কুমিল্লার বাজারে ঐতিহ্যবাহী খাদির রঙিন শাড়ির চাহিদা দিন দিন বাড়ছে । দৃষ্টিনন্দন, আরামদায়ক এবং কম দাম হওয়ায় খাদির শাড়ি ক্রয় করছেন ক্রেতারা।
কারিগররা হাতের ব্লক করা এসব শাড়ি গুলো পরম যত্নে তৈরি করছেন। খাদে (গর্তে) বসে তৈরি করা হয় বলে এর নাম হয় ‘খাদি’। কুমিল্লা নগরীর মনোহরপুর ও লাকসাম রোডে খাদিপণ্য বিক্রির প্রতিষ্ঠান গুলোর পাশাপাশি শাড়ি তৈরি করছে কুমিল্লার প্রাচীন প্রতিষ্ঠান খাদিঘর।
চাকরিজীবী সামিয়া জাহান জানান, ‘তিনি পরিবারে জন্য খাদির শার্ট,ফতুয়া পাঞ্জাবি ও থ্রি-পিস ক্রয় করেন। নিজের জন্য খাদির শাড়ি সংগ্রহ করেন। খাদির শাড়ি দেখতে সুন্দর, গরমে পরতে আরামদায়ক এবং দামেও কম।
শিক্ষাবিদ এহতেশাম হায়দার চৌধুরী বলেন, ‘খাদি কুমিল্লার ঐতিহ্য। খাদির বর্ণিল ডিজাইনের কারণে দিন দিন এর চাহিদা বাড়ছে। খাদির শাড়ি এখন উৎসবের অন্যতম অনুষঙ্গ হয়ে দাঁড়িয়েছে।’
কুমিল্লা নগরীর খাদির প্রবীণ ব্যবসায়ীরা বলেন, শতবর্ষের খাদি পণ্য তার গুণগত মান বজায় রেখে আধুনিকতার সংমিশ্রণে প্রতিযোগিতার বাজারে চাহিদা ধরে রেখেছে। পৃথিবীর যেখানে বাঙালী কমিউনিটি আছে সেখানে খাদি কাপড়ের প্রসার ঘটেছে। বাংলাদেশের বিদেশি দূতাবাসে খাদিসহ দেশীয় পণ্যের প্রদর্শনী করলে তা পণ্যের ব্যাপক প্রসার ঘটাবে।
এছাড়াও, খাদির সাথে জড়িয়ে আছে ভারতবর্ষের আন্দোলন ও বাঙালি ঐতিহ্য। শতবর্ষের ঐতিহ্যের খাদি আলোচনায় আসে ১৯২১ সালে বৃটিশ বিরোধী আন্দোলনের সময়। তখন মহাত্মা গান্ধীর আহবানে সমগ্র ভারতবর্ষে অসহযোগ আন্দোলনের সময় কুমিল্লায় খাদি শিল্প প্রতিষ্ঠা লাভ করে। সেই সময় বিদেশি পণ্য বর্জন করার জন্য ডাক উঠে। সর্বত্র এক আওয়াজ ‘মোটা কাপড়-মোটা ভাত’।
কুমিল্লার খাদি এখন শৈল্পিকতার ছোঁয়ায় দেশ-বিদেশে সমাদৃত হয়ে আসছে। খাদির কাপড় যাচ্ছে আমেরিকা, ইংল্যান্ড, মধ্যপ্রাচ্যসহ পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে। এ সুনাম অর্জিত হয়েছে বহু বছর ধরে অনেক কারিগর ও ব্যবসায়ীদের অক্লান্ত পরিশ্রমে।
বর্তমানে কুমিল্লা জেলায় দেড় হাজার পরিবার এই পেশায় জড়িত। মহানগরে খাদি কাপড়ের দোকান রয়েছে শতাধিক। খাদি কাপড় বিক্রির আলাদা মার্কেট রয়েছে নগরীর রাজবাড়ি এলাকায়।
খাদি শিল্পের প্রসারে উল্লেখ্যযোগ ভূমিকা রেখেছেন কুমিল্লা মহানগরের খাদি ঘরের তরুণী মোহন রাহা, খাদি কুটির শিল্পের শংকর সাহা, খাদি ভবনের দীনেশ দাশ, বিশুদ্ধ খদ্দরের মনমোহন দত্ত ও রাম নারায়ণ স্টোরের কৃষ্ণ সাহা।
কারিগর আনু মিয়া বলেন,’খাদির শাড়ির রঙ পাকা। দাম ১৫শ’ থেকে দুই হাজার টাকা। একবার যিনি পরবেন তিনি পুনরায় সংগ্রহ করবেন।’
খাদিঘরের স্বত্বাধিকারী প্রদীপ কুমার রাহা বলেন, ‘বিভিন্ন দিবস উপযোগী শাড়ি তৈরি করেন তারা। আগে মুক্তিযুদ্ধে সাথে সমন্বয় করে ‘বিচ্ছু’ নামের শাড়ি বাজারে আনেন।