সম্ভাবনাময় থ্রি-লেয়ার সার্জিক্যাল মাস্ক রপ্তানি আশঙ্কাজনক হারে কমে গেছে। গত ২০২০-২১ অর্থবছরের ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত আট মাসে বাংলাদেশ থেকে যেখানে এক কোটি ১৮ লাখ মার্কিন ডলার বা ১০৩ কোটি টাকার সার্জিক্যাল মাস্ক রপ্তানি হয়েছে, সেখানে চলতি অর্থবছরের একই সময়ে দুই লাখ ডলার বা এক কোটি ৮২ লাখ টাকার মাস্ক রপ্তানি হয়।
এ সময় রপ্তানি কমেছে ৯৮ শতাংশের বেশি। এন-৯৫, কেএন-৯৫-এর মতো সর্বোচ্চমানের ওভেন মাস্ক রপ্তানি যেখানে ১৫৫ শতাংশ প্রবৃদ্ধি হয়েছে, সে সময় হঠাত্ করে সার্জিক্যাল মাস্কের রপ্তানিতে এমন ধসে হতাশ উদ্যোক্তারা।
জানা গেছে, চীনের সঙ্গে দামের প্রতিযোগিতায় পিছিয়ে পড়ার কারণে বিশ্ববাজারে সার্জিক্যাল মাস্ক রপ্তানিতে পিছিয়ে পড়েছে বাংলাদেশ।
বাংলাদেশ রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর (ইপিবি) তথ্য বিশ্লেষণে দেখা যায়, গত ২০২০-২১ অর্থবছরের ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত অর্থবছরের আট মাসে বাংলাদেশ থেকে ৬২ কোটি ৭৬ লাখ ডলার বা পাঁচ হাজার ৪৬০ কোটি টাকার বেশি ব্যক্তিগত সুরক্ষাসামগ্রী (পিপিই) রপ্তানি হয়েছে, যা গত বছরের একই সময়ের চেয়ে ২২ কোটি ৪৪ লাখ ডলার বেশি। এ খাতে প্রবৃদ্ধি হয়েছে ৫৫.৬৪ শতাংশ। এর মধ্যে পিপিই গাউন রপ্তানি হয়েছে ৩০ কোটি ৪৫ লাখ ডলার। গত বছর একই সময়ে পিপিই গাউন রপ্তানি হয়েছিল ১৯ কোটি ৭৭ লাখ ডলার। গাউন রপ্তানিতে প্রবৃদ্ধি হয়েছে ৫৪ শতাংশ। পিপিই গাউন রপ্তানির ৯ কোটি ১৫ লাখ ডলার বা ৩০ শতাংশই গেছে জার্মানিতে।
তবে সবচেয়ে বেশি প্রবৃদ্ধি হয়েছে বিশেষায়িত মাস্ক রপ্তানিতে। গত আট মাসে বাংলাদেশ থেকে এন-৯৫, কেএন-৯৫, এফএফপি-২, পি-২, ডিএসের মতো বিশেষায়িত ওভেন মাস্ক রপ্তানি হয়েছে ১৯ কোটি ৮৫ লাখ ডলার। অথচ আগের অর্থবছরের একই সময়ে বিশেষায়িত মাস্ক রপ্তানি হয়েছিল সাত কোটি ৭৮ লাখ ডলার। চলতি অর্থবছরে এ খাতে প্রবৃদ্ধি হয়েছে ১৫৫ শতাংশের বেশি। মোট ৪৮টি দেশে এই মাস্কগুলো রপ্তানি হলেও এর বেশির ভাগ গেছে সংযুক্ত আরব আমিরাতে। এই একটি দেশেই রপ্তানি হয়েছে ১৮ কোটি ৫৮ লাখ ডলারের মাস্ক।
