যৌতুকের দাবিতে স্বামী ও শাশুড়ির দেওয়া আগুনে ঝলসে দেওয়া সেই গৃহবধূ শারমিন আকতার (২২) মারা গেছেন। তিনি ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের বার্ণ ইউনিটে চিকিৎসাধীন অবস্থায় গতকাল শুক্রবার গভীর রাতে মারা যান। তার বাড়ি গাইবান্ধা সদর উপজেলার মালিবাড়ি ইউনিয়নের কাবিলের বাজার গ্রামে।
আজ শনিবার দুপুরে গাইবান্ধা সদর থানার ওসি মো. মাহফুজার রহমান গৃহবধূর মৃত্যুর বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। গত ২৩ মার্চ যৌতুকের জন্য স্বামী-শাশুড়ি মিলে মারপিট ও শরীরে আগুন দিয়ে গৃহবধূকে ঝলসে দেয়। ঘটনার পর স্বামী কোরবান আলী (৩০) ও শাশুড়ি কুলসুম বেগমকে (৫০) গ্রেপ্তার করে পুলিশ।
এদিকে মৃত্যুর খবর ছড়িয়ে পড়ার পর এলাকায় শোকের ছায়া নেমে এসেছে। নিহত শারমিনের বাড়ি গিয়ে দেখা গেছে, তার বাবা মা ঢাকায় থাকলেও নানী শাহানূর বেগমসহ অন্যরা বুক চাপড়ে কাঁদছেন। চাচি লুসি বেগম বললেন, ওংক্যা স্বামীর ফাঁসি না হলে হামাঘরের মনত শান্তি আসপ্যা নয়।
একই কথা অন্যদের মুখেও। মামি আরিফা বেগম বললেন, হামার এ্যতো ভালো একটা বেটিক গায়োত আগুন লাগে দিল। ওই মরার আগে স্যগে কয়্যা গেছে। আমরা ওই বাড়ির সগলের শাস্তি চাই।
পুলিশ জানায়, শারমিনের মরদেহ ঢাকা থেকে রবিবার গাইবান্ধায় বাবার বাড়িতে আনা হবে। পরে তার জানাজা ও দাফন সম্পন্ন হবে।
পুলিশ জানায়, গৃহবধূ শারমিন আকতার কাবিলের বাজার গ্রামের কোরবান আলীর স্ত্রী। কোরবান আলী একই গ্রামের ইসমাইল হোসেনের ছেলে। শারমিন আকতারের বাবার বাড়ি একই ইউনিয়নের ছালামের মোড় গ্রামে। তিনি ওই গ্রামের শফিকুল ইসলামের মেয়ে। প্রায় দুই বছর আগে তাদের বিয়ে হয়। দুই মাসের একটি সন্তানও রয়েছে এই দম্পতির। বিয়ের পর থেকেই স্বামী কোরবান আলী এবং শ্বাশুড়ি কুলসুম বেগম যৌতুকের দাবিতে শারমিনকে শারীরিক ও মানসিক নির্যাতন করে আসছিলেন।
ঘটনার দিন গত ২৩ মার্চ এসব বিষয় নিয়ে স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে ঝগড়া শুরু হয়। এক পর্যায়ে শারমিনকে মারপিট করে তার স্বামী। পরে শাশুড়ি কুলসুম বেগম গৃহবধূকে ধরে রাখেন আর স্বামী কোরবান আলী গ্যাস লাইটার দিয়ে তার পড়নের কাপড়ে আগুন ধরিয়ে দেন। এতে তার শরীর ও গলার অংশ ঝলসে যায়। পরে বিষয়টি তারা ধামাচাপা দেওয়ার চেষ্টা করেন। শারমিনকে একটি ঘরে তালা বন্ধ করে রাখা হয়। প্রতিবেশীদের কাছে খবর পেয়ে ঘটনার দিন রাতেই তার স্বজনরা তাকে উদ্ধার করে গাইবান্ধা জেনারেল হাসপাতালে নিয়ে যান। সেখানে অবস্থার অবনতি হলে উন্নত চিকিৎসার জন্য তাকে ওই রাতেই রংপুর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে স্থানান্তর করা হয়। পরে তাকে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের বার্ন ইউনিটে পাঠানো হয়। সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় শুক্রবার গভীর রাতে তিনি মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়েন।
গাইবান্ধা সদর থানার ওসি মাহফুজার রহমান বলেন, পুলিশ ঘটনার রাতেই স্বামী কোরবান আলী ও শাশুড়ি কুলসুম বেগমকে গ্রেপ্তার করা হয়।