রবিবার, ২৪ নভেম্বর ২০২৪, ০১:৫৯ পূর্বাহ্ন

চালকের সহকারী যা বলছেন, ৪ জনকে মেরে নিজেও নিহত

Reporter Name
  • Update Time : মঙ্গলবার, ৭ জুন, ২০২২

দুর্ঘটনাকবলিত সেইফ লাইন পরিবহনের বাসচালক ঘুমের ঘোরে বাসটি চালাচ্ছিলেন বলে দাবি করেছেন চালকের সহকারী তানভীর আহমেদ সুলতান। চোখে পানিতে বললেও চালক কথা শুনেননি বলেও অভিযোগ তার।

মঙ্গলবার সকালে সাভার এনাম মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে গিয়ে তার সঙ্গে কথা বলে এই তথ্য জানা যায়। রবিবার (৫ জুন) ঘটনার দিন স্থানীয়দের সহযোগিতায় সেই সেইফ লাইন বাসের হেলপার তানভীর আহমেদ হাসপাতালে ভর্তি হন।

এখনো চিকিৎসাধীন রয়েছেন তিনি। তার বাম হাত ভেঙে গেছে ও ডান পায়ের রগ কেটে গেছে। তানভীর আহমেদ পটুখালি জেলার বাসিন্দা। বর্তমানে রাজধানীর মিরপুর এক নম্বরে বসবাস করে আসছেন। দীর্ঘদিন ধরে পরিবহনে হেলপার হিসেবে কাজ করছেন।

তানভীর আহমেদ বলেন, ’ড্রাইভার নতুন, কিছুই বোঝে না। আমি বলে বলে বুঝাইছি। কুষ্টিয়া থেকেই কয়েক বার ঝিমুনি দিছে। আমি কয়েকবার ঝাড়ি দিছে। একটু আস্তে চালান গাড়ি। উল্টা আমাকে বকা দিয়ে বলে গাড়ি কি তুই চালাস নাকি আমি চালাই? তবুও আমি বলি ঘুমানোর কিছু নাই। আস্তে ধীরে চালান ওস্তাদ। লাগলে চোখে পানি দিয়ে চালান। এভাবে পুরো রাস্তা চালাতে চালাতে আসছে। পরে বলিয়ারপুরে আসলে, শুধু কমু ডাইনে লও। এর আগেই বামে মাইরা দিছে। পরে ডান পাশে ট্রাককে মাইরা দিয়া ওই পাশের রাস্তায় গিয়া স্টাফ বাসরে মাইরা দিছে। বাসের লোহার গ্রিলের সঙ্গে ধাক্কা লাইগা আমার ডান হাত ভেঙে গেছে ও গ্লাসের কাচের সাথে ডান পায়ের রগ কেটে গেছে। আমাকে ওইদিন আহত অবস্থায় কিছু লোক একটা পিকআপে তুইলা দিছে। এরপর আর কিছু মনে নাই। ড্রাইভারের ঘুমের জন্য এইটা হইছে। সারা রাস্তাই ঘুমাইতে ঘুমাইতে আইছে। ’

তিনি আরো বলেন, ’বাসটা বাম পাশে বাড়ি লাগার পর ড্রাইভার তো স্ট্রিয়ারিংয়েই ছিলো। বাড়ি লাগার পর ডাইনে নাকি বামে ঘুরাবে হুশ ছিলো না। আমি তখন চিন্তা করি আমি কিভাবে বাঁচতে পারি। বাসের পিছনের দিকে দৌড় দিতে গেলে সামনেই লোহার গ্রিলের সাথে বাড়ি খাই। দেখি চালক সিটারিংয়ে পড়ে আছে। ড্রাইভার ঘুমের তালে স্টিয়ারিং ছেড়ে দিছিলো। ’

তানভীর আহমেদ বলেন, বাসটি ঢাকা-কুষ্টিয়া-শৈলকুপা রুটে চলাচল করত। গত শনিবার সকালে আমরা যাত্রী নিয়ে ঢাকার গাবতলী থেকে শৈলকুপার উদ্দেশে ছেড়ে যাই। গাড়িটি চালাচ্ছিলেন মারুফ হোসেন মুন্না (২৪)। ওই দিন রাত সাড়ে ৯টার দিকে আমরা শৈলকুপায় গিয়ে পৌঁছাই। কিছুক্ষণ পর ৪০ জন যাত্রী নিয়ে আমরা ঢাকার উদ্দেশে শৈলকুপা ছাড়ি।

