সিটি করপোরেশনের নির্ধারিত স্থানে পশু জবাই করতে স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করেন না কোরবানিদাতারা। তাই গত বছর থেকেই নির্দিষ্ট স্থানে পশু জবাই বন্ধ করে দেয় দক্ষিণ সিটি করপোরেশন (ডিএসসিসি)। গত বছর উত্তর সিটি করপোরেশন (ডিএনসিসি) ৩০৭টি স্থান নির্ধারণ করে দিলেও সেখানে সাড়া মেলেনি। তাই এবার নির্দিষ্ট স্থানের তালিকা করা হলেও শেষ মুহূর্তে সেটি অনুমোদন দেওয়া হয়নি।
তবে পরীক্ষামূলকভাবে কয়েকটি স্থানে সেটি চালু রাখা হবে বলে জানিয়েছে ডিএনসিসি।
সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, পশু জবাইয়ের নির্দিষ্ট স্থান দূরে হওয়ার কারণে অনেকে সেখানে যান না। এ ছাড়া পরিবারের সামনে পশু কোরবানি দেওয়ার আনন্দ থেকে বঞ্চিত হতে চান না অনেকে। এমন পরিস্থিতিতে স্থান নির্দিষ্ট করে দেওয়ার ব্যয় অহেতুক বাড়াতে নারাজ দুই সিটির কর্তাব্যক্তিরা। নির্দিষ্ট স্থানে ত্রিপল, শামিয়ানা টানানোসহ অনেক টাকা খরচ হলেও সেটি কাজে আসে না বলে তাঁরা সরে এসেছেন নির্দিষ্ট স্থানে পশু জবাইয়ের সিদ্ধান্ত থেকে। তবে এবার রাজধানীতে প্রায় চার লাখ ১০ হাজার পশু কোরবানি দেওয়া হতে পারে, সেই বিবেচনায় পশুর বর্জ্য সরানোর জন্য ব্যাপকভাবে প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে দুই সিটির পক্ষ থেকেই।
ডিএনসিসি সূত্র জানিয়েছে, ঈদের দিন ও পরের দিন বর্জ্য ব্যবস্থাপনায় ৯ হাজার ৯০০ লোকবল কাজ করবে। বর্জ্য সরাতে নিজস্ব ১৫০টি ডাম্প ট্রাক বা খোলা ট্রাক, ৪৭টি ভারী যান এবং ১০টি পানির গাড়ি থাকবে। এ ছাড়া ওয়ার্ডভিত্তিক বর্জ্য সংগ্রহের কাজে ভাড়ায় নিয়োজিত ১০৮টি পিকআপ কাজ করবে প্রথম দিন। দ্বিতীয় দিন কাজ করবে ৫৪টি পিকআপ। পরিবেশের ক্ষতি করে এমন পলিথিন যাতে কেউ ব্যবহার না করে, সে জন্য পাঁচ লাখ ব্যাগ দেওয়া হবে কোরবানিদাতাদের। স্যাভলন দেওয়া হবে চার হাজার ৩৩০ লিটার। এ ছাড়া বিতরণ করা হবে ৫৩ মেট্রিক টন ব্লিচিং পাউডার। এসব কাজ তদারক করবে ১০টি তদারকি দল। আর একটি কেন্দ্রীয় নিয়ন্ত্রণ কক্ষ থেকে সব নিয়ন্ত্রণ করা হবে।
বর্জ্য ব্যবস্থাপনার বিষয়ে ডিএনসিসি মেয়র মো. আতিকুল ইসলাম বলেন, ‘ভালোবাসার এক দিন, নগরকে ভালোবাসি প্রতিদিন’—এই স্লোগান ধারণ করে ১২ ঘণ্টার মধ্যেই আশা করি নগরী পরিষ্কার করতে পারব। নগরবাসীর সুবিধার জন্য ঈদের আগে-পরে তিন দিন প্রয়োজনীয় কর্মকর্তা-কর্মচারীদের ছুটি বাতিল করা হয়েছে।
ডিএনসিসির প্রধান বর্জ্য ব্যবস্থাপনা কর্মকর্তা কমোডর এস এম শরীফ-উল ইসলাম বলেন, ‘গত বছর মেয়র মহোদয় ২৪ ঘণ্টার সময় দিয়েছিলেন বর্জ্য সরানোর জন্য। এবার তিনি ১২ ঘণ্টার মধ্যে সব করতে বলেছেন। ওভাবেই আমরা নিজেদের কর্মপরিকল্পনা করছি। ’
কোরবানির পশু নির্দিষ্ট স্থানে জবাইয়ের বিষয়ে তিনি বলেন, ‘এবার সব জায়গায় কোরবানির স্থান নির্ধারণ করা যায়নি। ৭ নম্বর ওয়ার্ডের রূপনগর, নিকুঞ্জ, বারিধারা এ ব্লক—এই কয়টি স্থানে পরীক্ষামূলক কোরবানির নির্দিষ্ট স্থান করা হয়েছে। ’
ডিএসসিসি সূত্র জানিয়েছে, ঈদের দিন ২৪ ঘণ্টার মধ্যে এবং দ্বিতীয় দিন ১২ ঘণ্টায় বর্জ্য সরানোর প্রস্তুতি নেওয়া হচ্ছে। প্রায় ৯ হাজার কর্মী এই কর্মযজ্ঞে অংশ নেবেন। পরিচ্ছন্নতার কাজে দক্ষিণ সিটির নিজেদের ময়লার গাড়ি ছাড়াও রাজউক, ওয়াসাসহ কয়েকটি সংস্থা থেকে নেওয়া মোট ৩০০ গাড়ি কাজ করবে। কোরবানিদাতাদের মধ্যে ২৫ মেট্রিক টন ব্লিচিং পাউডারসহ বিতরণ করা হবে পরিবেশবান্ধব এক লাখ ২০ হাজার পলিথিন। স্যাভলন দেওয়া হবে ৫৪০ লিটার। ময়লা নেওয়ার পর পশু জবাইয়ের জায়গাটি পরিষ্কারের জন্য মাঠে থাকবে ১২ টন পানির গাড়ি।
ডিএসসিসির প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা ফরিদ আহাম্মদ বলেন, কোরবানির বর্জ্য ব্যবস্থাপনা সঠিকভাবে করতে নিরবচ্ছিন্নভাবে কাজ করা হবে।
সূত্রে জানা যায়, নির্দিষ্ট স্থানে পশু জবাইয়ের বিষয়টি এবারও ডিএসসিসির বোর্ডসভায় উঠানো হয়। তবে সেখানে বেশির ভাগ কাউন্সিলর জানান, কোরবানিদাতারা নির্দিষ্ট স্থানে আসেন না। তাই বোর্ডের অনুমতিক্রমে সেটি বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে।
ডিএসসিসির ২৪ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর মোকাদ্দেস হোসেন জাহিদ বলেন, ‘নির্দিষ্ট স্থানে কোরবানির পশু জবাইয়ের নির্দেশনা দিয়ে কোনো কাজ হয় না। সবাই নিজের বাসার নিচে, ছাদের ওপরে, বাড়ির সামনে অথবা আশপাশের খালি জায়গায়ই পশু জবাই করে। এ জন্য গত বছরও পশু জবাইয়ের নির্দিষ্ট স্থান রাখা হয়নি। এবারও একই রকম আছে।