রবিবার, ২৪ নভেম্বর ২০২৪, ১২:৩৫ পূর্বাহ্ন

আইনের ব্যত্যয় দেখছেন হাইকোর্ট: পরীমনির রিমান্ড

Reporter Name
  • Update Time : বৃহস্পতিবার, ৯ সেপ্টেম্বর, ২০২১

পরীমনিকে দফায় দফায় রিমান্ডে নেওয়ার আবেদনের মধ্য দিয়ে সর্বোচ্চ আদালতের নির্দেশনার পাশাপাশি আইন অমান্য করা হয়েছে বলে অভিমত দিয়েছেন হাইকোর্ট। পাশাপাশি কিসের ভিত্তিতে ম্যাজিস্ট্রেট পরবর্তী দুই দফায় পরীমনির রিমান্ড মঞ্জুর করেছেন, তা নিয়েও প্রশ্ন তুলেছেন উচ্চ আদালত।

আদালত বলেছেন, ‘এই মামলায় মনে হচ্ছে তদন্তকারী কর্মকর্তা কোনো কোনো ক্ষেত্রে সর্বোচ্চ আদালতের নির্দেশনার পাশাপাশি আইন অমান্য করেছেন, যা ফৌজদারি বিচার প্রক্রিয়া স্বাভাবিকভাবে চলায় প্রতিবন্ধকতা। তা ছাড়া দুই দফা রিমান্ড আবেদন মঞ্জুরে সংশ্লিষ্ট ম্যাজিস্ট্রেট কীভাবে এত সন্তুষ্ট হলেন, যা আমাদের বিচারিক ঐকমত্যকে বিদ্ধ করেছে।’

জামিন আবেদনের শুনানির দিন দেরিতে ধার্য নিয়ে পরীমনির করা এক আবেদনের ধারাবাহিকতায় হাইকোর্ট ২ সেপ্টেম্বর দেওয়া এক আদেশে এসব কথা বলেছেন। বিচারপতি মোস্তফা জামান ইসলাম ও বিচারপতি কে এম জাহিদ সারওয়ারের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চ এ আদেশ দেন। হাইকোর্টের পূর্ণাঙ্গ আদেশ ইতিমধ্যে প্রকাশিত হয়েছে।

পূর্ণাঙ্গ আদেশে যা বলা হয়েছে
পূর্ণাঙ্গ আদেশে বলা হয়, নথিপত্রে দেখা যাচ্ছে, অভিযুক্তকে (পরীমনি) সর্বোচ্চ আদালতের নির্দেশনার বিপরীতে গিয়ে আইনশৃঙ্খলা রক্ষকারী বাহিনী গ্রেপ্তার করে। আইনের মীমাংসিত নীতি সংশ্লিষ্ট আইন অনুসরণ না করে কোনো নাগরিকের অধিকার বাধাগ্রস্ত করা যায় না। একইভাবে প্রতিটি নাগরিককে আইনের প্রতি শ্রদ্ধাশীল থাকতে হয়। দেশের উপযুক্ত কোনো আদালত থেকে সিদ্ধান্ত আসার আগে কারও ব্যক্তিগত জীবন ও স্বাধীনতা নিয়ে ‘ট্রলিংয়ের’ মতো অস্বাভাবিক প্রক্রিয়ায় দণ্ডিত করা উচিত নয়। সংবিধানের ৩৫ (৫) অনুচ্ছেদ বলেছে, কোনো ব্যক্তিকে যন্ত্রণা দেওয়া যাবে না কিংবা নিষ্ঠুর, অমানুষিক বা লাঞ্ছনাকর দণ্ড দেওয়া যাবে না কিংবা কারও সঙ্গে অনুরূপ ব্যবহার করা যাবে না।

আদেশে বলা হয়, সুষ্ঠু ও স্বাধীন তদন্তের স্বার্থে অভিযুক্ত ব্যক্তিকে জিজ্ঞাসাবাদ করার প্রয়োজন হতে পারে। কিন্তু নথিতে দেখা যায়, এই মামলার তদন্ত কর্মকর্তা মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেটের কাছে দ্বিতীয় ও তৃতীয় দফা রিমান্ডের আবেদন করেন।

কিসের ভিত্তিতে সংশ্লিষ্ট আদালত সন্তুষ্ট হয়ে রিমান্ড মঞ্জুর করে গত ১০ ও ১৯ আগস্ট আদেশ দিয়েছিলেন? দুই দফা রিমান্ড আবেদন মঞ্জুরে সংশ্লিষ্ট ম্যাজিস্ট্রেট কীভাবে এত সন্তুষ্ট হলেন, যা আমাদের বিচারিক ঐকমত্যকে বিদ্ধ করেছে।

আরও বলা হয়, নথিতে দেখা যায় প্রথমে অভিযুক্তকে চার দিনের রিমান্ডে নেওয়া হয়। অবশ্যই এটি যথেষ্ট সময় কোনো তথ্য বা উপাদান থাকলে তা বের করার জন্য। কিন্তু পরবর্তী মেয়াদে আরও রিমান্ডের প্রয়োজনীয়তা যথেষ্ট ও পর্যাপ্ত উপাদান রেকর্ডে দেখা যাচ্ছে না।