সাভারের বলিয়াপুর এলাকায় রবিবার (০৫ জুন) দুটি বাস ও একটি ট্রাকের সংঘর্ষে তিন বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তাসহ চারজন নিহত হয়। স্থানীয়রা চালক মারুফ হোসেন মুন্নাকে উদ্ধার করে ঢাকার সোহরাওয়ার্দী মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে গেল কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন। পরে ঢাকার শেরেবাংলা নগর থানা সুরহাতাল করে মরদেহ ময়নাতদন্ত শেষে পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হয়। নিহত চালক মারুফ হোসেন মুন্না চাঁদপুর জেলার শাহারাস্তি থানার বোয়ালিয়া গ্রামের মোস্তাফা কামালের ছেলে। মিরপুর দারুস সালামের লালকুটি এলাকায় বসবাস করতেন।

বিআরটিএর সাভার কার্যালয়ের কর্মকর্তারা জানান, বলিয়ারপুরে দুর্ঘটনার জন্য দায়ী সেইফ লাইন নামের বাসটির রেজিস্ট্রেশন নম্বর ঢাকা মেট্টো-ব-১৪-৫৮৭৮। বিআরটিএর কাছে থাকা তথ্য অনুসারে বাসটির সড়কে চলাচলের অনুমতি (রোড পারমিট) নেই। এ ছাড়া বাসটির ফিটনেসের মেয়াদ ২০১৪ সালের ১৬ জুলাই এবং ট্যাক্সের মেয়াদ ২০১৫ সালের ২৪ মে শেষ হয়েছে।

দুর্ঘটনায় নিহত বৈজ্ঞানিক পূজা সরকারের দেবর স্কুলশিক্ষক সপ্তক নন্দী বলেন, ’যাকে হারিয়ে তাকে ফিরে পাবো না। পুলিশকে বলেছি আইনের সর্বোচ্চ ব্যবস্থা নিতে। পুলিশও বারবার আশ্বস্ত করেছে দোষীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। ওই বাসের বৈধ কাগজপত্র নেই বলে আমরা শুনেছি। ফলে সেটির মালিক কোন ভাবে দায় এড়াতে পারেন না। ’

মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা ও সাভার হাইওয়ে থানার এসআই গোলাম মোস্তাফা বলেন, সেইফ লাইন বাসের হেলপার হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছে। তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছে। যেহেতু তিনি মামলার আসামি নন। তাই তাকে আটক করা হয়নি। মূল আসামি ছিলেন বাসের চালক মারুফ হোসেন মুন্না। তিনি তো ঘটনার দিনই মারা গেছেন। হেলপার তানভীরকে জিজ্ঞাসাবাদে জানতে পেরেছি, ঢাকা কাছে চলে আসলে অনেকটাই যাত্রী শূন্য হয়ে পড়ে।

চালক মারা যাওয়ার খবরটি পেয়েছেন পরদনি এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, শেরেবাংলা নগর থানা বিষয়টি আগে আমাদের জানাননি। নিয়ম অনুযায়ী ঘটনা যে এলাকায় ঘটেছে, সেখানকার থানাকে বিষয়টি অবহিত করা উচিত ছিল।

বাসের মালিককে আসামি না করার প্রসঙ্গে এই পুলিশ কর্মকর্তা বলেন, ‘প্রথমে আমাদের নিশ্চিত হতে হবে বাসটির বৈধ কাগজপত্র ছিল কি না। সেটি না থাকলে মালিক মামলার আসামি হয়ে যাবেন। ’

প্রসঙ্গত, গত রবিবার সকাল ৯টার দিকে সাভারের বলিয়ারপুরে ‘সেইফ লাইন পরিবহনের’ বাসটি মহাসড়কে দাঁড়িয়ে থাকা অপর একটি বাসকে ধাক্কা দিয়ে সড়ক বিভাজকের ওপর উঠে যায়। এ সময় পেছন থেকে আসা একটি গরুবোঝাই ট্রাক ওই বাসকে ধাক্কা দিলে বাসটি সড়কের ওপর আড়াআড়ি দাঁড়িয়ে যায়। ঠিক তখনই ঢাকার দিক থেকে আসা সাভারগামী বাংলাদেশ পরমাণু শক্তি কমিশনের একটি স্টাফবাস সেইফ লাইন পরিবহনের বাসে সজোরে ধাক্কা মারে। এতে পরমাণু শক্তি কমিশনের বিজ্ঞানীসহ প্রতিষ্ঠানের ৪ জন নিহত হন।

এইচ বিডি নিউজ টুয়েন্টি ফোর এ আপনাকে স্বাগতম। “সময়ের প্রয়োজনে- HBD NEWS24” নিয়ে আমরা আছি আপনার পাশে। আপনার পাশে ঘটে যাওয়া নানা সংগতি, অসংগতি আর তথ্য নিয়ে আপনিও যোগ দিন HBD NEWS 24 এ আমাদের কাছে মেইল করুন: hbdnews24@yahoo.com

More News Of This Category

© All rights reserved © 2012 HBDNEWS24

POWERED BY MH GROUP OF COMPANY.