সেনাবাহিনী ও পুলিশে নিয়োগের ক্ষেত্রে নারীদের বিতর্কিত সতীত্ব পরীক্ষা বন্ধ করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন দেশটির সেনাপ্রধান।
দীর্ঘদিন ধরে মানবাধিকারকর্মীরা এটিতে নারীর জন্য চরম অপমানজনক একটি পরীক্ষা হিসেবে অভিহিত করে এটি বন্ধ করার দাবি জানিয়ে আসছিলেন। খবর রয়টার্সের।
সেনাবাহিনীর এ পদক্ষেপকে স্বাগত জানিয়েছেন মানবাধিকারকর্মীরা। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থাও এ পরীক্ষাকে অবৈজ্ঞানিক বলে দাবি করে আসছিল।
ইন্দোনেশিয়ার সেনাপ্রধান আন্দিকা পেরকাসা মঙ্গলবার সাংবাদিকদের জানান, এখন থেকে সেনাবাহিনীতে যোগ দিতে নারীদের আর সতীত্বের পরীক্ষা দিতে হবে না।
নিয়োগ পরীক্ষায় এখন থেকে নারী-পুরুষ বলে আলাদা কিছু আর থাকছে না। সবাইকে একই ধরনের পরীক্ষা দিয়ে আসতে হবে।
এর আগে ইন্দোনেশিয়ার নারীরা পুলিশ বা সেনাবাহিনীতে যোগ দিতে চাইলে যোগ্যতা পরীক্ষায় তাদের প্রথমে ‘সতীত্বের প্রমাণ’ দিতে হতো। আর সেই পরীক্ষা ‘টু ফিঙ্গার টেস্ট’ নামে পরিচিত।
যেভাবে হয় সতীত্ব পরীক্ষা
চিকিৎসক (পুরুষ কিংবা নারী) নারীদের যোনিতে দুটি আঙুল ঢুকিয়ে দেখে নেন হাইমেন পর্দা সুরক্ষিত রয়েছে কিনা। পুরুষের সঙ্গে যৌন সম্পর্কের ফলে এই পর্দাটি ছিঁড়ে যায়। পর্দা ঠিক না থাকা মানেই ধরে নেওয়া হয়, ওই নারী যৌন সম্পর্কে লিপ্ত হয়েছেন। যদিও চিকিৎসকদের মতে, এই পর্দা আরও অনেক কারণেই ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে।
নারীদের ওপর এ পরীক্ষা ১৯৬৫ সাল থেকে চলে আসছে।
যে কারণে সতীত্ব পরীক্ষা
উচ্চপদস্থ অফিসারদের যুক্তি ছিল— একজন নারী যিনি সেনা হিসেবে দেশের সেবা করতে চান, তাকে মানসিক ও শারীরিক দিক থেকে অত্যন্ত দৃঢ় হতে হবে। তাদের দাবি— ‘সতীত্ব’ই নাকি কোনো নারীর দৃঢ় মানসিকতার পরিচয়।
১৯৯৯ সালে ইন্দোনেশিয়ার মানবাধিকার কমিশন এই দ্বিচারিতাকে বেআইনি ঘোষণা করে। জাতিসংঘের মানবাধিকার কমিশন এই পরীক্ষায় নিষেধাজ্ঞা দাবি করে। কিন্তু এত কিছুর পরও চুপ ছিল ইন্দোনেশিয়া প্রশাসন।
সতীত্ব পরীক্ষা নিয়ে বিতর্ক
২০১৪ সালে ইন্দোনেশিয়া পুলিশে নিয়োগের একটি বিজ্ঞপ্তি ফের ঝড় তোলে। তাতে পরিষ্কার লেখা ছিল— যোগ্যতা নির্ণায়ক পর্বে অন্যান্য পরীক্ষার পাশাপাশি নারীদের ‘সতীত্বের’ প্রমাণ দেওয়া বাধ্যতামূলক। তাতে এও লেখা ছিল— যেসব নারী নিজেদের পুলিশ হিসেবে দেখতে চান, তারা যেন ছোট থেকেই ‘সতীত্ব’ বজায় রাখার মানসিকতা তৈরি করে নেন।
২০১৩ সাল নাগাদ ইন্দোনেশিয়ার বেশ কিছু স্কুলও ছাত্রী ভর্তির সময় এই পরীক্ষা বাধ্যতামূলক করার প্রস্তাব দেয়। এর পর ইন্দোনেশিয়ার চিকিৎসকরাও এর বিরুদ্ধে সরব হন। হাইমেন পর্দার পরিস্থিতি বৈজ্ঞানিকভাবে কখনও কোনো নারীর সতীত্বের প্রমাণ হতে পারে না।
কোনো নারীর হাইমেন পর্দা নানা কারণে ছিঁড়ে যেতে বা ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে। এ ক্ষেত্রে পর্দা ছেঁড়ার প্রকৃত কারণ বিশ্লেষণ না করেই ওই নারী কোনো পুরুষের সঙ্গে যৌন সম্পর্কে লিপ্ত হয়েছেন ধরে নেওয়া হয়। এর বিরুদ্ধে প্রতিবাদ গড়ে তুলেছিল চিকিৎসক মহল।
২০১৫ সালে ইউরোপীয় কমিশন এ অভ্যাসকে ‘বৈষম্যমূলক এবং অবমাননাকর’ হিসেবে চিহ্নিত করেছিল। ২০১৪ থেকে ২০১৯ সাল পর্যন্ত ইন্দোনেশিয়ার স্বাস্থ্যমন্ত্রী ছিলেন চিকিৎসক নিলা ময়লোয়েক। তিনিও সে সময় এ নিয়মের সমালোচনা করেন।
২০১৯ সালে পশ্চিম জাভার এক জিমন্যাস্টকে দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ান গেমসে অংশ নিতে দেওয়া হয়নি।