রমজান মুমিনের মুক্তির মাস। আল্লাহর নৈকট্য অর্জনের মাস। কারণ এই মাসে মহান আল্লাহ তাঁর বান্দাদের পাপমুক্ত করেন। তাদের প্রতিটি আমলের সওয়াব বহুগুণে বাড়িয়ে দেন। রাসুলুল্লাহ (সা.) ইরশাদ করেন, ‘যে ব্যক্তি এই মাসে একটি নফল কাজ করবে, সে যেন অন্য মাসের একটি ফরজ আদায় করল। আর যে ব্যক্তি এ মাসে একটি ফরজ আদায় করবে, সে যেন অন্য মাসের ৭০টি ফরজ সম্পাদন করল।’ (মিশকাতুল মাসাবিহ, হাদিস : ১৯৬৫)
সুবহানাল্লাহ! এভাবেই মহান আল্লাহ তাঁর মুমিন বান্দাদের জন্য অবারিত রহমত অর্জনের দ্বার খুলে দেন। অন্যদিকে মুনাফিকের জন্য এই মাসটি ক্ষতির মাস। কেননা তারা এই রমজান মাসেও নিজেকে পাপমুক্ত করার প্রতি উদ্যোগী না হয়ে মানুষের ক্ষতি করার পাঁয়তারায় লিপ্ত থাকে। মানুষের দোষচর্চায় লিপ্ত থাকে। অন্যকে কিভাবে ঘায়েল করা যায়, সেই কূটচাল তৈরিতে ব্যস্ত থাকে।
রাসুল (সা.) ইরশাদ করেন, ‘আল্লাহর কসম! মুসলমানদের জন্য রমজানের চেয়ে উত্তম কোনো মাস আসেনি এবং মুনাফিকদের জন্য রমজান মাসের চেয়ে অধিক ক্ষতির মাসও আর আসেনি। কেননা মুমিনরা এ মাসে (সারা বছরের জন্য) ইবাদতের শক্তি ও পাথেয় সংগ্রহ করে আর মুনাফিকরা তাতে মানুষের উদাসীনতা ও দোষত্রুটি অন্বেষণ করে। এ মাস মুমিনের জন্য গনিমত আর মুনাফিকের জন্য ক্ষতির কারণ।’ (মুসনাদে আহমদ, হাদিস : ৮৩৬৮)
মানুষের দোষচর্চা ও ত্রুটি অন্বেষণে মগ্ন থাকা ইসলামের দৃষ্টিতে গর্হিত কাজ। তা ছাড়া এই অভ্যাস নিজের জন্যই দুর্ভোগ ডেকে আনে। মহান আল্লাহ তাঁর বান্দাদের এর ভয়াবহতা সম্পর্কে সতর্ক করেছেন। পবিত্র কোরআনে ইরশাদ হয়েছে, ‘তোমরা একে অন্যের দোষত্রুটি অন্বেষণ কোরো না এবং পরস্পর গিবত কোরো না। তোমাদের মধ্যে কেউ কি তার মৃত ভাইয়ের গোশত ভক্ষণ করতে পছন্দ করবে? বস্তুত তোমরা তা ঘৃণাই করে থাকো। সুতরাং তোমরা আল্লাহকে ভয় করো। নিশ্চয়ই আল্লাহ তাওবা কবুলকারী, পরম দয়ালু।’ (সুরা : হুজুরাত, আয়াত : ১২)
অন্য আয়াতে ইরশাদ হয়েছে, পেছনে ও সামনে প্রত্যেক পরনিন্দাকারীর জন্য দুর্ভোগ-ধ্বংস। (সুরা : হুমাজাহ, আয়াত : ১)
এই দুর্ভোগের মাত্রা কী হবে, সে ব্যাপারেও এই সুরায় ইঙ্গিত দেওয়া হয়েছে। মহান আল্লাহ বলেন, ‘অবশ্যই সে নিক্ষিপ্ত হবে হুতামায়। আর…সেটি আল্লাহর প্রজ্বলিত আগুন, যা হৃৎপিণ্ড পর্যন্ত পৌঁছে যাবে। নিশ্চয়ই তা তাদের আবদ্ধ করে রাখবে। প্রলম্বিত স্তম্ভসমূহে।’ (সুরা : হুমাজাহ, আয়াত : ৪-৯)
যারা পবিত্র রমজান মাসে এসেও এই জঘন্য কাজে লিপ্ত থাকে, তাদের চেয়ে দুর্ভাগা আর কে হতে পারে? পবিত্র রমজানের মতো মহামূল্যবান মাস পেয়েও যারা তার বরকত অর্জন করতে পারে না, নিজের গুনাহ মাফ করাতে পারে না, উপরন্তু অন্যের সমালোচনা ও অন্যের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করে নিজেকে জাহান্নামের দিকে ঠেলে দেয়, সে সত্যি দুর্ভাগা। মহান আল্লাহ তাঁর প্রিয় বান্দাদের এ ধরনের লোকদের থেকে দূরে থাকতে বলেছেন। পবিত্র কোরআনে ইরশাদ হয়েছে, ‘আর তুমি আনুগত্য কোরো না প্রত্যেক এমন ব্যক্তির, যে অধিক কসমকারী, লাঞ্ছিত, পেছনে নিন্দাকারী ও যে চোগলখোরি করে বেড়ায়, ভালো কাজে বাধাদানকারী, সীমা লঙ্ঘনকারী, পাপিষ্ঠ।’ (সুরা : কলাম, আয়াত : ১০-১৩)
অনেকের মনে হতে পারে, আমি তো অমূলক কিছু নিয়ে কারো গিবত করছি না, সে আসলেই এ ধরনের পাপে লিপ্ত। তাদের জন্য রাসুল (সা.)-এর একটি হাদিস উদ্ধৃত করা হলো, এটি জানার পর তারা বুঝতে পারবে আসলে গিবত কাকে বলে। আবু হুরায়রা (রা.) বলেন, একদা রাসুল (সা.)-কে প্রশ্ন করা হলো, গিবত কী? তিনি বলেন, তোমার ভাইয়ের ব্যাপারে তোমার এমন কিছু বলা, যা শুনলে সে অসন্তুষ্ট হয়। পুনরায় প্রশ্ন করা হলো, আমি যা বলি, তা যদি আমার ভাইয়ের মধ্যে বিদ্যমান থাকে? তিনি বলেন, তুমি যা বলো, তা যদি তার মধ্যে থাকে, তাহলেই তুমি তার গিবত করলে। আর তুমি যা বলো, তা যদি তার মধ্যে না থাকে, তবে তুমি তাকে মিথ্যা অপবাদ দিলে। (আবু দাউদ, হাদিস : ৪৮৭৪)
তাই সবার উচিত পবিত্র এই মাসে এই বদ-অভ্যাসটি ত্যাগ করা এবং আজীবন এই অভ্যাস থেকে দূরে থাকার দৃঢ়প্রতিজ্ঞা করা।