হাজারো শর্ত মেনে মাত্র ৭ দিনের মধ্যে অনুষ্ঠিত হয়েছে ৫ ম্যাচের টি-টোয়েন্টি সিরিজ। অজিদের শিডিউল এতটাই আঁটসাট যে, আজ রাত ১টায় তারা বাংলাদেশ ছাড়বে। বিমানে ওঠার আগে আরও একবার তাদের হারের স্বাদ পাইয়ে দিল বাংলাদেশ। মিরপুরে শেষ টি-টোয়েন্টিতে আজ টিম টাইগার জয় পেয়েছে ৬০ রানে। এই জয়ে ৪-১ ব্যবধানে সিরিজ নিশ্চিত করে লড়াই শেষ করল মাহমুদউল্লাহ বাহিনী। অনেক কারণেই এই সিরিজ ইতিহাসে ঢুকে গেল। যে কোনো ফরম্যাট মিলিয়ে এই প্রথম অজিদের বিপক্ষে সিরিজ জিতেছে টাইগাররা। অজিরা কি এই সফর জীবনে ভুলতে পারবে?
রান তাড়ায় নেমে অজিরাও ওপেনিং জুটিতে পরিবর্তন এনেছিল। গত ম্যাচে পাঁচ ছক্কা মারা ক্রিশ্চিয়ান নামেন ওয়েডের সঙ্গে। দ্বিতীয় ওভারেই ধাক্কা খায় অস্ট্রেলিয়া। ড্যান ক্রিশ্চিয়ানকে (৩) বোল্ড করে দেন নাসুম আহমেদ। ফিরতি ওভারে এসে বিপজ্জনক মিচেল মার্শকে (৪) লেগ বিফোর উইকেটের ফাঁদে ফেলেন এই তরুণ স্পিনার। ১৭ রানে দুই উইকেট হারায় অস্ট্রেলিয়া। এরপর জুটি গড়ার চেষ্টা করেন ম্যাথু ওয়েড আর ম্যাকডারমট। জুটিতে ২১ রান আসতেই নিজের প্রথম ওভারের তৃতীয় বলে ২২ বলে ২২ রান করা অজি অধিনায়ককে বোল্ড করে দেন সাকিব আল হাসান। এটি তার ৯৯তম টি-টোয়ৈন্টি উইকেট। দলীয় ৪৮ রানে অজিদের চতুর্থ উইকেট পতন ঘটান মাহমুদউল্লাহ। ১৬ বলে ১৭ করা বেন ম্যাকডারমটকে তিনি কট অ্যান্ড বোল্ড করেন।
এরপর মঞ্চে আসেন সিরিজে প্রথমবারের মত একাদশে সুযোগ পাওয়া সাইফউদ্দিন। ইনিংসের একাদশ এবং নিজের দ্বিতীয় ওভারের তৃতীয় বলে বোল্ড করে দেন অ্যালেক্স ক্যারিকে (৩)। ৫৩ রানে অজিদের ইনিংস অর্ধেক শেষ হয়। এরপর কেবল আসা-যাওয়ার খেলা। এক বল পরেই তার সাইফউদ্দিনের বল মোইজেস হেনরিক্সের (৩) ব্যাট ছুঁয়ে উইকেটকিপার সোহানের গ্লাভসে জমা পড়ে। এরপরেই আন্তর্জাতিক টি-টোয়েন্টিতে ১০০তম উইকেট শিকার করেন সাকিব আল হাসান। তার বলে মাহমুদউল্লাহর তালুবন্দি হয়ে ‘গোল্ডেন ডাক’ মারেন অ্যাস্টন টার্নার। সাইফের তৃতীয় শিকার অ্যাস্টন আগার (০)। তিনি সাইফের বলে বোল্ড হলে ৮ম উইকেট হারায় অস্ট্রেলিয়া।
বাংলাদেশের জয় সময়ের ব্যাপার হয়ে দাঁড়ায়। ১৪তম ওভারে বোলিংয়ে আসেন সাকিব। গত ম্যাচে পাঁচ ছক্কা খাওয়া বিশ্বসেরা অল-রাউন্ডার নাথান এলিসকে (১) বোল্ড করে তৃতীয় শিকার ধরেন। ৫৮ রানে ৯ম উইকেটের পতন। সাকিবের এই ওভারেই অল-আউট হয়ে যায় অস্ট্রেলিয়া। বাংলাদেশ জিতে যায় ৬০ রানের বিশাল ব্যবধানে। ৬২ রানে অল-আউট হয় অস্ট্রেলিয়া। টি-টোয়েন্টিতে এটাই তাদের সর্বনিম্ন স্কোর। এর আগে ২০০৫ সালে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে সাউদাম্পটনে তারা ৭৯ রানে অল-আউট হয়েছিল। তাদের শে ৬ উইকেট পড়েছে ৯ রানে। ৩.৪ ওভার বোলিং করে ১ মেডেনসহ মাত্র ৯ রান দিয়ে ৪ উইকেট তুলে নেন সাকিব আল হাসান। সাইফউদ্দিন তিন ওভারে ১২ রান দিয়ে নেন ৩ উইকেট।
