সিদ্ধিরগঞ্জে বিহারি ক্যাম্পে রোববার রাতে পুলিশের অভিযানের প্রতিবাদে সড়ক অবরোধ করার ঘটনায় পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষ হয়েছে আটকেপড়া বিহারিদের। এ সময় পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে র্যা ব পুলিশ যৌথ অভিযান চালায়।
পুলিশকে লক্ষ্য করে বৃষ্টির মতো ইটপাটকেল নিক্ষেপ করে বিহারিরা। এ সময় পুলিশ লাঠিচার্জ, টিয়ারশেল ও শটগানের গুলি করে তাদের ছত্রভঙ্গ করে। এতে অন্তত ১৫-২০ জন আহত হয়েছেন।
সোমবার (১৩ জুন) সকালে নারায়ণগঞ্জের সিদ্ধিরগঞ্জের আদমজী বিহারি কলোনি এলাকায় এ ঘটনা ঘটে।
বিহারিরা অভিযোগ করেন, এর আগে রোববার (১২ জুন) দিবাগত রাতে বিহারি ক্যাম্পে অভিযান চালিয়ে ৩০ জনকে গ্রেফতার করে নিয়ে যায় পুলিশ।
পুলিশ ও প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, রোববার মধ্যরাত থেকে সোমবার ভোর পর্যন্ত পুলিশ আদমজী বিহারি ক্যাম্পে অভিযান চালায়। ওই সময় পুলিশ অন্তত ৩০ জন বিহারিকে গ্রেফতার করে থানায় নিয়ে আসে। তারই পরিপ্রেক্ষিতে সোমবার ভোর থেকে সিদ্ধিরগঞ্জ থানা কার্যালয়ের আশপাশে অবস্থান নেয় বিহারিরা।
একই সময় বিহারিরা আদমজী ইপিজেডের প্রবেশ পথগুলোতে অবস্থান নিয়ে ব্যারিকেড সৃষ্টি করে। বিহারিরা এ সময় শ্রমিকদের ভেতরে ঢুকতে দিলেও কোনো গাড়ি ঢুকতে বাধা দিচ্ছিল না। সকাল ৮টার দিকে বিপুল সংখ্যক নারী-পুরুষ সিদ্ধিরগঞ্জ থানা কার্যালয়ের সামনে অবস্থান করে থানার প্রধান ফটকের সামনে। এ সময় তারা বিক্ষোভও করতে থাকে। তারা সড়কের উপর কাঠ, হকারদের কাঠের টেবিল, চকি ফেলে যানবাহন চলাচলে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করে।
এ সময় পুলিশের পক্ষ থেকে বলা হয়- অভিযানে যদি কোনো নিরপরাধ মানুষ আটক হয়ে থাকে আলোচনার মাধ্যমে তাকে ছেড়ে দেওয়া হবে। কিন্তু বিক্ষোভকারীরা দাবি করতে থাকে সবাইকে ছেড়ে দেওয়ার। এ নিয়ে পুলিশের সঙ্গে তর্কে জড়িয়ে পড়ে আন্দোলনরত বিহারিরা।
একপর্যায়ে সকাল ৯টার দিকে পুলিশ ও র্যা ব তাদের ছত্রভঙ্গ করতে অভিযান চালায়। এ সময় পুলিশ ও র্যা বের সঙ্গে সংঘর্ষে জড়ায় বিহারিরা। উভয়ের মধ্যে ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়ার সময় পুলিশকে লক্ষ্য করে বিহারিরা ইট-পাটকেল নিক্ষেপ করতে থাকে। পুলিশ লাঠিচার্জ, টিয়ারশেল ও শটগানের গুলি ছুড়ে তাদের ছত্রভঙ্গ করে দেয়। সোয়া ৯টার দিকে সড়কে যানবাহন চলাচল শুরু করে।
পরবর্তীতে থেমে থেমে বিহারি ক্যাম্পের অভ্যন্তরে ও আশপাশের রাস্তা, গলিতে বিহারিরা আন্দোলন করতে থাকলে পুলিশ তাদের ছত্রভঙ্গ করে দেয়। একপর্যায়ে নাসিক ৬নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর মতিউর রহমান মতি ঘটনাস্থলে গিয়ে তাদের সঙ্গে আলোচনা করে শান্ত করেন।
আদমজী বিহারি ক্যাম্পের চেয়ারম্যান লিয়াকত হোসেন জানান, শুক্রবার জুমার নামাজের সময় শাহী মসজিদে পুলিশের ওপর হামলার ঘটনায় রোববার রাত থেকে সোমবার ভোর পর্যন্ত বিপুল সংখ্যক পুলিশ আমাদের ক্যাম্পে (বিহারি ক্যাম্প) অভিযান চালায়। পুলিশ অনেক নারী-পুরুষকে মারধর করেছে। আবার ঘটনার সময় মসজিদে যায়নি এবং হামলায় ছিল না- এমন লোকদেরও গ্রেফতার করেছে। এ ঘটনায় ক্যাম্পের অধিবাসীরা ক্ষিপ্ত হয়ে উঠে। পরে আমি থানায় ঘিয়ে বিষয়টি ডিউটি অফিসারকে জানিয়ে চলে আসি।
তিনি বলেন, ওসি সাহেবকে ফোন করার পরও তিনি রিসিভ করেননি। পরে ওসি সাহেব আমাকে ফোন দিয়ে থানায় আসতে বলেন। সকাল ৭টার দিকে আমি থানায় যাই। কিন্তু সেখানে গিয়ে দেখি আমার ক্যাম্পের অনেক মানুষ থানার সামনে অবস্থান করছেন। ওসি সাহেব তখন বলেন রাতে অভিযানে কোনো নিরপরাধ লোক আটক হয়ে থাকলে আলোচনার মাধ্যমে ছেড়ে দেওয়া হবে; কিন্তু ক্যাম্পের লোকজনের দাবি সবাইকে ছেড়ে দিতে হবে।
শুক্রবার (১০ জুন) জুমার নামাজের সময় আদমজী শাহী মসজিদে সিদ্ধিরগঞ্জ থানার এসআই সৈয়দ আজিজুল হকের ওপর হামলার ঘটনায় হামলাকারীদের গ্রেফতারের জন্য রোববার রাতে বিহারি ক্যাম্পে অভিযান চালানো হয়। এর আগে শনিবার (১১ জুন) সিদ্ধিরগঞ্জ থানার এসআই মির্জা শহিদুল ইসলাম বাদী হয়ে ৫০ জনের নাম উল্লেখ করে ১২০-১২৫ জনকে অজ্ঞাত আসামি করে মামলা দায়ের করেছেন। এ মামলার আসামি ধরতেই রোববার রাতে অভিযানে নামে পুলিশ।
সিদ্ধিরগঞ্জ থানার ওসি মশিউর রহমান জানান, পরিস্থিতি আপাতত নিয়ন্ত্রণে আছে।