পাকিস্তানে ইংল্যান্ডের নারী ও পুরুষ ক্রিকেট দল পাঠাবে না ইংল্যান্ড।
ইংল্যান্ড ও ওয়েলস ক্রিকেট বোর্ড একটি বিবৃতিতে এ তথ্য জানিয়েছে।
২০০৫ সালে শেষবার ইংল্যান্ডের কোন জাতীয় ক্রিকেট দল পাকিস্তান সফর করেছিল। যদিও নারী ক্রিকেট দল কখনোই যায়নি।
শুক্রবার ‘সুনির্দিষ্ট ও নির্ভরযোগ্য’ ঝুঁকির কথা জানিয়ে নিউজিল্যান্ড পাকিস্তান থেকে তাদের ক্রিকেট দলকে সরিয়ে আনে।
ইংল্যান্ড ও ওয়েলস ক্রিকেট বোর্ড একটি বিবৃতিতে জানিয়েছে, ‘আমরা জানি ওই এলাকায় সফর করতে এখন উদ্বেগ বাড়ছে। আমরা মনে করি এই সফরে যদি ক্রিকেটারদের পাঠানো হয় সেটা তাদের ওপর বাড়তি চাপ হবে, এই ক্রিকেটাররা ইতোমধ্যেই কোভিড নিয়ে নানা ধরনের শৃঙ্খলের মধ্যে আছে।’
ইংল্যান্ডের পুরুষ ক্রিকেট দল পাকিস্তান সফরকে টি টোয়েন্টি বিশ্বকাপের আগে প্রস্তুতি হিসেবে ভেবে রেখেছিল।
১৩ ও ১৪ই অক্টোবর, রাওয়ালপিন্ডিতে পাকিস্তান ও ইংল্যান্ডের পুরুষ ও নারী ক্রিকেট দলের দুটি টি টোয়েন্টি ম্যাচে মুখোমুখি হওয়ার কথা ছিল।
এরপর ১৭, ১৮ ও ২১শে অক্টোবর ওয়ানডে ম্যাচের পরিকল্পনা ছিল, পাকিস্তান ও ইংল্যান্ডের নারী ক্রিকেট দলের।
ইসিবি একটি বিবৃতিতে জানিয়েছে, পুরুষ টি টোয়েন্টি দলের জন্য বিষয়টা আরো জটিল হয়ে ওঠে। কারণ এই পরিবেশে সফর করলে সেটা টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের জন্য আদর্শ প্রস্তুতি হত না। আমরা এটা অনুধাবন করি পাকিস্তান ক্রিকেট বোর্ডের জন্য এটা হতাশাজনক হবে। তারা পাকিস্তানে আন্তর্জাতিক ক্রিকেট ফেরাতে টানা কাজ করে যাচ্ছে।
২০০৯ সালে শ্রীলঙ্কার ক্রিকেট দলের টিম বাসে বন্দুকধারীদের হামলার পর ছয় বছর পাকিস্তানে কোনও আন্তর্জাতিক ক্রিকেট আয়োজিত হয়নি।
পাকিস্তান সংযুক্ত আরব আমিরাতেই তাদের সব ঘরের মাঠের ম্যাচ খেলেছে।
২০১৫ সালে দলগুলো পাকিস্তান যাওয়া শুরু করে।
২০১৯ সালে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে পাকিস্তান ১০ বছর পর নিজেদের মাঠে টেস্ট ক্রিকেট খেলে।
পাকিস্তানে নিউজিল্যান্ড ক্রিকেট দলকে যে নিরাপত্তা দেয়া হচ্ছিল, তা দেশটিতে একজন রাষ্ট্র প্রধানকেই দেয়া হয়।
ইংল্যান্ডের বেশ কজন ক্রিকেটার এবছর পাকিস্তান সুপার লিগ খেলতে গিয়েছিল দেশটিতে।
