বিশ্বজুড়ে গম ও ভুট্টা রপ্তানিতে একেবারে ওপরের দিকে রয়েছে রাশিয়া ও ইউক্রেন। অন্যান্য খাদ্যশস্য সরবরাহেও গুরুত্বপূর্ণ অবস্থানে রয়েছে দেশ দুটি।
ইউরোপে প্রাকৃতিক গ্যাসের ৪০ শতাংশই যোগান দেয় রাশিয়া। দেশটির জ্বালানি খাতে রয়েছে পশ্চিমা প্রতিষ্ঠানগুলোর বিপুল বিনিয়োগ। রাশিয়ার এক তৃতীয়াংশ তেল উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠান রসনেফটের ২০ শতাংশ শেয়ারের মালিক ব্রিটিশ পেট্রোলিয়াম বিপি।
এছাড়া বিশ্বের ১০ শতাংশ তামার মজুত রয়েছে রাশিয়ায়। অ্যালুমিনিয়ামের দ্বিতীয় বৃহত্তম উৎপাদনকারী দেশও এটি।
এ কারণেই ইউক্রেনকে ঘিরে কোনো সংঘাত হলে অস্থির হবে বিশ্ববাজার। বিনিয়োগ প্রতিষ্ঠান জে পি মরগান বলছে, তেলের দাম উঠে যেতে পারে ব্যারেল প্রতি ১৫০ ডলারে, যাতে বিশ্বের জিডিপি প্রবৃদ্ধি এক শতাংশ কমে যেতে পারে। পাশাপাশি বিশ্ব অর্থনীতিতে মুদ্রাস্ফীতিও বাড়তে পারে ৭ দশমিক ২ শতাংশ।
যুদ্ধ বাধলে রাশিয়ার ওপর নিষেধাজ্ঞাও আরোপ করতে পারে যুক্তরাষ্ট্রসহ পশ্চিমাদেশগুলো। আন্তর্জাতিক ব্যাংকিং চ্যানেল সুইফট থেকেও বের করে দেয়া হতে পারে রুশ ব্যাংকগুলোকে। এতে দেশটির ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোর জন্য আন্তর্জাতিক লেনদেন কঠিন হয়ে পড়বে।
অন্যদিকে, নিষেধাজ্ঞার জবাবে ইউরোজোনে গ্যাস সরবরাহ বন্ধ করে দিতে পারে রাশিয়া। দেশটি থেকে ইউরোপীয় ইউনিয়নে ৩০ শতাংশ তেল এবং ৩৫ শতাংশ প্রাকৃতিক গ্যাসের সরবরাহ হওয়ায় প্রভাব পড়বে বিদ্যুৎ উৎপাদনে।
এরইমধ্যে কয়েক মাস ধরে অস্থিতিশীল রয়েছে রাশিয়ার অর্থনীতি। গেল তিনমাসে রুবলের ১০ শতাংশ দরপতন হয়েছে, মুদ্রাস্ফীতিও লাগামছাড়া। যুদ্ধ বাধলে সংকট আরো বাড়বে বলেই আশঙ্কা করছেন বিশেষজ্ঞরা।
খাদ্যশস্য ও গম
ইউক্রেনে হামলা হলে বাধার মুখে পড়তে পারে কৃষ্ণ সাগর দিয়ে বাণিজ্যিক জাহাজের চলাচল। এর প্রভাব হবে মারাত্মক। এতে এ পথ দিয়ে আমদানি-রপ্তানি করা খাদ্যশস্যের দাম বেড়ে যেতে পারে। করোনা মহামারির কারণে এর মধ্যেই বিশ্বের অনেক অঞ্চলের মানুষের ক্রয়ক্ষমতা কমেছে। ফলে নতুন করে খাদ্যের দাম বাড়লে তা সংকট বাড়াবে বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা।
খাদ্যশস্যের অন্যতম চার রপ্তানিকারক দেশ ইউক্রেন, রাশিয়া, কাজাখস্তান ও রোমানিয়া। এই দেশগুলোর পণ্য রপ্তানি হয় কৃষ্ণ সাগরের বিভিন্ন বন্দর দিয়ে। গম রপ্তানির দিকে দিয়ে বিশ্বে শীর্ষে রয়েছে রাশিয়া। ইন্টারন্যাশনাল গ্রেইনস কাউন্সিলের তথ্য অনুযায়ী, ২০২১-২২ অর্থবছরে বিশ্বের তৃতীয় বৃহত্তম ভুট্টা রপ্তানিকারক দেশ হতে যাচ্ছে ইউক্রেন। আর গম রপ্তানিতে দেশটির অবস্থান চতুর্থ।
প্রাকৃতিক গ্যাস ও জ্বালানি তেল
রাশিয়া ইউক্রেনে হামলা করবে, এ আশঙ্কা সত্যি হলে সংকটে পড়বে জ্বালানির বাজার। ইউরোপের ৩৫ শতাংশ প্রাকৃতিক গ্যাসের চাহিদা মেটে রাশিয়া থেকে। দেশটি থেকে বেলারুশ ও পোল্যান্ডের মধ্য দিয়ে পাইপলাইনের মাধ্যমে জার্মানিতে গ্যাস সরবরাহ করা হয়। নর্ড স্ট্রিম ১-এর মাধ্যমে সরাসরি রাশিয়া থেকে জার্মানিতে গ্যাস যায়। অন্যদিকে ইউক্রেনের ভেতর দিয়েও ইউরোপে গ্যাস সরবরাহ করে মস্কো।