পশ্চিমবঙ্গের বীরভূমে তৃণমূলের পঞ্চায়েত উপ-প্রধান ভাদু শেখ হত্যার ঘটনায় উত্তপ্ত রামপুরহাট। গত রাতেই বকটুই গ্রামের একাধিক বাড়িতে আগুন ধরিয়ে দেওয়ার অভিযোগ ওঠে।
দমকল বাহিনীর দাবি, পুড়ে ছাই হয়ে যাওয়া ওইসব বাড়ি থেকে উদ্ধার হয়েছে ১০ জনের মরদেহ। বীরভূমের পুলিশ সুপারের দাবি, সাত জনের দেহ উদ্ধার হয়েছে।
অন্য দিকে হাসপাতাল থেকে বলা হয়েছে, ছয় জন নারী, দুই শিশু-সহ ৯ জনের মৃত্যু হয়েছে।
এ ঘটনায় আহত হয়েছেন বেশ কয়েক জন। ঘটনাস্থলে গেছে বিশাল পুলিশ বাহিনী। গতকালই জাতীয় সড়কের ধারের দোকানে চা খাওয়ার সময়, উপ-প্রধানকে লক্ষ্য করে বোমা ছুড়েছিল দুষ্কৃতিকারীরা। তার পরই এই ঘটনায় থমথমে পুরো এলাকা।
স্থানীয়রা বলছেন, সোমবার রাত সাড়ে ৮টা নাগাদ মোটর সাইকেলে চড়ে চার-পাঁচ জন গ্রামে ঢুকে। এরপর তারা ভাঙচুর চালাতে শুরু করে। একে একে কমপক্ষে ১০ বাড়িতে আগুন ধরিয়ে দেয়। তাতে পুড়ে সাত থেকে ১০ জনের মৃত্যু হয়।
নিহত তৃণমূল নেতার অনুগামীদের দল রাতভর তাণ্ডব চালিয়েছে বলেও অভিযোগ করেছেন স্থানীয়রা। ঘটনাস্থলে উপস্থিত পুলিশ সদস্যরা বলেছেন, সোমবার রাতে তিন জনের মরদেহ উদ্ধার করা হয়। মঙ্গলবার সকালে উদ্ধার হয় আরো সাত জনের মরদেহ। এক বাড়িতে একটি ঘরের মধ্যে থেকেই সাত জনের দেহ উদ্ধার হয়। আগুনে ঝলসে মরদেহগুলো প্রায় মাংসপিণ্ডে পরিণত হয়।
তৃণমূল উপ-প্রধানের হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে এ ঘটনার সংযোগ দেখতে পাচ্ছেন স্থানীয়রা। তাদের অভিযোগ, নেতার খুনের প্রতিশোধ নিতেই এই ঘটনা ঘটানো হয়েছে। প্রশাসনের কাছে এ নিয়ে কড়া পদক্ষেপের আবেদন জানিয়েছেন তাঁরা।
যদিও দুই ঘটনার মধ্যে কোনো সংযোগ রয়েছে কি না, সে ব্যাপারে এখন পর্যন্ত নির্দিষ্ট করে কিছু বলা সম্ভব নয় বলে জানিয়েছে পুলিশ। আগুন ধরানো হয়েছে, নাকি গ্যাস সিলিন্ডার বা স্টোভ ফেটে আগুন ধরেছে, তা নিয়েও নানা যুক্তি উঠে আসছে।
বীরভূমের পুলিশ সুপারের দাবি, বাড়িতে আগুন লাগানোর ঘটনায় ৭ জনের মৃত্যু হয়েছে। উপ-প্রধান খুনের সঙ্গে বাড়িতে আগুন দেওয়ার ঘটনার কোনো যোগসূত্র আছে কি না, তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে।
আজ সকাল থেকেই ঘটনাস্থলে উপস্থিত রয়েছেন বীরভূমের পুলিশ সুপার। বাড়ি বাড়ি গিয়ে স্থানীয়দের জিজ্ঞাসাবাদ করছেন তিনি। ফরেনসিক দল ঘটনাস্থলে আসবেন বলে জানিয়েছেন তিনি।
তবে সাত জনের মরদেহ মিলেছে বলে সংবাদমাধ্যমে জানান তিনি। গতকালের ঘটনার পর বহু মানুষ বাড়ি ছেড়ে পালিয়ে গেছেন।
যদিও বীরভূমের তৃণমূল জেলা সভাপতি অনুব্রত মণ্ডলের দাবি, শর্ট সার্কিটের জেরে টিভি সেটে বিস্ফোরণ হয়ে এ ঘটনা ঘটে থাকতে পারে, আবার অন্য কোনো কারণও থাকতে পারে। ১০ জন নয়, তাঁর কাছে ছয় জনের মৃত্যুর খবর রয়েছে বলেও দাবি করেন অনুব্রত।
অনুব্রত বলেন, ১০টি নয়, তিন-চারটি বাড়িতে আগুন লেগেছে। সঙ্গে সঙ্গেই সেখানে পৌঁছায় দমকল বাহিনী। আগুন নেভানো হয়।