শনিবার, ২৩ নভেম্বর ২০২৪, ০৬:৪৯ পূর্বাহ্ন

‘আজও সমাজের আনাচে-কানাচে ঘোরাফেরা করছে যুদ্ধাপরাধীদের প্রেতাত্মারা’

Reporter Name
  • Update Time : বৃহস্পতিবার, ২৫ মার্চ, ২০২১

নারকীয় হত্যাযজ্ঞের কুশিলব, মানবতাবিরোধী অপরাধী ও যুদ্ধাপরাধীদের প্রেতাত্মারা আজও সমাজের আনাচে-কানাচে ঘোরাফেরা করছে উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, ‘গণহত্যা দিবসের ৫০ বছর পূর্তিতে আসুন আমরা প্রতিজ্ঞা করি- প্রয়োজনে সর্বোচ্চ আত্মত্যাগের বিনিময়ে হলেও ৩০ লাখ শহীদ ও দুই লাখ নির্যাতিত মা-বোনের সম্ভ্রমের বিনিময়ে অর্জিত স্বাধীনতাকে সমুন্নত রাখবো।’

২৫ মার্চ ‘গণহত্যা দিবস’ উপলক্ষে দেয়া এক বাণীতে প্রধানমন্ত্রী এসব কথা বলেন। শেখ হাসিনা বলেন, ‘২৫ মার্চ বাঙালির মুক্তি-সংগ্রামের ইতিহাসে “গণহত্যা দিবস”। ১৯৭১ সালের এই দিনে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী বাংলাদেশে বিশ্বের বর্বরতম হত্যাযজ্ঞ পরিচালনা করে।’

মহান স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তীর প্রাক্কালে অত্যন্ত দুঃখ ভারাক্রান্ত হৃদয়ে ২৫ মার্চের কালরাতে আত্মোৎসর্গকারী শহীদদের স্মরণ করে তিনি বলেন, ‘তাদের তাজা রক্তের শপথ বীর বাঙালিকে অস্ত্রধারণ করে স্বাধীনতা অর্জন না করা পর্যন্ত জীবন বাজি রেখে যুদ্ধ চালিয়ে যেতে অনুপ্রাণিত করেছিল।’

সরকারপ্রধান বলেন, ‘২৫ মার্চে নারকীয় হত্যাযজ্ঞের কুশিলব, মানবতাবিরোধী অপরাধী ও যুদ্ধাপরাধীদের প্রেতাত্মারা আজও সমাজের আনাচে-কানাচে ঘোরাফেরা করছে, যারা স্বাধীনতাবিরোধী পাকিস্তানের দোসরদের আমাদের মহান সংসদে বসিয়েছিল এবং তাদের গাড়িতে স্বাধীন বাংলাদেশের পতাকা তুলে দিয়ে বাঙালি জাতির গর্বিত ইতিহাসকে কলঙ্কিত করেছিল।’

তিনি বলেন, ‘আমরা আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে মানবতাবিরোধী অপরাধী ও যুদ্ধাপরাধীদের বিচার করেছি। সংবিধানে পঞ্চদশ সংশোধনীর মাধ্যমে জনগণের ভোটের অধিকার নিশ্চিত করেছি, ফলে অবৈধভাবে ক্ষমতা দখলের পথ বন্ধ হয়েছে। ২৫ মার্চকে “গণহত্যা দিবস” হিসেবে স্বীকৃতি প্রদান করেছি। গত ১২ বছরে আমরা উন্নয়নের সব সূচকে অভূতপূর্ব অগ্রগতি সাধন করেছি।’

জাতির পিতা যে অসাম্প্রদায়িক, ক্ষুধা-দারিদ্রমুক্ত ও উন্নত-সমৃদ্ধ সোনার বাংলাদেশ বিনির্মাণের স্বপ্ন দেখেছিলেন, সব ষড়যন্ত্র প্রতিহত করে মহান মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় উদ্বুদ্ধ হয়ে ঐক্যবদ্ধভাবে সেই স্বপ্ন বাস্তবায়নে কার্যকরী ভূমিকা রাখার আহ্বান জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমরা দারিদ্র্যের হার ২০.৫ শতাংশের নিচে নামিয়ে এনেছি। মাথাপিছু আয় ২ হাজার ৬৪ মার্কিন ডলারে উন্নীত করেছি। এখন আমাদের মানুষের গড় আয়ু ৭২.৬ বছর। আমরা জঙ্গিবাদ ও সন্ত্রাসবাদ নির্মূলে “জিরো টলারেন্স” নীতিতে কাজ করে যাচ্ছি। ইতোমধ্যেই বাংলাদেশকে উন্নয়নশীল দেশে উন্নীত করেছি। ২০৩০ সালের মধ্যে “টেকসই উন্নয়ন অভীষ্ট” অর্জন এবং ২০৪১ সালের মধ্যে ক্ষুধা-দারিদ্রমুক্ত উন্নত-সমৃদ্ধ বাংলাদেশ বিনির্মাণে দ্বিতীয় প্রেক্ষিত পরিকল্পনা প্রণয়ন করেছি।’