ঘটনা ও পারিপার্শ্বিকতা উল্লেখ করে আদালত বলেছেন, আদেশ পাওয়ার ১০ দিনের মধ্যে ঢাকার মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট দেবব্রত বিশ্বাস ও আতিকুল ইসলামের কাছে রিপোর্ট চাওয়া হলো। কোন ঘটনা ও পারিপার্শ্বিকতায় তাঁরা অভিযুক্তের দ্বিতীয় ও তৃতীয় দফা রিমান্ড মঞ্জুরে উৎসাহিত হলেন—এর কারণ ব্যাখ্যা করতে বলা হলো। ব্যাখ্যা ও স্পষ্টীকরণ সন্তোষজনক না হলে আরও স্পষ্টীকরণের জন্য সংশ্লিষ্ট মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেটকে আদালতে উপস্থিত হতে হবে।

আদালত বলেছেন, তা ছাড়া অপরাধ এককভাবে পুলিশের জন্য সমস্যা নয়, সমাজের সমস্যা। পুলিশ বিভাগকে অবশ্যই বিশ্বাস করতে হবে যে মানবজীবন অত্যন্ত মূল্যবান। কোনো অভিযুক্তের জন্য রিমান্ড নেওয়ার আগে পুলিশ কর্মকর্তাকে আইনি ও মূল বিষয়গুলো সম্পর্কে প্রথমে চিন্তা করতে হবে। সমাজ পুলিশ বিভাগের ওপর সর্বোচ্চ আস্থা রাখে।

আদেশে বলা হয়, কিন্তু বর্তমান মামলায় মনে হচ্ছে তদন্তকারী কর্মকর্তা কোনো ক্ষেত্রে সর্বোচ্চ আদালতের নির্দেশনার পাশাপাশি আইন অমান্য করেছেন, যা ফৌজদারি বিচার প্রক্রিয়া স্বাভাবিকভাবে চলায় প্রতিবন্ধকতা। এ বিষয়ে তদন্ত কর্মকর্তা কারণ ব্যাখ্যা করলে ন্যায়বিচার দৃশ্যমান হবে। তাই নিজের অবস্থান, কারণ ব্যাখ্যা ও স্পষ্টীকরণের জন্য তদন্ত কর্মকর্তা গোলাম মোস্তফাকে মামলার সিডি (নথি) নিয়ে ১৫ সেপ্টেম্বর বেলা ১১টায় আদালতে হাজির হতে নির্দেশ দেওয়া হলো।

পরীমনিকে ৪ আগস্ট রাতে তাঁর বনানীর বাসায় অভিযান চালিয়ে আটক করে র‍্যাব। পরে তাঁর বিরুদ্ধে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ আইনে মামলা হয়। এই মামলায় পরীমনিকে তিন দফায় প্রথমে চার দিন, দ্বিতীয় দফায় দুই দিন ও তৃতীয় দফায় এক দিনসহ মোট সাত দিন রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়। এই মামলায় ঢাকার চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট (সিএমএম) আদালতে বিফল হয়ে ঢাকার মহানগর দায়রা জজ আদালতে জামিন আবেদন করেন পরীমনি। ২২ আগস্ট ওই আদালত ১৩ সেপ্টেম্বর শুনানির দিন রাখেন।

মহানগর দায়রা জজ আদালতের এই আদেশের বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে হাইকোর্টে আবেদন করেন পরীমনি। শুনানি নিয়ে ২৬ আগস্ট হাইকোর্ট রুল দিয়ে ১ সেপ্টেম্বর শুনানির দিন রাখেন। অন্যদিকে নিম্ন আদালত জামিন শুনানির দিন এগিয়ে আনেন।

৩১ আগস্ট শুনানি নিয়ে ঢাকার মহানগর দায়রা জজ পরীমনির জামিন মঞ্জুর করেন। পরদিন ১ সেপ্টেম্বর কাশিমপুর কারাগার থেকে জামিনে মুক্তি পান পরীমনি।

সেদিন হাইকোর্টে রুল শুনানির দিন ধার্য ছিল। ধার্য তারিখে শুনানিতে পরীমনির তিন দফা রিমান্ড নিয়ে প্রশ্ন ওঠে।

এইচ বিডি নিউজ টুয়েন্টি ফোর এ আপনাকে স্বাগতম। “সময়ের প্রয়োজনে- HBD NEWS24” নিয়ে আমরা আছি আপনার পাশে। আপনার পাশে ঘটে যাওয়া নানা সংগতি, অসংগতি আর তথ্য নিয়ে আপনিও যোগ দিন HBD NEWS 24 এ আমাদের কাছে মেইল করুন: hbdnews24@yahoo.com

More News Of This Category

© All rights reserved © 2012 HBDNEWS24

POWERED BY MH GROUP OF COMPANY.