সরাইলের ব্যবসায়ী নজির আহমেদ সাপু হত্যার দুই ঘণ্টার মধ্যে থানায় অভিযোগ দায়ের হওয়ায় শুরু থেকেই পুলিশের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন ওঠে। এবার সরাসারি অভিযোগ উঠেছে পুলিশের বিরুদ্ধে। ঘটনার আগে নজির আহমেদকে পুলিশ টেনে-হিঁচড়ে অন্যদের সঙ্গে এক হয়ে নির্যাতন করে হত্যা করে বলে আদালতে দায়েরকৃত অভিযোগে উল্লেখ করা হয়েছে।
নজির আহমেদের স্ত্রী শিরীন সুলতানা রিমার দায়ের করা মামলায় দুই পুলিশ কর্মকর্তাসহ ১৫ জনের নাম উল্লেখ করে আসামি করা হয়েছে।
এছাড়া অজ্ঞাত আরো ৪-৫ জনকে আসামি করা হয়। বিজ্ঞ জেলা ও দায়রা জজ শারমিন সুলতানা নিগার ব্রাহ্মণবাড়িয়ার পুলিশ সুপারকে মামলাটি তদন্তের নির্দেশ দিয়েছেন। আজ বুধবার এ আদেশ সম্পর্কে নিশ্চিত হওয়া গেছে।
গত রবিবার নজির আহমেদ সাপুর স্ত্রী শিরীন সুলতানা রিমার মামলায় অভিযুক্ত দুই পুলিশ সদস্য হলেন- সরাইল থানার এসআই সাইফুল ইসলাম ও এএসআই সাইফুল ইসলাম। তাদের বিরুদ্ধে নির্যাতন ও হেফাজতে মৃত্যু নিবারণ আইন (২০১৩) এর অভিযোগ আনা হয়। বাদী পক্ষে মামলা পরিচালনা করছেন অ্যাডভোকেট মো. নাছির মিয়া। তাকে সহায়তা করছেন জেলা আইনজীবী সমিতির সভাপতি অ্যাডভোকেট তানবীর ভূঁইয়া, অ্যাডভোকেট সৈয়দ মো. জামাল, অ্যাডভোকেট আখতার হোসেন সাঈদ, অ্যাডভোকেট অসীম কুমার বর্দ্ধন, অ্যাডভোকেট আবদুন নূর প্রমুখ।
এর আগে ঘটনার দিন রাতেই নজির আহমেদের ভাই জাফর আহমেদ বাদী হয়ে সরাইল থানায় মামলা দায়ের করেন। নজির আহমেদ মৃত্যুর দুই ঘণ্টার মধ্যেই থানায় মামলাটি দায়ের হলে এ নিয়ে প্রশ্ন ওঠে। নজির আহমেদের পরিবারের পক্ষ থেকে অভিযোগ করা হয় যে, পুলিশ নিজেই লিখে দিয়ে তড়িঘড়ি করে এ মামলাটি নথিভুক্ত করেন।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, মমতাজ বেগম নামে এক নারীর সঙ্গে নিজ সরাইল গ্রামের নজির আহমেদের পরিবারের বিরোধ ছিল। এ ঘটনাকে কেন্দ্র করে ২১ এপ্রিল রাতে জুম্মান নামে এক যুবক নজির আহমেদের ঘরে প্রবেশ করেন। এ সময় জুম্মানকে আটক করা হলে নজির আহমেদের ওপর হামলা হয়। পুলিশ এসে দু’জনকেই থানায় নিয়ে যায়। পরে নজির আহমেদের মৃত্যুর খবর পাওয়া যায়।
আদালতে দায়ের করা মামলায় শিরীন সুলতানা রিমা অভিযোগ করেন, জুম্মানসহ আরো কয়েকজন আসামি নজির ও তার স্ত্রীকে হুমকি দেন যে, নালিশা বাড়িতে বসবাস করতে হলে তাদের ৫০ লাখ টাকা চাঁদা দিতে হবে। না হলে বাড়ি ছেড়ে দিতে হবে। এরই ধারাবাহিকতায় ঘটনার দিন ২১ এপ্রিল রাত আনুমানিক সাড়ে ৯টায় আসামি জুম্মান ব্যবসায়ী নজির আহমেদের ঘরে অসৎ উদ্দেশ্যে প্রবেশ করলে টের পেয়ে নজির তাকে আটক করেন। এ সময় প্রতিপক্ষের লোকজন জুম্মানকে ছাড়িয়ে নিতে নজিরের বাড়িতে হামলা করে। খবর পেয়ে পুলিশ এসে জানতে চান কেন জুম্মানকে আটক করা হয়েছে। পুলিশ নজিরের কোনো কথা না শুনেই জুম্মানের সঙ্গে তাকেও টেনে-হিঁচড়ে থানায় নিয়ে যায়। খবর পেয়ে নজিরের স্বজনরা থানায় গিয়ে জানতে পারেন নজিরকে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। সেখানে গিয়ে তারা নজিরকে মৃত দেখতে পান। ওই সময় কর্তব্যরত চিকিৎসক মন্তব্য করেন,০ হাসপাতালে নেওয়ার আগেই নজিরের মৃত্যু হয়েছে।