করোনাভাইরাস বিশ্বব্যাপী অতিমারি আকারে ছড়িয়ে পড়তে শুরু করলে স্বাস্থ্য সুরক্ষায় পিপিই সামগ্রী সংগ্রহে প্রতিযোগিতা শুরু হয় বিশ্বজুড়ে। এই সুযোগে বাংলাদেশে পিপিই পণ্য উত্পাদন ও রপ্তানির সম্ভাবনাময় খাত হিসেবে গুরুত্ব পেতে শুরু করে। বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের অধীন এক্সপোর্ট কম্পিটিটিভনেস ফর জবস (ইসিফোরজে) প্রকল্পের আওতায় পিপিই উত্পাদনে অর্থায়ন নিয়ে বিশ্বব্যাংকের এগিয়ে আসায় এ খাতে বিনিয়োগ গতি পায়। বিশ্বব্যাংক এ জন্য ১৭.৫ মিলিয়ন মার্কিন ডলার সহায়তা প্রদান করার ঘোষণা দেয়। অনুদান পাওয়া যাবে ৫০ হাজার থেকে পাঁচ লাখ মার্কিন ডলার পর্যন্ত। করোনা পরিস্থিতি মোকাবেলায় এর মাধ্যমে ব্যক্তিগত সুরক্ষাসামগ্রী (পিপিই) উত্পাদন, ডায়াগনস্টিক ইকুইপমেন্ট ও ক্লিনিক্যাল ইকুইপমেন্ট তৈরিতে যুক্ত উদ্যোক্তারা ঋণ নিতে পারবেন।
চাহিদার বিষয়টি মাথায় রেখে চট্টগ্রামের স্মার্ট গ্রুপ আলাদা করে বিশেষায়িত মাস্ক কারখানা চালু করেছে। চট্টগ্রামের অক্সিজেন এলাকায় স্থাপিত অ্যাপারেল প্রমোটারস লিমিটেড নামের দেশের বৃহত্তম মাস্ক তৈরির কারখানায় সার্জিক্যাল মাস্ক ছাড়াও এন-৯৫, কেএন-৯৫ এবং এফএফপি-২-এর মতো সর্বোচ্চমানের মাস্ক তৈরির পাশাপাশি সু কভার, হেড কভার ও গাউনও তৈরি করা হচ্ছে। আন্তর্জাতিক সনদ নিয়ে ২০২০ সালের জুন-জুলাই থেকে কারখানায় মাস্ক তৈরি হচ্ছে জানিয়ে কারখানাটির মহাব্যবস্থাপক গিয়াস উদ্দিন কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘বিশেষায়িত মাস্কের বাজার ভালো রয়েছে। এ খাতে বিনিয়োগে বিশ্বব্যাংকের বিশেষ অনুদানের ফলে ভবিষ্যতে এ ধরনের সুরক্ষাসামগ্রী রপ্তানি আরো বাড়বে। ’
তবে পিপিই রপ্তানিতে হতাশার খবর দিয়েছে সার্জিক্যাল মাস্ক। গত অর্থবছরের ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত আট মাসে এক কোটি ১৮ লাখ ডলার বা ১০৩ কোটি টাকার তিন স্তরবিশিষ্ট সার্জিক্যাল মাস্ক রপ্তানি হয়েছিল বিশ্বের ২৪টি দেশে। এর মধ্যে শুধু তুরস্কেই রপ্তানি হয়েছিল ৮৬ লাখ ৫৬ হাজার ডলারের পণ্য। তবে চলতি অর্থবছরে এখন পর্যন্ত তুরস্ক বাংলাদেশ থেকে সার্জিক্যাল মাস্ক নেয়নি। এরই প্রভাব পড়েছে এ খাতের রপ্তানিতে।
অ্যাপারেল প্রমোটারসের মহাব্যবস্থাপক গিয়াস উদ্দিন বলেন, ‘স্থানীয় বাজারে আসছে আমরা প্রচুর মাস্ক বিক্রি করছি। বিশেষ করে সার্জিক্যাল মাস্ক। তবে রপ্তানিবাজারে চীনের মাস্কের সঙ্গে দামে প্রতিযোগিতা করতে সমস্যা হচ্ছে।