বইমেলার ফটক খুলেছিল আগেভাগেই, বেলা ১১টায়। দুপুরের পর মেলা প্রাঙ্গণে দল বেঁধে লোকজন আসতে শুরু করেন। তুমুল আড্ডায় টিএসসির মোড় সরগরম। মেলার ভেতরে অজস্র লোকের পদচারণ। দ্বিতীয় দিনেই জমে উঠেছে অসময়ে আয়োজিত এবারের বইমেলা। তবে ভিড় থাকলেও লোকজনকে স্বাস্থ্যবিধি মেনে মাস্ক পরে মেলায় ঢুকতে দেখা গেছে।
রাজধানীর মিরপুর থেকে স্ত্রী তানিয়া হাসান ও দ্বিতীয় শ্রেণিতে পড়ুয়া মেয়ে মহসিনা হাসানকে নিয়ে মেলায় এসেছিলেন একটি বেসরকারি ব্যাংকের কর্মকর্তা শামসুল হাসান। বললেন, বইমেলা শুরু হলো আর ছুটির দিনও পাওয়া গেল। তাই বিকেলে ঘরে বসে না থেকে মেলায় চলে এসেছেন।
বেশির ভাগ লোকজনকে দেখে মনে হচ্ছিল, ছুটির বিকেলে বেড়ানোটাই প্রধান উদ্দেশ্য। করোনার কারণে লোকজন এখন কমই বেড়াতে বের হন। এমনকি আত্মীয়স্বজনের বাড়িতেও বেশি যাওয়া হয় না। বইমেলার প্রতি লোকের একটা আলাদা টান বরাবরই থাকে।
উড়ছিল সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে বইমেলার মাঠে। একে চৈত্র মাস, তার ওপর মাঠে পানি না ছিটানোয় অগুনতি মানুষের পদচারণে ধুলায় ধূসর হয়ে উঠেছিল পরিবেশ। তবে স্টল আর প্যাভিলিয়নগুলো বেশ দূরে ও ফাঁকা স্থানে থাকায় অস্বস্তি কিছুটা কম বোধ হয়।
ঘুরেফিরে দেখা গেল, অধিকাংশ স্টলেই বইপুস্তক উঠে গেলেও কিছু কিছু স্টলের সাজসজ্জার কাজ শেষ হয়নি। তা ছাড়া ঝড়-বৃষ্টি হলে লোকজনের আশ্রয়ের জন্য যে ছাউনিগুলো করা হচ্ছে, তার কাজও শেষ হয়নি। তবে বাংলা একাডেমির পক্ষ থেকে স্বাস্থ্যবিধি মেনে মেলায় প্রবেশের যে ব্যবস্থার কথা বলা হয়েছিল, তা যথেষ্ট গুরুত্বের সঙ্গেই অনুসরণ করা হচ্ছে। প্রতিটি প্রবেশপথেই দেখা গেছে দর্শনার্থীদের শরীরের তাপ মেপে প্রবেশ করতে দেওয়া হচ্ছে। তারপর হাত জীবাণুমুক্ত করার জন্য রাখা হয়েছে স্যানিটাইজার। আর প্রত্যেককেই মাস্ক ব্যবহার করতে দেখা গেছে।
মেলায় স্বাস্থ্যবিধি অনুসরণ এবং লোকসমাগম সম্পর্কে বাংলাদেশ জ্ঞান ও সৃজনশীল প্রকাশক সমিতির সভাপতি সময় প্রকাশনীর প্রকাশক ফরিদ আহমদ প্রথম আলোক বললেন, স্বাস্থ্যবিধি অনুসরণের জন্য একাডেমির নেওয়া পদক্ষেপে তাঁরা সন্তুষ্ট। অনেক লোক হয়েছে, তবে সবার মুখে মাস্ক আছে। তাঁর মতে, রাজধানীতে একমাত্র বইমেলার মাঠেই আজ শতভাগ লোকের মাস্ক ব্যবহার নিশ্চিত হয়েছে। তবে এটা অব্যাহত রাখার জন্য সতর্ক থাকতে হবে। বিক্রি সম্পর্কে তিনি বললেন, মেলা নিয়ে প্রকাশকদের আশঙ্কা ছিল। গত মেলার পর আর সারা বছর প্রকাশকদের ব্যবসা হয়নি। আর্থিকভাবে সবাই কমবেশি ক্ষতিগ্রস্ত। এ কারণে মেলার জন্য সবার প্রতীক্ষা ছিল।
কথা প্রকাশের স্টলে দেখা গেল বই সাজানো শেষ। ক্রেতারা নতুন বইগুলোর পাতা উল্টে–পাল্টে দেখছেন। এখান থেকে এবার নতুন এসেছে ওয়াসি আহমেদের মুক্তিযুদ্ধভিত্তিক উপন্যাস ‘বরফ কল’। বিক্রেতারা জানালেন, মেলার প্রথম পর্যায় হিসেবে বিক্রি মন্দ নয়। ইউপিএল থেকে আসা নতুন বইয়ের মধ্যে উল্লেখযোগ্য ছিল সদ্য প্রয়াত রাজনীতিবিদ মওদুদ আহমদের ‘সেনা সমর্থিত অন্তর্বর্তীকালীন সরকার (২০০৭-২০০৮)’।
প্রথমার নতুন বই
প্রকাশনীর প্যাভিলিয়নে নতুন বই আসতে শুরু করেছে মেলার প্রথম দিন থেকেই।
চারপাশ খোলা প্যাভিলিয়নের চারদিকেই গ্রন্থানুরাগীদের দেখা গেছে পছন্দের বই বেছে নিতে। শুক্রবার এসেছে শেখ আবদুল হাকিমের রহস্য-রোমাঞ্চ উপন্যাস ‘সোনালি পোকা’। পোকাগুলো চেনা এই জগতের নয়। বিস্ময়করভাবে এদের গঠনে প্রোটোপ্লাজমের কোনো অস্তিত্বই নেই। ধীরে ধীরে টের পাওয়া গেল, এরা শুধু অমূল্যের পরিবার নয়, পুরো পৃথিবীর জন্যই হুমকি।
এ ছাড়া আবীর শওকত হায়াতের ‘অফিস পলিটিকস’।