গোটা দেশের সঙ্গে বাঁধতে পদ্মার বিশাল জলরাশির উপর সেতুর স্বপ্ন বহু দিনের; যা নিজস্ব অর্থায়নে নির্মিত, স্বপ্ন আজ বাস্তবে রূপ নিল। বছর, দিন, মিনিট, সেকেন্ড, ঘণ্টা পেরিয়ে উদ্বোধন হয়ে গেল স্বপ্নের সেতুর। অহংকার ও গর্বের সেতুটি নিয়ে আবেগে ভাসছে গোটা বাংলাদেশ ও কোটি প্রবাসী। আর সেই আবেগের ঢেউ লেগেছে মালয়েশিয়ায় থাকা প্রবাসীদের মাঝেও। মালয়েশিয়া প্রবাসীদের হৃদয়ে যেন পদ্মার পটভূমি চিত্রকরের আঁকা ক্যানভাসে ক্রমশ স্পষ্ট থেকে স্পষ্টতর হয়ে উঠেছে। প্রবাসীরা মেতে উঠেছেন পদ্মা সেতুর বাঁধনহারা উচ্ছ্বাসে।
প্রবাসী কমিউনিটি নেতা মো. রাশেদ বাদল বলেন, পদ্মা সেতু বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনার সাহসী প্রচেষ্টা ও প্রত্যয়ের ফসল। বছরের পর বছর কষ্টের পর প্রমত্তা পদ্মার বুক চিরে সেতু তৈরির এ সুন্দর স্বপ্ন এখন বাস্তবায়ন হয়েছে।
প্রবাসী কমিউনিটি নেতা মনিরুজ্জামান মনির বলেন, পদ্মা সেতু এখন শুধু একটি অবকাঠামো নয়, এটা বাংলাদেশের সক্ষমতা ও আত্মমর্যাদার প্রতীক। এগিয়ে যাওয়ার প্রতিচ্ছবি। দেশের অন্যতম অহংকার ও গৌরবের প্রতীক।
ইয়ূথ হাব সভাপতি পাভেল সারওয়ার বলেন, আত্ম মর্যাদাসম্পন্ন বাঙালির গর্বের আরেকটা নতুন সংযোজনের নাম পদ্মা সেতু। শুধু তাই নয়, দক্ষিণাঞ্চলের মানুষের যাতায়াতে দীর্ঘদিনের দুর্ভোগের অবসান হলো। তিনি বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার উচ্ছ্বসিত প্রশংসা এখন দেশ থেকে বিদেশেও।
মালয়েশিয়ায় নিযুক্ত বাংলাদেশের হাইকমিশনের ভারপ্রাপ্ত হাইকমিশনার মোহাম্মদ খোরশেদ এ সাস্তগীর বলেন, পদ্মা বহুমুখী সেতু কেবল দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের নয়, পুরো বাংলাদেশের অর্থনীতিই বদলে দেবে। আরও বিশদভাবে বলতে গেলে এই সেতু দক্ষিণ এশিয়া ও দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার যোগাযোগ, বাণিজ্য, পর্যটনসহ অনেক ক্ষেত্রেই গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে। সব মিলিয়ে দেশের মানুষের স্বপ্নের সেতু হয়ে উঠবে। পদ্মা সেতু বার্ষিক জিডিপিতে এটি প্রায় ১.২ শতাংশ অবদান রাখবে। দারিদ্র্য হ্রাস করবে ও দক্ষিণ-পশ্চিম অঞ্চলের মানুষের অর্থনৈতিক কর্মকান্ড বাড়াবে। এটি দক্ষিণ এবং দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলে বিনিয়োগের দরজা খুলে দেবে। শেখ হাসিনার ইস্পাত সমান দৃঢ়তায় পদ্মা সেতু এখন দৃশ্যমান। গর্বের সেতু আজ দাঁড়িয়ে আছে। নিজস্ব অর্থে পদ্মা সেতু নির্মাণের ফলে সারা বিশ্বে বাংলাদেশের অর্থনৈতিক সম্ভাবনা ও ভাবমূর্তি প্রতিষ্ঠিত হয়েছে।
এদিকে হাইকমিশনের ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজে পদ্মা সেতুর (ক্রেডিট: ইমপ্রেস টেলিফিল্ম লিমিটেড) তথ্যচিত্রটি ১ মিলিয়নেরও বেশি ভিউ হয়েছে, যার ১৪৩,০০০-এর বেশি ফলোয়ার রয়েছে। ভারপ্রাপ্ত হাইকমিশনার বলেন, দেশ-বিদেশে বসবাসরত কোটি কোটি বাঙালি-বাংলাদেশির আশা-আকাঙ্ক্ষার সত্য প্রমাণ যে, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সাহসী ও দূরদর্শী নেতৃত্বে বাংলাদেশ এমন অসাধারণ মাইলফলক অর্জন করেছে।
বাংলাদেশ হাইকমিশনের মিনিস্টার নাজমুস সাদাত সেলিম বলেন, পদ্মা সেতু শুধু সেতুই নয় এটি একটি স্বপ্ন, আত্মবিশ্বাস, সক্ষমতা এবং নিন্ধুকের সমালোচনার উৎকৃষ্ট জবাব। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দৃঢ় সিদ্ধান্তে অটল থাকা, আর নিজের প্রতি আত্মবিশ্বাসই ছিল পদ্মা সেতু গড়ার মূল ভিত্তি।
প্রবাসী জহিরুল ইসলাম জহির বললেন, পদ্মার বুকে সেতু উদ্বোধন হচ্ছে। এ যে অবিশ্বাস্য এক স্বপ্ন। দেশে ফিরে যাওয়ার আকুতি আজ তার চোখেমুখে। আর সেই আকুতিকে হৃদয়ের মন উচাটন আবেগে ফিরিয়ে আনার নামই বোধহয় আজ পদ্মা সেতু। তাই পদ্মা সেতু শুধু বাংলাদেশের মানুষের কাছে গর্বের, অহঙ্কারের। যে অহঙ্কার বিনাসুতোর মালায় বাধা পড়ে গেল।
প্রবাসী উঠতি প্রজন্মের মধ্যেও ছড়িয়ে পড়েছে পদ্মা সেতুর আবেগ। কয়েক কিলোমিটার দীর্ঘ একটা সেতুর নিচ দিয়ে ট্রেন, ওপর দিয়ে যানবাহন কী করে যাওয়া সম্ভব, সেই দৃশ্য দেখতে মোবাইলের ইউটিউব আর গুগুল সার্চে তাদের এখন প্রথম পছন্দ পদ্মা সেতু। তাই শুধু বাংলাদেশেই নয়, পদ্মা সেতুর আবেগ এখন সারা বিশ্বে আবালবৃদ্ধবণিতার মধ্যেও আগ্রহের ঝড় তুলেছে।
প্রবাসী ও পর্যটনপ্রেমীরা বলছেন, এখন থেকে ঢাকা যেতে আর ঘণ্টার পর ঘণ্টা পদ্মা পারের জন্য ফেরিঘাটে লাইন দিতে হবে না। প্রায় তিন থেকে চার ঘণ্টা আগেই আমরা পৌঁছে যেতে পারব বাংলাদেশের রাজধানীর বুকে। প্রবাসীদের মাঝে আজ পদ্মা সেতুর গরবে যেন গর্ব অনুভব করছে। বাঙালি যে বিশ্বের সেরা প্রযুক্তিকে কাজে লাগিয়ে ইতিহাস সৃষ্টি করতে পারে, তার নমুনা অবশ্যই বাংলাদেশের পদ্মা সেতু।