বাংলাদেশে নারীর অর্জন অনেক, কিন্তু নারীকে তার অধিকারগুলো নানা সময়ের লড়াই সংগ্রামের মধ্য দিয়ে আদায় করে নিতে হয়েছে। তেমন এক কণ্টকময় বিশ্বে প্রতিবছর একটি দিনকে নারীর অধিকার আদায়ের নতুন শপথের জন্য নির্ধারণ করা হয়েছে। আজ সেই দিন।
৮ মার্চ আন্তর্জাতিক নারী দিবস। বিভিন্ন দেশের মতো বাংলাদেশেও বিভিন্ন সংগঠন বিভিন্ন আনুষ্ঠানিকতায় দিবসটি পালন করবে। মজুরি বৈষম্য, কর্মঘণ্টা নির্ধারণ এবং কর্মক্ষেত্রে পরিবেশের প্রতিবাদ করেন যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্কের সুতা কারখানার একদল শ্রমজীবী নারী। নানা ঘটনার পরে ১৯০৮ সালে জার্মান সমাজতান্ত্রিক নেত্রী ক্লারা জেটকিনের নেতৃত্বে প্রথম নারী সম্মেলন করা হয়। এরই ধারাবাহিকতায় ১৯৭৫ সাল থেকে জাতিসংঘ দিনটি নারী দিবস হিসেবে পালন করছে।এই স্লোগানের সঙ্গে মিল রেখে বাংলাদেশ সরকার ‘করোনাকালে নারী নেতৃত্ব, গড়বে নতুন সমতার বিশ্ব’ এই প্রতিপাদ্য নিয়ে দিবসটি পালন করছে। জাতিসংঘের এবারের নারী দিবসের স্লোগান ‘করোনা বিশ্বে নারীর প্রতি সহিংসতা বন্ধ করি, সমতা অর্জনে নারী নেতৃত্ব নিশ্চিত করি’। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, কর্মক্ষেত্রে নারীর কম অংশগ্রহণ এবং নারীর প্রতি সহিংসতা বিভিন্ন অর্জনকে ম্লান করে দিচ্ছে। তবে জোর করে কেবল সংখ্যা বৃদ্ধি করার মধ্য দিয়ে সমতা আসবে না।
অগ্রগতি শিক্ষার প্রতি
অনেকখানি নিশ্চিত করা গেছে বলে মনে করেন নারী অধিকার কর্মীরা। সরকারের শিক্ষা তথ্য ও পরিসংখ্যান ব্যুরোর ২০১৯ সালের প্রতিবেদন অনুযায়ী, প্রাথমিক শিক্ষায় মোট শিক্ষার্থীর মধ্যে ছাত্রীর হার প্রায় ৫১ শতাংশে উন্নীত হয়েছে। মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিকেও প্রায় অর্ধেক শিক্ষার্থী ছাত্রী। তবে উচ্চশিক্ষায় এখনও ঝরে পড়ার হার বেশি।
বাল্যবিবাহ
২০১৯ সালের মার্চ থেকে জুনে বাল্যবিবাহ হয়েছিল ৩৮টি। পরের বছর সেই একই সময়ে বাল্যবিবাহ বেড়েছে ছয়গুণের বেশি। গবেষণা বলছে, ৮৫ শতাংশ বাল্যবিবাহ ভবিষ্যতের অর্থনৈতিক অনিরাপত্তার জায়গা থেকে দেওয়া হয়েছে। ৭১ শতাংশ দেওয়া হয়েছে স্কুলের অনিশ্চয়তার কারণে। ৬১ শতাংশ দেওয়া হয়েছে ‘ভালো পাত্র’ সহজে পাওয়া যাওয়ার কারণে। করোনাকালে বাল্যবিবাহের হার বেড়ে যাওয়ার অন্যতম কারণ ছিল অর্থনৈতিক টানাপোড়নের সময়ে মেয়ে শিশুকে বাড়তি বোজা হিসেবে মনে করা হয়।
যা ধরণ বদলেছে সহিংসতার
জানুয়ারি থেকে নভেম্বর পর্যন্ত মোট ১ হাজার ২৪৬ নারী ধর্ষণের শিকার হন। আইন ও সালিশ কেন্দ্রের তথ্যমতে, জানুয়ারি থেকে অক্টোবর পর্যন্ত ১ হাজার ৩৪৭টি ধর্ষণের ঘটনা ঘটে। ভুক্তভোগীদের মধ্যে শিশু-কিশোরীই বেশি। বয়স ৩ থেকে ১৮ বছরের মধ্যে। ধর্ষণের ঘটনা বিশ্লেষণে দেখা যায়, কেবল ধর্ষণের মধ্য দিয়ে সহিংস আচরণের শেষ হয় না।
নারীদের দৃশ্যমানতার ইতিবাচক প্রভাব আছে ঠিকই কিন্তু সংখ্যা দিয়ে সমতার বিচার করা যাবে না। তিনি বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘এই ৫০ বছরে দু-চার জায়গায় ভাল কাজ হয়নি—তা বলা যাবে না। সম্ভাবনার জায়গা আছে। আমি ইতিবাচকভাবে দেখতে চাই। কিন্তু যা বর্তমান পরিস্থিতিতে আমরা মনে করি শূন্য থেকে ৫ শতাংশ এগিয়েছি’। বলতে গিয়ে রাজনৈতিক দলগুলোর কমিটিতে ৩৩ শতাংশ নারীর উপস্থিতির কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘নারীর সংখ্যা বাড়াতে হবে বলে বাড়ানো কোনও কাজের কথা না। নারীকে ঠিকভাবে গড়ে উঠতে দেওয়া হচ্ছে কীনা তা নিয়ে। অধিকার আদায়ের সংগঠনগুলোর প্ল্যাটফর্ম উই ক্যান এর সমন্বয়ক জিনাত আরা হক বলেন, ‘সমতার মাঠ তৈরি হওয়া সহজ না। কিন্তু হতাশ না হয়ে বারবার বলতে হবে। মাঝে মাঝে মনে হবে কিছু হচ্ছে না। কিন্তু একেবারে যে কিছুই হচ্ছে না তা তো না। নব্বইয়ের দশকে আমরা যখন যৌন সহিংসতা নিয়ে আন্দোলন করেছি যৌন শব্দটাই উচ্চারণ করা যেতো না।
সেটি এখন নানা কমিটিকে বলতে শুনছি, এবং এসব শব্দ ব্যবহারে সতর্কতা বাড়ছে।’ দেশের যখন মানবাধিকার সংকট তখন আলাদা করে নারী তার কাঙ্ক্ষিত অধিকার পাবে এমন হবার কথা না। সমতার কথা বলে যেতে হবে, থেমে থাকা যাবে না। নারী যত বেশি দৃশ্যমান হবে তত বেশি মনে হবে নির্যাতনের অবস্থা বেড়ে যাচ্ছে। পৃথিবীতে নামছে সেটা তার না, পুরুষ তার নিজের উপযোগী করে পৃথিবীটাকে তৈরি করে রেখেছে। সেটি সমতার হওয়ার কথা না।