শেখ হাসিনা বলেন, ‘জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান সারাজীবন বাঙালির মুক্তি সংগ্রামের অগ্রভাগে থেকে নেতৃত্ব দিয়েছিলেন। তিনি ’৫২-র ভাষা আন্দোলন, ’৫৪-র একুশ দফা, ’৬২-র ছাত্র আন্দোলন, ’৬৬-র ছয় দফা, ’৬৯-র গণঅভ্যুত্থানসহ সকল আন্দোলন সংগ্রামে অত্যন্ত দূরদর্শিতার সঙ্গে নেতৃত্ব প্রদান করেন। তিনি মন্ত্রিত্ব ছেড়ে দলকে সুসংগঠিত ও শক্তিশালী করেছিলেন এবং সর্বোপরি পরাধীনতা থেকে চিরতরে মুক্তির লক্ষ্যে স্বাধীনতা সংগ্রামের জন্য পুরো জাতিকে প্রস্তুত করেছিলেন।’

জাতির পিতার নেতৃত্বে আওয়ামী লীগ ’৭০- এর নির্বাচনে জাতীয় পরিষদের ১৬৭টি আসন লাভ করে একক সংখ্যাগরিষ্ঠতা অর্জন করে উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘কিন্তু, পাক-সামরিক জান্তা ক্ষমতা হস্তান্তরে টালবাহানা শুরু করে। বৈঠকের মাধ্যমে সময়ক্ষেপণ করে নিরস্ত্র বাঙালি নিধনের উদ্দেশ্যে গোপন ষড়যন্ত্রে লিপ্ত হয়। ইতোমধ্যে, বঙ্গবন্ধু ২ মার্চ থেকে অসহযোগ আন্দোলন ঘোষণা করেন এবং ৭ মার্চের ঐতিহাসিক ভাষণে দীর্ঘ ২৩ বছরের শাসন-শোষণ থেকে মুক্তির লক্ষ্যে সুনির্দিষ্ট রূপরেখা প্রদান করেন।’

তিনি বলেন, ‘১৫ মার্চ থেকে অসহযোগ আন্দোলন কর্মসূচির আওতায় ৩৫ দফা নির্দেশনাবলী প্রদান করেন। বঙ্গবন্ধু প্রদত্ত নির্দেশনাবলী সারা পূর্ব বাংলায় অক্ষরে অক্ষরে পালন করা হয়। বস্তুত, তখন থেকেই বঙ্গবন্ধুর নির্দেশেই বাংলাদেশের সকল প্রশাসনিক, রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক কার্যক্রম পরিচালিত হতে থাকে। ইয়াহিয়া-ভুট্টো সমঝোতার প্রস্তাব দিতে থাকে। কিন্তু বাংলার অবিসংবাদিত নেতা ক্ষমতার মোহ ত্যাগ করে বাংলার মুক্তিকামী মানুষের পক্ষে অটল থাকেন। ২৩ মার্চ পাকিস্তান দিবসে ক্যান্টনমেন্ট ও গভর্নরের বাসভবন ছাড়া সারা দেশে বাংলাদেশের মানচিত্রখচিত বাংলাদেশের পতাকা উত্তোলন করা হয়।’

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘২৫ মার্চ ছিল অসহযোগ আন্দোলনের ২৪তম দিন। সেদিন সন্ধ্যায় ইয়াহিয়া গোপনে ঢাকা ত্যাগ করেন। রাত সাড়ে ১২টায় পাকিস্তানি সৈন্যরা সাঁজোয়া ট্যাঙ্ক নিয়ে “অপারেশন সার্চ লাইট”-এর নামে ঘুমন্ত নিরস্ত্র বাঙালিদের নির্বিচারে হত্যার আনন্দে মেতে ওঠে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, পিলখানা এবং রাজারবাগে অতর্কিত হামলা চালিয়ে ছাত্র-শিক্ষক, বাঙালি পুলিশ ও সামরিক সদস্যদের হত্যা করতে থাকে। রাত ১টা ১০ মিনিটে বঙ্গবন্ধুকে গ্রেফতার করে। এর অব্যবহিত পূর্বেই জাতির পিতা স্বাধীনতার চূড়ান্ত ঘোষণা বার্তা লিখে যান “ইহাই হয়তো আমার শেষ বার্তা, আজ হইতে বাংলাদেশ স্বাধীন। …চূড়ান্ত বিজয় অর্জন না করা পর্যন্ত লড়াই চালিয়ে যাও”। যা প্রথমে ইপিআর-এর ওয়্যারলেসের মাধ্যমে প্রচার করা হয়।’

তিনি বলেন, ‘বঙ্গবন্ধুকে পশ্চিম পাকিস্তানের মিয়াওয়ালী কারাগারে বন্দি করে দেশব্যাপী নারকীয় তাণ্ডবলীলা ও হত্যাযজ্ঞ চালাতে থাকে।

এইচ বিডি নিউজ টুয়েন্টি ফোর এ আপনাকে স্বাগতম। “সময়ের প্রয়োজনে- HBD NEWS24” নিয়ে আমরা আছি আপনার পাশে। আপনার পাশে ঘটে যাওয়া নানা সংগতি, অসংগতি আর তথ্য নিয়ে আপনিও যোগ দিন HBD NEWS 24 এ আমাদের কাছে মেইল করুন: hbdnews24@yahoo.com

More News Of This Category

© All rights reserved © 2012 HBDNEWS24

POWERED BY MH GROUP OF COMPANY.