চলতি বছরের শুরুতে দক্ষিণ আফ্রিকাও পাকিস্তানে সফর করেছে।
পাকিস্তানে এশিয়ার বাইরে থেকে দুটি নারী দল খেলতে গিয়েছে- ওয়েস্ট ইন্ডিজ ও নেদারল্যান্ডস।
এছাড়া ২০১৯ সালের শেষদিকে বাংলাদেশের পুরুষ ক্রিকেট দল পাকিস্তানে ক্রিকেট সিরিজ খেলতে গিয়েছিল।
পাকিস্তান ক্রিকেট বোর্ডের চেয়ারম্যান রমিজ রাজা বিবিসিকে বলেছেন, এটা অবাস্তব। আমরা আন্তর্জাতিক ক্রিকেট আয়োজনের পথ থেকে দূরে সরে যাচ্ছি। রমিজ রাজা নিজের হতাশার কথা জানিয়েছেন, বলেছেন ভক্তরাও এখন খুবই হতাশ। এখন ইংল্যান্ডের পাকিস্তান সফর করা প্রয়োজন ছিল বলেন তিনি।
তিনি বলেন, ক্রিকেটে খুবই ছোট একটা পরিবার। আমরা আশা করছিলাম ইংল্যান্ড আরেকটু বুঝদার হবে। আমরা কষ্ট পেয়েছি, কিন্তু এখন সামনে এগিয়ে যাব।
ইংল্যান্ডের সাবেক অধিনায়ক মাইকেল ভন একটি টুইট বার্তায় লিখেছেন, ‘পাকিস্তান সফর থেকে সরে আসার সিদ্ধান্তই আসতো। নিরাপত্তা নিয়ে যে উদ্বেগ দেখা গেছে সেখানে এটাই স্বাভাবিক সিদ্ধান্ত। আমি অবাক হচ্ছি এই সিরিজটি আরব আমিরাতে কেন আয়োজন করা হল না। আশা করি পরিস্থিতি বদলাবে এবং দলগুলো পাকিস্তান সফরে যাবে।’
পাকিস্তান ২০২০ ও ২০২১ সালে ইংল্যান্ড সফর করেছিল কঠিন বায়ো বাবলের মধ্যে।
২০২০ সালে বিশেষত, যখন করোনাভাইরাস মহামারি ছিল তুঙ্গে।
নিউজিল্যান্ডের সরকার পাকিস্তানে নিরাপত্তা নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করার পর নিউজিল্যান্ডের ক্রিকেট বোর্ড এই সফর বাতিল করেছে।
নিউজিল্যান্ড প্রায় ১৮ বছর পরে পাকিস্তানে আন্তর্জাতিক ক্রিকেট দল পাঠিয়েছে সম্প্রতি, কিন্তু প্রথম ওয়ানডে শুরু হওয়ার কুড়ি মিনিট আগে নিরাপত্তা ঝুঁকির কথা বলে তারা দল সরিয়ে নিয়েছে এবং সিরিজটি বাতিল হয়েছে।
তিনটি ওয়ানডে ম্যাচ ও ৫টি টি-টোয়েন্টি ম্যাচ খেলার কথা ছিল এই সফরে।
রমিজ রাজা বলেছেন, যখন পশ্চিমা দেশগুলোকে আমাদের প্রয়োজন তখন তারা আমাদের সাথে নেই। নিরাপত্তা বিশ্বের যে কোনও দেশে একটা উদ্বেগের বিষয়। যেভাবে পশ্চিমা দেশগুলো পরিস্থিতি সামাল দিচ্ছে তাতে আমরা একঘরে বোধ করছি। তারা মানসিক ক্লান্তির কথা বলতে পারে কিন্তু সেটাও পর্যাপ্ত না।
২০২২ সালের শেষে পাকিস্তানে ইংল্যান্ডের তিনটি টেস্ট ম্যাচ খেলার কথা রয়েছে।