এর আগে মিরপুর শেরে বাংলায় টস জিতে ব্যাটিং বেছে নেওয়া বাংলাদেশ নির্ধারিত ২০ ওভারে ৮ উইকেটে ১২২ রান সংগ্রহ করে। সৌম্যর জায়গায় মোহাম্মদ নাঈমের ওপেনিং সঙ্গী হন মেহেদি হাসান। অ্যাস্টন টার্নারের করা প্রথম ওভারে মেহেদির এক বাউন্ডারিসহ আসে ৮ রান। দ্বিতীয় ওভারে অ্যা্টন আগারকে ছক্কা মেরে শুরু করেন নাঈম। তৃতীয় ওভারে এসে অ্যাডাম জাম্পাও জোড়া বাউন্ডারি হজম করেন। পঞ্চম ওভারের তৃতীয় বলে অদ্ভুতভাবে ৪২ রানের এই জুটির অবসান হয়। টার্নারের করা ওই ১২ বলে ২ চারে ১৩ রান করা মেহেদি হাসানের তার হাত থেকে ব্যাটের গ্রিপ ছুটে যায় এবং ক্যাচ ওঠে। সহজ ক্যাচ তালুবন্দি করেন অ্যাস্টন আগার। মাটিতে ছিটকে যাওয়া ব্যাটের দিকে হতভম্ব হয়ে তাকিয়ে থাকেন মেহেদি। তারপর মাঠ ছাড়েন।
নাঈমের সঙ্গী হন সাকিব আল হাসান। নবম ওভারের প্রথম বলে ‘নো ম্যানস ল্যান্ডে’ ক্যাচ দিয়ে বেঁচে যান সাকিব। আসে ১ রান। পরের বলেই ক্রিশ্চিয়াকে রিভার্স সুইপ খেলতে গিয়ে অ্যাস্টন আগারের তালুবন্দি হন নাঈম (২৩)। উইকেটে আসেন সৌম্য সরকার। পাঁচ বল খেলে সিঙ্গেল নিয়ে তিনি রানের দেখা পান। তবে সাকিব (২০ বলে ১১) আজ ব্যাট হাতে ব্যর্থ। অ্যাডাম জাম্পার করা ১০ম ওভারের শেষ বলে তিনি এলবিডাব্লিউ হয়ে যান। টি-টোয়েন্টিতে এই প্রথম এলবিডাব্লিউ হলেন সাকিব। সৌম্যর সঙ্গী হন অধিনায়ক মাহমুদউল্লাহ। জাম্পাকে ডিপ মিডউইকেট দিয়ে ছক্কা মেরে ভালো কিছুর ইঙ্গিত দেন। কিন্তু না, ১৪ বলে ১ ছক্কায় ১৯ রানে আগার তাকে কট অ্যান্ড বোল্ড করেন।
১৫তম ওভারের পঞ্চম বলে সৌম্যর বিদায়ে দলীয় ৯৬ রানে টাইগারদের ইনিংসের অর্ধেক শেষ হয়। টানা চার ম্যাচ বাজে খেলে একাদশে জায়গা হারিয়েছেন সৌম্য। আজ তার জায়গা হয়েছে চার নম্বর পজিশনে। শুরুতে যথারীতি আত্মবিশ্বাসের অভাবে ভূগছিলেন। এরপর একটি ছক্কা ও একটি চারে ভিন্ন কিছুর ইঙ্গিত দেন। সেই ভিন্ন কিছু আর হলো না। ১৭ বলে ১৬ রান করে ক্রিশ্চিয়ানের বলে লফটেড ড্রাইভ করতে গিয়ে টার্নারের তালুবন্দি হন। চলতি সিরিজে এটাই তার সর্বোচ্চ সংগ্রহ। ১৭তম ওভারে অ্যাডাম জাম্পা দিয়েছেন মাত্র ১ রান।
১৩ বলে ৮ করা নুরুল হাসান সোহানও আজ ধুঁকছিলেন। এলিসের করা ১৮তম ওভারের চতুর্থ বলটি তার ব্যাট ছুঁয়ে স্টাম্পে গিয়ে লাগে। উইকেটে আসেন সিরিজে প্রথমবার সুযোগ পাওয়া মোসাদ্দেক। প্রথম ৬ বল খেলে তিনি কোনো রান নিতে পারেননি। নিজের খেলা ৭ম বলে একটা বাউন্ডারি মারেন। ১০ বলে ১০ রান করা আফিফ শেষ ওভারের তৃতীয় বলে আউট হলে উইকেটে আসেন সিরিজে প্রথমবার সুযোগ পাওয়া সাইফউদ্দিন। রান-আউট হয়ে ফিরেন ‘গোল্ডেন ডাক’ মেরে।