চক্রটি জাতীয় পরিচয়পত্রসহ নানা ভুয়া সার্টিফিকেট তৈরি করে আসছিলো দীর্ঘদিন। তাদের সাথে আরো কেউ জড়িত কিনা তা খতিয়ে দেখছে পুলিশ। করোনা পরীক্ষায় এমন প্রতারণা ঠেকাতে বিশেষ ব্যবস্থা নেয়ার সুপারিশ করেছেন বিশেষজ্ঞরা।
ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের ইএনটি বিভাগে গলায় অপারেশনের জন্য প্রায় দুই মাস বাবাকে ভর্তি রাখেন চাঁদপুরের শাহজাহান মিঝি। কয়েক দফা করোনা পরীক্ষার ফলাফল পজিটিভ আসায় বিলম্বিত হচ্ছিলো তার অপারেশন।
এমন বিড়ম্বনার মধ্যেই রাজধানীর চানখারপুল এলাকার আল মেডিক্যাল ফার্মায় ওষুধ কিনতে গেলে রফিকুল ইসলাম নামে এক ব্যাক্তির সাথে পরিচয় হয় তার। দুই হাজার টাকার বিনিময়ে করোনা পরীক্ষার কাঙ্খিত রিপোর্ট পেতে রোগীর রক্ত সংগ্রহ করে কয়েক ঘণ্টা পর নেগেটিভ রিপোর্ট দেয় রফিকুল ইসলাম। নির্ধারিত দিনে রোগীর অপারেশনের প্রস্তুতি নিতে গিয়ে চিকিৎসকরা দেখেন রিপোর্টটি ভুয়া। রোগীর কাছে গিয়ে করোনার ঝুঁকিতে পরেন ইএনটি বিভাগের বেশ কয়েক রোগী ও চিকিৎসক।
শাহজাহান মিঝি বলেন,’আমি নমুনা দিয়ে চলে গেছি, দুই তিন ঘন্টা পরে এসেছি, ওরা আমাকে রিপোর্ট দিয়েছে। পরে ডাক্তার বলেন এটা তো ভুয়া রিপোর্ট।’
বংশাল থানায় করা মামলার তদন্তে নেমে গোয়েন্দা পুলিশ আল মেডিক্যাল ফার্মায় অভিযান চালিয়ে সেখান থেকে রফিকুল ইসলামসহ প্রতারক চক্রের দুই সদস্যকে গ্রেপ্তার করে গোয়েন্দা পুলিশ। শুধু করোনা পরীক্ষার রিপোর্টই নয়, গলাকাটা পাসপোর্ট, ভুয়া জাতীয় পরিচয় পত্রসহ যেকোন ধরণের সার্টিফিকেট তৈরি করত প্রতারক চক্রটি।
ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ লালবাগ (কোতয়ালী জোনাল টিম) অতিরিক্ত উপ কমিশনার মো. সাইফুর রহমান আজাদ বলেন,’মনির যেটা করেছে, আগের করোনা রিপোর্ট নিয়ে, ঢাকা মেডিক্যালের ডিরেক্টর এবং ভাইরোলজি বিভাগের প্রধানের সিল এবং স্বাক্ষর নকল করে নতুন করে পজেটিভ এবং নেগেটিভ যে কোন রিপোর্টই বানাতো।’
গ্রেপ্তার দুজনের সঙ্গে আরও কোন ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠান জড়িত কিনা খতিয়ে দেখছে পুলিশ। লালবাগ (কোতয়ালী জোনাল টিম) ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের অতিরিক্ত উপ কমিশনার মো. সাইফুর রহমান আজাদ বলেন,’আমরা যে ডায়াগনস্টিক সেন্টরের নাম বলেছি সে বিষয়ে তদন্ত করে দেখছি, আসলে ওরা কতোটা জড়িত। এরপর এই মামলার সঙ্গে আমরা ইনকর্পোরেট করে নিব।’
এদিকে করোনা পরীক্ষা নিয়ে এমন প্রতারণা ঠেকাতে বিশেষ ব্যবস্থা নেয়ার পরামর্শ বিশেষজ্ঞদের। সংক্রমণ রোগ বিশেষজ্ঞ ডা. বে-নজীর আহমেদ বলেন,’কোন একটা প্রতিষ্ঠানকে দায়িত্ব দেয়া, যারা করোনার বিষয়ে সবকিছু মনিটরিং করবে। তাহলে আমরা এগুলো বন্ধ করতে পারবো।’
দেশে সংক্রমণের শুরুতে করোনা পরীক্ষায় অনিয়ম ধরা পড়ে। এসব ঘটনায় সাহেদ ও সাবরিনাসহ বেশ কয়েকজন এখনও কারাগারে।