ওমর সানী ও জায়েদ খানের ‘চড়-পিস্তল’কাণ্ডে উত্তাল চলচ্চিত্রপাড়া। ১০ জুন রাতে অভিনেতা মনোয়ার হোসেন ডিপজলের ছেলের বিয়ের অনুষ্ঠানে রাজধানীর একটি কনভেনশন সেন্টারে জায়েদকে চড় মারেন বলে দাবি করেন সানী।
তার অভিযোগ-স্ত্রী মৌসুমীকে বিরক্ত করেন জায়েদ খান। শুধু তাই নয়, চড় মারার পর জায়েদ খান নিজের লাইসেন্স করা পিস্তল উঁচিয়ে ওমর সানীকে গুলি করার হুমকি দেন-এ দাবিও তার (ওমর সানী)। অন্যদিকে সেদিনের ঘটনা সম্পর্কে জায়েদ বলেন, এটা সম্পূর্ণ মিথ্যা।
তিনি ওমর সানীকে পিস্তল দেখিয়ে হুমকি দেননি কিংবা সানীও তাকে চড় মারেনি। তবে ডিপজল জানান, ‘আসলে সেদিন এমন কিছুই ঘটেনি। সানী একটু উত্তেজিত হয়ে পড়লে তাকে শান্ত হওয়ার পরামর্শ দিয়েছি। এর বাইরে কিছুই ঘটেনি।’ এতকিছুর পরও যাকে নিয়ে এই ঘটনার সৃষ্টি, সেই মৌসুমী তখনো কিন্তু নিশ্চুপ!
এ নিয়ে যখন বাহাস চলছিল ঠিক এর একদিন পর ১২ জুন চলচ্চিত্র শিল্পী সমিতিতে এসে লিখিত অভিযোগ করেন ওমর সানী। অভিযোগে দাবি করেন, জায়েদ খান তার সংসার ভাঙার চেষ্টা করছেন।
অভিযোগপত্রে লেখা হয়েছে, ‘আমি ওমর সানী অত্র সমিতির একজন সদস্য এবং সাবেক কমিটির সহসভাপতি ছিলাম। দীর্ঘ ৩২ বছর ধরে চলচ্চিত্রে অভিনয় করে আসছি। কিন্তু দুঃখের বিষয়, সমিতির সদস্য জায়েদ খান চার মাস ধরে আমার স্ত্রী আরিফা পারভীন জামান মৌসুমীকে নানাভাবে হয়রানি ও বিরক্ত করে আসছে। আমার সুখের সংসার ভাঙার জন্য বিভিন্ন কৌশলে তাকে হেয়প্রতিপন্ন করার চেষ্টা করে আসছে। এ ব্যাপারে তাকে হোয়াটসঅ্যাপে মেসেজ দিয়ে বারবার বোঝানোর চেষ্টা করেছি। তার প্রমাণ আমার এবং আমার ছেলের কাছেও আছে। তাছাড়া মুরব্বি হিসাবে আমি ডিপজল ভাইয়ের কাছে এ বিষয়ে অভিযোগ করেছি। কিন্তু ওই বিষয়ের কোনো সমাধান হয়নি। ডিপজল ভাইয়ের ছেলের বিয়েতে জায়েদ খানের সঙ্গে দেখা হলে এ বিষয়ে সংযত হওয়ার জন্য আমি অনুরোধ করি। এতে সে আমার ওপর ক্ষিপ্ত হয়ে ওঠে এবং হঠাৎ করে তার পিস্তল বের করে আমাকে মেরে ফেলার হুমকি দেয়।’
ওমর সানীর অভিযোগের পর দেশব্যাপী যখন সমালোচনার ঝড় বইছে ঠিক তখন মৌসুমী মুখ খুললেন। গতকাল সোমবার জানিয়েছেন, ওমর সানী আসলে মিথ্যা বলছেন! এক অডিও বার্তায় মৌসুমী বলেন, ‘আমি মনে করি আমার প্রসঙ্গটা টানার কোনো প্রয়োজন ছিল না। আমি জায়েদকে অনেক স্নেহ করি, সেও আমাকে যথেষ্ট সম্মান করে। আমাদের মধ্যে যতটুকু কাজের সম্পর্ক, সেটা খুবই ভালো একটা সম্পর্ক। সেখানে সে আমাকে অসম্মান করার কোনো প্রশ্নই ওঠে না। ওর মধ্যে ভালো গুণ ছাড়া এ ধরনের অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটাতে পারে এমন কিছুই আমি দেখিনি। তারপর বলব, সে অনেক ভালো ছেলে। সে কখনোই আমাকে অসম্মান করেনি।’ ওমর সানীর অভিযোগ প্রসঙ্গে তিনিও বলেন, ‘কেন এই প্রশ্নটা বারবার আসছে, সে (জায়েদ খান) আমাকে বিরক্ত করছে, উত্ত্যক্ত করছে! এই জিনিসটা আমার আসলে… জানি না এটা কেন হচ্ছে। এটা যদিও একান্ত আমাদের ব্যক্তিগত সমস্যা। সে সমস্যা আমাদের পারিবারিকভাবেই সমাধান করা দরকার ছিল।’
