একদল টিকটকার তরুণদের দ্বারা বর্বরোচিত কায়দায় পাশবিক নির্যাতনের শিকার তরুণীকে ফিরে পেতে আকুতি জানিয়েছেন তার স্বজনরা।
সম্প্রচার মাধ্যমে এমন সংবাদ শোনার পর থেকে চোখের জলে ভাসছেন কিশোরগঞ্জে তার বাড়িতে থাকা মা, চাচা, স্বজন ও নিকটাত্মীরা।
দ্রুততম সময়ের মধ্যে ওই তরুণীকে উদ্ধার করে দেশে ফিরিয়ে আনতে এবং ঘটনায় জড়িতদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দাবি করেছেন স্বজন, এলাকাবাসী ও মহিলা পরিষদ।
জানা গেছে, ভারতের কেরালায় বাংলাদেশি টিকটকার দলের তরুণদের হাতে মধ্যযুগীয় কায়দায় পাশবিক নির্যাতনের শিকার হওয়া তরুণীর বাড়ি কিশোরগঞ্জে।
এমন তথ্যের সূত্র ধরে কিশোরগঞ্জ সদর উপজেলার আরজাদি গ্রাম সরেজমিন পরিদর্শনে জানা গেছে, ওই গ্রামের হতদরিদ্র পরিবারের ওই তরুণীর বাবা ঢাকার মগবাজারের ফুটপাতে শরবত বিক্রি করে জীবিকা নির্বাহ করেন। সেখানে পরিচয়ের সূত্র ধরে ২০১৪ সালে চাঁদপুরের কুয়েত প্রবাসী এক যুবকের সঙ্গে বিয়েও দেয়া হয় তাকে।
তাদের সংসারে একটি ছোট্ট শিশুও রয়েছে। কিন্তু স্বামীর অনুপস্থিতিতে শ্বশুরবাড়ির লোকজন বিভিন্ন কারণে নির্যাতন করায় তিনি একপর্যায়ে বাবার বাড়িতে ফিরে আসেন। বাড়িতে এসে সৌদি আরবে গৃহপরিচারিকার কাজ দিয়ে তাকে পাঠিয়ে দিতে পরিবারের কাছে বায়না ধরেন। অনেক চেষ্টা করেও মোটা অঙ্কের টাকার অভাবে পরিবার তার বায়না পূরণ করতে পারেনি।
এমন পরিস্থিতিতে অভিমানী ওই তরুণী দুই বছর আগে হঠাৎ করে পরিবারের কাউকে না জানিয়ে মগবাজার এলাকার মানবপাচারের সঙ্গে জড়িত টিকটকার দলের হাত ধরে নিখোঁজ হন। অনেক খোঁজাখুঁজি করেও তার সন্ধান পাচ্ছিল না পরিবার।
সম্প্রতি ভারতের কেরালায় বাংলাদেশি টিকটকার দল এক তরুণীকে বিবস্ত্র করে যৌন নির্যাতন চালালে সে ভিডিও সোশ্যাল মিডিয়ায় ভাইরাল হয়ে যায়।
আর এ ঘটনা বাংলাদেশ পুলিশের সাইবার পেট্রোলিং টিমের নজরে আসে।
বৃহস্পতিবার দুপুরে এক সংবাদ সম্মেলনে তেজগাঁও বিভাগের উপকমিশনার মো. শহীদুল্লাহ জানান, বাংলাদেশের কিশোরগঞ্জ জেলার এক তরুণীকে ভারতের কেরালা রাজ্যে নিয়ে যৌন নির্যাতনের অভিযোগ উঠেছে। এ ঘটনায় বাংলাদেশেরই রিফাতুল ইসলাম হৃদয় (২৬) নামে এক যুবক জড়িত বলে সত্যতা পেয়েছে পুলিশ।
অভিযুক্ত যুবক রাজধানীর মগবাজার এলাকার বাসিন্দা। গত কয়েক দিন ধরে ভারতে ধারণ করা একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে ভাইরাল হয়। ভিডিওটি আমাদের নজরে আসে।
