প্রথম তিন ম্যাচ জিতে সিরিজ নিশ্চিত করা টিম টাইগার আজ চতুর্থ ম্যাচে প্রথম পরাজয়ের স্বাদ পেল। আগে ব্যাট করতে নেমে দলীয় পুঁজি ছিল অতি অল্প। তারপর বোলিংয়ে নেমে এক ওভারে পাঁচ ছক্কা হজম করেন সাকিব। এই পরিস্থিতিতেও ম্যাচ জমিয়ে তুলেছিল বাংলাদেশ। ৬৫ রানে অজিদের ৬ উইকেট পড়ে যায়। কিন্তু শেষে অ্যাস্টন আগার এবং অ্যাস্টন টার্নারের দারুন ব্যাটিংয়ে সিরিজে প্রথম জয়ের স্বাদ পেল অস্ট্রেলিয়া। আজ শনিবার চতুর্থ ম্যাচে তারা জয় পেয়েছে ৩ উইকেটে। ৩ উইকেট নিয়ে ম্যাচসেরা মিচেল সোয়েপসন।
মিরপুর শেরে বাংলায় রান তাড়ায় নেমে শুরুতেই ধাক্কা খেয়েছিল অস্ট্রেলিয়া। প্রথম ওভারের চতুর্থ বলে অজি অধিনায়ক ম্যাথু ওয়েডকে (২) এলবিডাব্লিউ করেন মেহেদি হাসান। চতুর্থ ওভারেই রূদ্ররূপে দেখা দেন ড্যান ক্রিশ্চিয়ান। সাকিবের এক ওভারে পাঁচ ছক্কা মারেন। প্রথম তিন বলে টানা তিন ছয়ের পর চতুর্থ বল ডট। পঞ্চম ও ৬ষ্ট বলে আরও দুটি ছক্কা হজম করেন সাকিব। এর আগে মিরপুরেই ২০১৯ সালে রায়ান বার্ল সাকিবের এক ওভারে ৩০ রান নিয়েছিলেন। তবে সেবার অবশ্য তিন ছক্কার সঙ্গে সাকিব তিনটি চার হজম করেন। ক্যারিয়ারে এই প্রথমবার তিনি এক ওভারে ৫টি ছক্কা খেলেন। পরের ওভারেই অপর ওপেনার বেন ম্যাকডারমটকে এলবিডাব্লিউ করেন নাসুম আহমেদ। ভাঙে ৪৪ রানের দ্বিতীয় উইকেট জুটি। ৬ষ্ঠ ওভারে পাঁচ ছক্কা মারা ক্রিশ্চিয়ানকে থামান মুস্তাফিজ। তিনি ১৫ বলে ১ চার ৫ ছক্কায় ৩৯ রানের ঝড় তুলে শামীম হোসেনের তালুবন্দি হয়ে ফিরেন।
৮ম ওভারে সাকিব বোলিংয়ে ফিরে শেষ বলে মোইজেস হেনরিক্সকে (৪) রান-আউট করেন। দশম ওভারে আবারও বোলিংয়ে এসে শিকার ধরেন দ্য ফিজ। ৬ বলে ১ রান করে ফিরেন অ্যালেক্স ক্যারি। লেগ বিফোরের বিপক্ষে রিভিউ নিয়ে লাভ হয়নি। ৬৩ রানে অজিদের ইনিংস অর্ধেক শেষ হয়। অজিদের ইনিংসের ৬ষ্ঠ আঘাত হানেন মেহেদি। ভালো ফর্মে থাকা মিচেল মার্শকে (১১) তিনি বোল্ড করে দেন। ৬৫ রানে অজিদের ৬ উইকেট নেই হয়ে যায়। জমে ওঠে ম্যাচ। শেষ ৭ ওভারে প্রয়োজন হয় ২৪ রানের। ১৪তম ওভারে নাসুমকে ছক্কা মেরে স্কোর এগিয়ে নেন অ্যাস্টন আগার। ১৬তম ওভারে এসেই আগারের কাছে বাউন্ডারি হজম করেন সাকিব। শরীফুলের করা ১৮তম ওভারের প্রথম বলে বাউন্ডারি মেরে দলকে জয়ের আরও কাছে নিয়ে যান আগার। পরের বলেই ২৭ বলে ২ চার ১ ছক্কায় ২৭ রান করা আগারের ক্যাচ অসাধারণভাবে তালুবন্দি করেন শামীম। মুস্তাফিজের করা ১৯তম ওভারের শেষ বলে ৩ উইকেটে জয়ের বন্দরে পৌঁছে যায় অস্ট্রেলিয়া। আজও ৪ ওভারে ৯ রান দিয়ে ১ উইকেট নিয়েছেন মুস্তাফিজ।