অডিও বার্তায় স্বামী ওমর সানীকে ভাই বলে সম্বোধন করে মৌসুমী বলেন, ‘আমি মনে করি, এখানে জায়েদের খুব একটা দোষ আমি পাইনি। আরেকটা কথা বলতে চাই, আমাকে ছোট করার মধ্যে আমাদের… যাকে আমরা অনেক শ্রদ্ধা করে আসছি সেই ওমর সানী ভাই কেন এত আনন্দ পাচ্ছেন-সেটা আমি বুঝতে পারছি না। আমার কোনো সমস্যা থাকলে অবশ্যই আমার সঙ্গে সমাধান করবে, সেটিই আমি আশা করি। তিনি (ওমর সানী) আসলে একতরফা বলেছেন, কিন্তু আমি বলেছি কিনা, আমি অভিযোগ করেছি কিনা; জানাটা খুব বেশি জরুরি ছিল।’
এদিকে মৌসুমীর অডিও বার্তা প্রকাশের পরপরই ওমর সানী ফেসবুক লাইভে এসে আবারও নিজের অভিযোগের পক্ষে অটল থাকেন। এজন্য ছেলে ফারদিন ও মেয়ে ফাইজাকে অভিভাবক মেনে সাক্ষী হিসাবে দাঁড় করানোর কথা বলেন।
এ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘আমি যা বলেছি স্পষ্ট করেই বলেছি। আমি শ্রদ্ধা রেখেই কথা বলতে চাই। আমার পরিবারের প্রতি, মৌসুমীর প্রতি আমার প্রচণ্ড শ্রদ্ধা আছে। আমার ছেলেমেয়ের প্রতি আমার শ্রদ্ধা আছে। সে (মৌসুমী) যা বলেছে, কী ভেবে বলেছে আই ডোন্ট নো। এ বিষয়টি নিয়ে কিছুদিন ধরে একটু দূরত্ব তো চলছিল। আমি তার ব্যাপারে মন্দ কথা, খারাপ কথা কিছুই বলব না। কারণ সে এখনো আমার স্ত্রী। আমার সন্তানের মা। একটা কথা বলতে চাই, আমি কী বলেছি না বলেছি সম্পূর্ণ আমার ছেলে ফারদিন, আমার মেয়ে ফাইজা জানে। আমাদের কাছে যথেষ্ট পরিমাণ প্রমাণ আছে জায়েদ খান যে মৌসুমীকে ডিস্টার্ব করেছে। ফারদিন বলুক আর ফাইজা বলুক তাদের মায়ের সম্পর্কে। আমার ছেলেমেয়েরা কথা বলুক এ বিষয়গুলো নিয়ে। তারা যা সিদ্ধান্ত নেবে সেটাই হবে। আমি কিছু বলতে চাই না।’
চলচ্চিত্রসংশ্লিষ্টদের অভিমত-ওমর সানী-মৌসুমীর আলাদা আলাদা বক্তব্যে এটা প্রতীয়মান হয় যে, তাদের সংসারে অশান্তির হাওয়া বইছে। তবে কী সেটা শুধু জায়েদ খানকে নিয়ে? এমন প্রশ্নও তুলছেন কেউ কেউ।
জানা গেছে, এই তারকা দম্পতি রাজধানীর গুলশানের একটি বাসায় একই ছাদের নিচে বসবাস করলেও গত দেড় বছর ধরে তাদের মধ্যে এক ধরনের দূরত্ব রয়েছে। তাদের সংসারে জায়েদ খানের উপস্থিতি বেশিদিনের নয়।
কারণ মাত্র দুই বছর আগেও জায়েদ-সানী সম্পর্ক ছিল ‘সাপে নেউলের’ মতো। গত বছরের ডিসেম্বরে শিল্পী সমিতির সর্বশেষ নির্বাচনকে কেন্দ্র করে তাদের মধ্যে সম্পর্কের বরফ গলেছিল। একসঙ্গে সিনেমায় কাজও করেছেন।
কিন্তু এক বছরের মাথায় আবারও শুরু হলো দ্বৈরথ। এদিকে ওমর সানীর অভিযোগের বিষয়ে জায়েদ খান বলছেন ভিন্নকথা। তিনি বলেন, ‘আসলে মৌসুমী আপু কোনো বিষয় নয়। উনাকে সামনে এনে অপমান করানো হচ্ছে। শিল্পী সমিতির সাধারণ সম্পাদক পদের নির্বাচন নিয়ে মামলার রায় সামনে। শিগগিরই এ বিষয়টির সুরাহা হবে। প্রতিপক্ষের ধোঁকায় পড়েই সানী ভাই এমনটি করছেন। শিল্পী সমিতিতে অভিযোগ দেওয়ার সময় কারা উনার পাশে দাঁড়িয়েছেন, সেগুলো দেখলেই বিষয়টি স্পষ্ট হয়ে যাবে। তবে আমি বলব, সানী ভাই ভুল বুঝেছেন এবং ভুল করছেন। মৌসুমী আপু আমার কাছে বড় বোনের মতো। আমাদের সিনেমার সুপারস্টার, প্রিয়দর্শিনী।