আজ শনিবার পদ্মা সেতু উদ্বোধন করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। কাল রবিবার সকাল ৬টা থেকে যান চলাচল শুরু হবে সেতুতে। নির্ধারিত টোল দিয়ে থ্রি হুইলার ছাড়া যেকোনো গাড়ি পার হতে পারবে সেতু।
তবে সেতুতে সাইকেল চালিয়ে পার হওয়া যাবে না। হাঁটাও যাবে না।
পদ্মা সেতু চালুর দিনে ভিড় হবে বলে ধারণা করছে কর্তৃপক্ষ। তবে চাপ সামলাতেও প্রস্তুতি রাখা হয়েছে বলে জানিয়েছে সেতু কর্তৃপক্ষ।
পদ্মা সেতু চালু হওয়ায় এখন দৌলতদিয়া-পাটুরিয়া ফেরিঘাটে দক্ষিণাঞ্চলের বাসের চাপ কমবে। রাজধানী ঢাকার গাবতলী ও কল্যাণপুর থেকে আরিচা করিডরে দক্ষিণাঞ্চলগামী বাস চলাচল কমবে। আর বেশির ভাগ বাস সায়েদাবাদ হয়ে যাবে বলে মনে করছেন পরিবহনসংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা। এতে জ্বালানি, ভোগান্তি ও পথের দূরত্ব কমে আসবে। পদ্মা নদী পাড়ি দিতে ফেরির পরিবর্তে ব্যবহার হবে সেতু।
এই নতুন পথ ব্যবহারের জন্য নতুন করে রুট পারমিট নিতে হবে না বাস মালিকদের। তবে এই রুটে নতুন করে বাস চালু করলে বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষের (বিআরটিএ) কাছ থেকে পারমিট নিতে হবে। বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন বিআরটিএর চেয়ারম্যান নূর মোহাম্মদ মজুমদার।
সায়েদাবাদ হয়ে দক্ষিণাঞ্চলের বাস চলাচল করলেও যাত্রীদের কোনো সমস্যা হবে না বলে জানিয়েছেন হানিফ পরিবহনের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মোশারফ হোসেন। তিনি বলেন, সায়েদাবাদ হয়েই বেশির ভাগ বাস দক্ষিণাঞ্চলে যাবে। তবে দিনের বেলা সব কাউন্টার থেকেই যাত্রীরা ছোট বাসের সেবা পাবে। ফলে তাদের কোনো কাউন্টারেই সমস্যা হবে না। আর রাত ৯টার পর তো ঢাকায় বড় বাস চলাচল করতে পারে।
বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন মালিক সমিতির মহাসচিব খন্দকার এনায়েত উল্যাহ জানান, বাসের নতুন রুট পারমিট দেওয়া হলেও ঢাকায় বড় বাসের চাপ বাড়বে না। আগের মতোই চলবে। শুধু ঢাকা থেকে বের হওয়ার পথটা ভিন্ন হবে।
পদ্মা সেতুকে কেন্দ্র করে ঢাকা শহরের সড়ক ব্যবস্থা ঢেলে সাজানোর কথা বলছেন যাত্রী কল্যাণ সমিতির মহাসচিব মোজাম্মেল হক চৌধুরী। তিনি বলেন, আগে যেসব বাস গাবতলী থেকে দক্ষিণাঞ্চলে যেত সেগুলো গাবতলী থেকেই ঢাকা ছাড়ত। এখন ওই বাসগুলো ঢাকার ভেতর দিয়ে সায়েদাবাদ পর্যন্ত যাবে। ফলে ঢাকায় যানজটের চাপ বাড়বে।
ঢাকা থেকে বাসে কোন জেলার ভাড়া কত :
পদ্মা সেতু ব্যবহার করে যেসব বাস দক্ষিণাঞ্চলের জেলাগুলোতে যাবে সেসব রুটের জন্য ভাড়া নির্ধারণ করেছে বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষ (বিআরটিএ)। এই ভাড়ার সঙ্গে পদ্মা সেতুর টোল যুক্ত করা আছে। তবে ঢাকা-মাওয়া-ভাঙ্গা এক্সপ্রেসওয়ের টোল যুক্ত করা হয়নি। এই টোল যুক্ত হওয়ার পর ভাড়া আরো কিছুটা বাড়বে।
দক্ষিণাঞ্চলের ২১ জেলার জন্য ১৩টি রুট নির্ধারণ করেছে বিআরটিএ। সেই রুটের বাস রাজধানীর সায়েদাবাদ বাসস্ট্যান্ড হয়ে ঢাকা ছাড়বে। গত ৭ জুলাই বাসের এই ভাড়া নির্ধারণ করে সংস্থাটি বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করে।
বিজ্ঞপ্তি অনুযায়ী ১৩ রুটের বাস ভাড়া হলো―ঢাকা-ভাঙ্গা-মাদারীপুর-বরিশালের ভাড়া ৪১২ টাকা, ঢাকা-রাজৈর-গোপালগঞ্জের ভাড়া ৫০৪ টাকা, ঢাকা-গোপালগঞ্জ-খুলনার ভাড়া ৬৪৯ টাকা, ঢাকা-জাজিরা-শরীয়তপুরের ভাড়া ২১৮ টাকা, ঢাকা-বরিশাল-পিরোজপুরের ভাড়া ৫৩৪ টাকা, ঢাকা-গোপালগঞ্জ-বাগেরহাট-পিরোজপুরের ভাড়া ৬২৮ টাকা, ঢাকা-বরিশাল-পটুয়াখালীর ভাড়া ৫০১ টাকা, ঢাকা-ভাঙ্গা-মাদারীপুরের ভাড়া ৩২৭ টাকা, ঢাকা-গোপালগঞ্জ-খুলনা-সাতক্ষীরার ভাড়া ৬৩৩ টাকা, ঢাকা-ভাঙ্গা-ফরিদপুরের ভাড়া ২৮৮ টাকা, ঢাকা-মাদারীপুর-বরিশাল-ভোলা-চর ফ্যাশনের ভাড়া ৬৫৩ টাকা, ঢাকা-বুড়িগঙ্গা দ্বিতীয় সেতু-শরীয়তপুরের ভাড়া ২১৯ টাকা এবং ঢাকা-মাদারীপুর-বরিশাল-পটুয়াখালী-কুয়াকাটার ভাড়া ৬৯৪ টাকা হবে।
কোন যানে কত টোল :
মোটরসাইকেলে ১০০ টাকা, কার বা জিপে ৭৫০ টাকা, পিকআপ ভ্যানে এক হাজার ২০০ টাকা, মাইক্রোবাসে এক হাজার ৩০০ টাকা, ছোট বাসে (৩১ আসন বা এর কম) এক হাজার ৪০০ টাকা, মাঝারি বাসে (৩২ আসন বা এর বেশি) দুই হাজার টাকা, বড় বাসে (৩ এক্সেল) দুই হাজার ৪০০ টাকা, ছোট ট্রাকে (৫ টন পর্যন্ত) এক হাজার ৬০০ টাকা, মাঝারি ট্রাকে (৫ টনের বেশি থেকে ৮ টন) দুই হাজার ১০০ টাকা, মাঝারি ট্রাক (৮ টনের বেশি থেকে ১১ টন পর্যন্ত) দুই হাজার ৮০০ টাকা।