এর আগে টস জিতে ব্যাটিংয়ে নেমে নির্ধারিত ২০ ওভারে টাইগারদের সংগ্রহ ৯ উইকেটে ১০৪ রান তোলে বাংলাদেশ। দেখেশুনে শুরু করেন সৌম্য সরকার আর নাঈম শেখ। অ্যাশটন টার্নারের করা প্রথম ওভারে আসে ২ রান। হ্যাজেলউডের করা দ্বিতীয় ওভারে দুই বাউন্ডারি মেরে রানের গতি বাড়ান নাঈম। তৃতীয় ওভারে লং অফ দিয়ে মেরে হাত খোলেন সৌম্য। কিন্তু ওই পর্যন্তই। ৪র্থ ওভারে দলীয় ২৪ রানে প্রথম উইকেট হারায় বাংলাদেশ। হ্যাজেলউডের বলে ক্রস ব্যাটে সুইপ খেলতে গিয়ে অ্যালেক্স ক্যারির হাতে ধরা পড়েন। উইকেটে আসেন সাকিব। কিন্তু জুটিতে আরও একবার ২৪ রান আসতেই ছোট্ট ধস নামে। দলীয় ৪৮ রানে আউট হলেন সাকিব। ২৬ বলে ১ চারে ১৫ রান করা সাকিব হ্যাজেলউডে কাটারে কাট করতে গিয়ে উইকেটের পেছনে ক্যাচ দেন।
গত ম্যাচের নায়ক মাহমুদউল্লাহ আজ ‘ডাক’ মারেন। সিরিজে এই নিয়ে তার ‘ডাক’ সংখ্যা হলো ২টি। ৩ বল খেলে সিরিজে প্রথমবার সুযোগ পাওয়া সোয়েপসনের বলে লেগ বিফোর উইকেটের ফাঁদে পড়েন। পরে বলে আবারও বিপদ। নুরুল হাসান সোহানের (০) বিরুদ্ধে এলবিডাব্লিউয়ের আবেদন নাকচ করেন আম্পায়ার। রিভিউ নিয়ে সোহানকে ফেরায় অস্ট্রেলিয়া। ১ উইকেটে ৪৮ থেকে ৭ বলের ব্যবধানে ৪ উইকেটে ৫১ হয়ে যায় বাংলাদেশের স্কোর। ধীরগতিতে খেলতে থাকা ওপেনার নাঈমের সঙ্গে জুটি বাঁধেন আফিফ। সোয়েপসনের করা ১৫তম ওভারে নাঈমের বিপক্ষে এলবিআব্লিউয়ের জন্য রিভিউ নিয়ে ব্যর্থ হয় অস্ট্রেলিয়া। কিন্তু পরের বলেই ৩৬ বলে ২ চারে ২৮ রান করা নাঈমকে ম্যাথু ওয়েডের তালুবন্দি করে তৃতীয় শিকার ধরেন সোয়েপসন। ৬৮ রানে বাংলাদেশের ইনিংসের অর্ধেক শেষ হয়।
অ্যাস্টন আগারের করা ১৬তম ওভারের প্রথম বলে ডিপ ব্যাকওয়ার্ড স্কয়ার লেগের ওপর দিয়ে গ্যালারিতে বল ফেলেন আফিফ। অজিদের শর্ত অনুযায়ী নতুন বল এনে খেলা শুরু হয়। চতুর্থ বলেই উইকেটের দেখা পান আগার। তাকে তুলে মারতে গিয়ে ডিপ মিডউইকেটের সীমানার কাছে হেনরিকসের তালুবন্দি হন ১৭ বলে ১ ছক্কায় ২০ রান করা আফিফ। যাকে নিয়ে এই সিরিজে অনেক আশা ছিল, সেই শামীমও ৬ বলে ৩ রান করে অ্যান্ড্রু টাইয়ের ‘নাকল’ বলে অ্যালেক্স ক্যারির হাতে ধরা পড়েন। ৮৩ রানে ৭ম উইকেটের পতন। একশ হবে কিনা তা নিয়ে শুরু হয় জল্পনা। শেষ ওভারে মাহেদি হাসানের এক চার এক ছক্কায় দলের স্কোর একশ ছাড়ায়। এরপরেই টাইয়ের করা পঞ্চম বলে ক্যাচ তুলে দেন ১৬ বলে ২৩ রানের কার্যকর ইনিংস খেলা মাহেদি। শেষ বলেও ক্যাচ দিয়ে আউট হন শরীফুল। নির্ধারিত ২০ ওভারে টাইগারদের সংগ্রহ দাঁড়ায় ৯ উইকেটে ১০৪ রান।