শুক্রবার (১ অক্টোবর) থেকে সব ধরনের অবৈধ মোবাইল ফোন সেট চালু করতে গেলে তা গ্রাহককে এসএমএস পাঠিয়ে স্বয়ংক্রিয়ভাবেই বন্ধ হয়ে যাবে। এসএমএসে জানানো হবে, ‘সেটটি অবৈধ, কিছুক্ষণের মধ্যে সংযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে যাবে’। অবৈধ পথে দেশে আনা বা অনিবন্ধিত ফোন সেটগুলো কাল থেকে এভাবেই অচল হয়ে পড়বে বলে নিশ্চিত করেছেন টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিটিআরসির ভাইস চেয়ারম্যান সুব্রত রায় মৈত্র।
বৃহস্পতিবার (৩০ সেপ্টেম্বর) বাংলা ট্রিবিউনের সঙ্গে আলাপকালে বিটিআরসির ভাইস চেয়ারম্যান বলেন, আজই ন্যাশনাল ইকুইপমেন্ট আইডেন্টিটি রেজিস্টার (এনইআইআর) সিস্টেমের ৩ মাসের পরীক্ষামূলক কার্যক্রম শেষ হচ্ছে। ১ অক্টোবর থেকে অনিবন্ধিত বা অবৈধ ফোনগুলো বন্ধের প্রক্রিয়া শুরু হবে।
প্রসঙ্গত, গত ১ জুলাই এনইআইআর সিস্টেমটি চালু হয়। সিস্টেমটি পরীক্ষামূলকভাবে চালু করে বিটিআরসি। সে সময় বলা হয়, ৩০ জুন পর্যন্ত মোবাইল ফোন অপারেটরের নেটওয়ার্কে চালু থাকা সব মোবাইল ফোন সেট স্বয়ংক্রিয়ভাবে এনইআইআর সিস্টেমে নিবন্ধিত হয়ে যাবে। ১ জুলাই থেকে নতুন সেটগুলো চালু করতে হলে নিবন্ধন করে চালু করতে হবে। ১ জুলাইয়ের পরে দেশে চালু হওয়া অবৈধ সেট নিবন্ধনের জন্য ৩ মাস চালু থাকবে। ৩ মাস পরে সেটগুলো নিয়ে সিদ্ধান্তের কথা জানানো হবে।
মূলত দেশে অবৈধ বা নন-চ্যানেল মোবাইল ফোনের প্রবেশ বন্ধ করতে সরকার এনইআইআর সিস্টেম চালু করে। এতে দেশে আসা অবৈধ মোবাইল ফোন বা নন-চ্যানেল ফোন চিহ্নিত করা সহজ হবে। নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিটিআরসি সেগুলো চিহ্নিত করে বন্ধের উদ্যোগ নেবে। ফলে দেশে উৎপাদিত মোবাইল ফোনের বাজার আরও বড় হবে। অপরদিকে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর আশা, এনইআইআর সিস্টেম চালু হলে দেশে মোবাইল ফোন কেন্দ্রিক অপরাধের সংখ্যা কমবে। এ সিস্টেম চালু হলে চুরি বা ছিনতাই হওয়া ফোনে অন্য সিম দিয়ে নেটওয়ার্কে চালু করা যাবে না।
১ অক্টোবর থেকে যা হবে
বিটিআরসির কমিশনার (তরঙ্গ ব্যবস্থাপনা) এ কে এম শহীদুজ্জামান বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ১ অক্টোবর থেকে কোনও গ্রাহক ফোন চালু করতে গেলে একটি প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে যাবেন। ফোনটি বৈধ হলে কয়েকটি ধাপ অগ্রসর হলেই সেটি চালু হয়ে যাবে। যদি ফোনটি অবৈধ হয় তাহলে নেটওয়ার্কে চালু করার সময় মেসেজ আসবে। মেসেজের মাধ্যমে ক্রেতাকে জানানো হবে যে ‘তার ফোন সেটটি বৈধ নয়। কিছুক্ষণের মধ্যে ফোনটি বন্ধ হয়ে যাবে।’ এই মেসেজ ফোন বিক্রেতাকে দেখিয়ে ক্রেতা তার ফোন সেটটি বদলে নিতে পারবেন বা টাকা ফেরত নিতে পারবেন। কোনও বিক্রেতা ফোন বদলে না দিলে বা টাকা ফেরত না দিলে ক্রেতার স্বার্থে প্রয়োজনে আমরা আইনগত ব্যবস্থাও নেবো। বিক্রেতাও বুঝবেন এভাবে এসব ফোন আর বিক্রি করা যাবে না। আমরা চাই ক্রেতা, বিক্রেতা, উৎপাদক সবার স্বার্থটি দেখতে।
বিটিআরসির তরঙ্গ ব্যবস্থাপনা বিভাগের মহাপরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল শহিদুল আলম বলেন, ১ অক্টোবর থেকে বৈধ মোবাইল ফোন পদ্ধতি মেনে নিবন্ধনের মাধ্যমে চালু করা যাবে। এ সময়ের পরে যেসব নন-চ্যানেল বা অন-অফিসিয়াল (অবৈধ) ফোন নেটওয়ার্কে যুক্ত হলে তা বিচ্ছিন্ন হয়ে যাবে। তিনি বলেন, আমরা গ্রাহকদের বলছি ফোন কেনার সময় সিম লাগিয়ে চালু করে (নিবন্ধন করে) নিতে। সেটা সম্ভব না হলে কেওয়াইডি দিয়ে পরীক্ষা করে দেখতে যে ফোনটি বৈধ না অবৈধ।
তিনি জানান, এনইআইআর চালুর প্রথম তিন মাস (১ জুলাই থেকে ৩০ সেপ্টেম্বর) ছিল পরীক্ষামূলক সময়। এই সময়ে যেসব অবৈধ মোবাইল ফোন নেটওয়ার্কে সংযুক্ত (চালু) হয়েছে সেসব আপাতত চালুই থাকবে। এ বিষয়ে নতুন কোনও সিদ্ধান্ত হয়নি। পরবর্তী সময়ে সিদ্ধান্ত হলে গ্রাহকদের জানিয়ে দেবে বিটিআরসি।
সেট বৈধ না অবৈধ যাচাইয়ের পদ্ধতি
ফোনের মেসেজ অপশনে গিয়ে KYD টাইপ করে স্পেস দিয়ে মোবাইলের ১৫ ডিজিটের আইএমইআই নম্বর লিখে সেটি ১৬০০২ নম্বরে পাঠালে ফিরতি এসএমএসে আইএমইআই নম্বরটি বিটিআরসির ডাটাবেজে সংরক্ষিত আছে কিনা তা জানা যাবে।