আইসিইউ বেড এখন সোনার হরিণ। একটি বেডের আশায় হাসপাতাল থেকে হাসপাতালে ছুটছেন রোগীর স্বজনরা। কিন্তু, বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই মিলছে না। কাউকে কাউকে স্বজনের মরদেহ নিয়েই ফিরতে হচ্ছে বাড়িতে।
সিরাজগঞ্জের আব্দুর রহমান। একটি ব্যাংকের নিরাপত্তা কর্মী। ৫ দিন ধরে জ্বর। রাত থেকে হঠাৎ শ্বাসকষ্ট বেড়ে যাওয়ায় মঙ্গলবার সকালে রিকশা করে কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতালে নিয়ে আসেন স্বজনরা। আইসিইউ বেড খালি না থাকায় তাকে অন্য হাসপাতালে নেয়ার পরামর্শ দেয় কুর্মিটোলা হাসপাতাল। কিন্তু এরই মধ্যে আব্দুর রহমানের অক্সিজেন লেভেল নেমে গেছে ৪০-৪৫ এ। অ্যাম্বুলেন্সের অপেক্ষায় থাকা আব্দুর রহমানের শ্বাস-প্রশ্বাস আরও ক্ষীণ হতে থাকে। সবচেয়ে কাছে বলে তাকে মহাখালী ডিএনসিসি করোনা ডেডিকেটেড হাসপাতালে নিয়ে আসেন স্বজনরা। সেখানেও কয়েকটি অ্যাম্বুলেন্সে ভর্তির অপেক্ষায় রোগীরা। অপেক্ষা শেষ হওয়ার আগেই যেন আব্দুর রহমানের নিশ্বাস বন্ধ হয়ে গেছে।
রোগীর স্বজনদের অভিযোগ ঘন্টাখানেক অতিবাহিত হলেও কোনও ডাক্তার আসেনি। রোগী জীবিত নাকি মৃত তাও দেখার কেউ নেই। পরে, হাসপাতাল পরিচালককে ভর্তির বিষয়ে জানানো হলে চিকিৎসক এসে পর্যবেক্ষণ করে জানান আব্দুর রহমান মারা গেছেন।
ডিএনসিসি ডেডিকেটেড কোভিড-১৯ হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল এ কে এম নাসির উদ্দিন জানান, যেসব রোগী ভর্তি আছেন তাদের অবস্থা সংকটাপন্ন। অন্য রোগীকে আইসিইউ থেকে সরিয়ে তাকে ভর্তির চেষ্টা করা হয় কিন্তু তাও সম্ভব হয়নি।
একই রকমভাবে তিন তিনটি হাসপাতাল ঘুরে নারায়ণগঞ্জ থেকে মহাখালী ডিএনসিসি হাসপাতালে মাকে নিয়ে আসে ক্লাস টেন পড়ুয়া উষশী। তাকেও ফিরে যেতে হয় মায়ের মরদেহ নিয়ে।
রাজধানীর সরকারি বেসরকারি কোনো হাসপাতালেও মিলছে না আইসিইউ। যদিও স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের হিসেবে মঙ্গলবার দুপুরে রাজধানীর সরকারী হাসপাতালগুলোতে ১৪টি আইসিইউ বেড খালির রয়েছে। সেগুলোর ৬টি ডিএনসিসি ডেডিকেটেড হাসপাতালে। যদিও বাস্তবতা বলছে ভিন্ন কথা। এ অবস্থায় লোকবল ও চিকিৎসা সরঞ্জাম বাড়ানোর তাগিদ দিচ্ছে হাসপাতালগুলোর কর্তৃপক্ষ। পাশাপাশি রোগী ভর্তির আগে প্রাথমিক অক্সিজেন সাপোর্ট দেওয়ার ব্যবস্থা করা দরকার।