তিপণের লাখ লাখ টাকা। তবুও মুক্তি মিলছে না তাদের।
ভুক্তভোগীদের অভিযোগ, প্রশাসনের তৎপরতার অভাবেই খোকন মাতুব্বর, তোতা কাজী, ফরিদ মোল্লা, দুলাল কাজী, রফিকুলসহ শত শত দালালদের চক্র গড়ে উঠেছে মাদারীপুরে। এদের বিরুদ্ধে একাধিকবার অভিযোগ আর মামলা হলেও অদৃশ্য কারণে ধরাছোঁয়ার বাইরে রয়ে যায় তারা।
লিবিয়ায় বন্দি সুজন মাতুব্বরের স্ত্রী লিমা বেগম বলেন, দুই দফায় আমার স্বামী লিবিয়ার মাফিয়াদের হাতে ধরা খাইছে, জমি-জমা বিক্রি করে দালালদের সাড়ে ৯ লাখ দিয়েছি। এখনো আমার স্বামীকে তারা মুক্তি দিচ্ছে না। একটা রুমের মধ্যে ৩০ থেকে ৪০ জনকে আটক রেখেছে। দুই বেলা খাবারও দেয় না তাদের।
লিবিয়ায় বন্দি সামিউল শেখের মা রেবা বেগম বলনে, আমার সন্তান আবার বুকে ফেরত চাই। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে আকুল আবেদন। আমার ছেলেকে যারা আটকে রেখে অত্যাচার করছে, তাদের বিচার চাই।
মাদারীপুর সদর উপজেলার রাস্তি ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান ইদ্রিস শিকদার বলেন, আমার নাতি নিলয় হাওলাদার, চাচাতো ভাইর ছেলে রাকিব বেপারী ও শাওন মৃধাসহ এলাকার অনেক পরিবারের কাছ থেকে দালালচক্র লাখ লাখ টাকা নিয়েছে। এর মধ্যে পশ্চিম পেয়ারপুর এলাকার এক দালাল বাদশা। লিবিয়া থেকে ইতালি পৌঁছাবে, চুক্তি ছিলো সাড়ে ৭ লাখ টাকার। কিন্তু প্রত্যেক পরিবারের কাছ থেকে বাদশা ১৫ থেকে ২১ লাখ নিয়েছে। টাকা না দিলে বন্দিশালায় অত্যাচার শুরু করে। পরিবারের কাছে অডিও এবং ভিডিও পাঠিয়ে মুক্তিপণের টাকা দাবি করে তারা।
মাদারীপুরের পুলিশ সুপার গোলাম মোস্তফা রাসেল জানান, অভিযোগ পেলেই দালালদের আটক করে আইনের আওতায় আনা হয়। মূলত ভুক্তভোগীরা সহজে মামলা কিংবা অভিযোগ করতে চান না। আর মামলা হলেও দালালদের সাথে সমঝোতা হয়। পরে আর মামলা চালাতে চান না। তবুও পুলিশের কাছে সহযোগিতা চাইলে সবধরনের আইনগত সহযোগিতা করা হয়। দালালদের বিরুদ্ধে কঠোর অবস্থানে পুলিশ। এছাড়া দালালদের অধিকাংশই লিবিয়া থেকে পুরো বিষয়টি নিয়ন্ত্রণ করে। আর এলাকার দালালরা পলাতক রয়েছে। তাদের ধরতে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেয়া হবে।
মাদারীপুরের জেলা প্রশাসক ড. রহিমা খাতুন বলেন, লোভের কারণেই দালালদের ফাঁদে পড়ে জীবন হারাচ্ছেন অনেক যুবক। বর্তমানে যারা লিবিয়ায় আটকা আছেন তাদের ফিরিয়ে আনতে পদক্ষেপ নেয়া হবে।