ভাইরাল হওয়া ভিডিওতে দেখা যায়, ২০-২২ বছরের একজন তরুণীকে বিবস্ত্র করে ৩-৪ জন যুবক শারীরিক ও বিকৃতভাবে যৌন নির্যাতন করছে। ভিডিওটির একজনের সঙ্গে বাংলাদেশি একটি ছেলের ছবি মিলে যায়। এরপরই এ বিষয়ে আমরা তদন্ত শুরু করি।
তদন্তের একপর্যায়ে জানা যায়, নির্যাতনকারী ওই যুবকের নাম রিফাতুল ইসলাম হৃদয়। সে রাজধানীর মগবাজার এলাকার বাসিন্দা। রিফাতুল ইসলাম হৃদয়ের পরিচয় তার মা ও মামার কাছ থেকে শনাক্ত করা হয়। এলাকায় সে টিকটক হৃদয় নামে পরিচিত।
উপকমিশনার আরও বলেন, এ বিষয়ে হৃদয়ের মা ও মামাকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হলে তারা জানান, উচ্ছৃঙ্খল কর্মকাণ্ডের কারণে ৪ মাস আগে হৃদয়কে বাসা থেকে বের করে দেওয়া হয়। বাসার কারও সঙ্গে তার যোগাযোগ নেই। তদন্তের একপর্যায়ে হৃদয়ের মামার হোয়াটসঅ্যাপের মাধ্যমে তার ভারতীয় নম্বরে যোগাযোগ করা হয়।
এ সময় হৃদয় জানায়, গত ৩ মাস আগে সে ভারতে গেছে। যৌন নির্যাতনের যে ভিডিও ভাইরাল হয়েছে, সেই ঘটনা ঘটেছে ১৫ থেকে ১৬ দিন আগে।
হৃদয় ফোনে তার মামাকে আরও জানায়, ভিকটিম তরুণী বাংলাদেশের কিশোরগঞ্জের বাসিন্দা। সে রাজধানীর হাতিরঝিল এলাকায় থাকত। ওই তরুণীর আরও পরিচয় জানতে চাওয়া হলে হৃদয় হোয়াটসঅ্যাপে ভিকটিমের একটি ভারতীয় পরিচয়পত্র পাঠায়। যৌন নির্যাতনের ঘটনায় হৃদয় ও তার কয়েকজন বন্ধু জড়িত ছিল। এটি ঘটে ভারতের কেরালায়।
পুলিশের এ সংবাদ সম্মেলন সম্প্রচার মাধ্যমে প্রচারিত হলে ওই তরুণীর মা-বাবা ও স্বজনসহ এলাকাবাসী নির্যাতনের ভাইরাল ভিডিও দেখে ওই তরুণীকে শনাক্ত করেন। তার বাবা ইতোমধ্যে এ ঘটনায় হাতিরঝিল থানায় মামলাও করেছেন।
শুক্রবার বিকালে ওই তরুণীর গ্রামের বাড়ি সরেজমিন পরিদর্শনকালে দেখা হয় তার মা-চাচাসহ নিকটাত্মীয়দের সঙ্গে। এমন খবর পেয়ে আশপাশের গ্রামের বিভিন্ন বয়সের নারী-পুরুষকেও এ বাড়িতে এসে স্বজনদের প্রতি সহমর্মিতা প্রকাশ করতে দেখা যায়।
নির্যাতিত তরুণীর মা-চাচা চোখের জল মুছতে মুছতে যুগান্তরকে বলেন, আমাদের অর্থবিত্ত ও লোকবল কিছুই নেই। তবে আমরা বিশ্বাস করি মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার হস্তক্ষেপে আমরা আমাদের প্রিয় মেয়েকে ফিরে পাব এবং জড়িতদের গ্রেফতার করে কঠোর শাস্তি দেয়া হবে।