আগামীকাল ৮ অক্টোবর, ২০২১ মহান ভাষা আন্দোলনের অবিস্মরণীয় ও মহান রাজনীতিক ভাষা বীর আবদুল মতিনের ৬ষ্ঠ মৃত্যুবার্ষিকী। ভাষা আন্দোলনে অসামান্য অবদানের জন্য জাতির কাছে তিনি ‘ভাষা মতিন’ নামে পরিচিত ছিলেন।
ভাষা মতিনের ৭ম মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে শুক্রবার সকাল ১০.৩০ মিনিটে নয়াপল্টনের যাদু মিয়া মিলনায়তনে বাংলাদেশ ন্যাশনাল আওয়ামী পার্টি-বাংলাদেশ ন্যাপ তার প্রতিকৃতিতে শ্রদ্ধা নিবেদন ও সংক্ষিপ্ত আলোচনা সভার আয়োজন করেছে।
উল্লেখ্য, একুশে পদকপ্রাপ্ত মহান ভাষা আন্দোলনের অন্যতম প্রধান নেতা, আজীবন সংগ্রামী আবদুল মতিন ১৯২৬ সালের ৩ ডিসেম্বর সিরাজগঞ্জের চৌহালি উপজেলার ধুবালীয়া গ্রামে এক মধ্যবিত্ত কৃষক পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন আব্দুল মতিন। তার বাবার নাম আব্দুল জলিল এবং মায়ের নাম আমেনা খাতুন। তিনি ছিলেন পরিবারের প্রথম সন্তান। জন্মের পর তার ডাক নাম ছিল গেদু ,পরবর্তীতে সারা বাংলাদশে তিনি ভাষা মতিন নামে পরিচিত লাভ করেন।
১৯৩০ সালে গ্রামের বাড়ি যমুনায় ভেঙ্গে গেলে আবদুল জলিল জীবিকার সন্ধানে ভারতের দার্জিলিং এ চলে যান। সেখানে জালাপাহারের ক্যান্টনমেন্টে সুপারভাইস স্টাফ হিসেবে চাকরি নেন। ১৯৩২ সালে আব্দুল মতিন শিশু শ্রেণীতে দার্জিলিংয়ের মহারাণী বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ে শিক্ষা জীবন শুরু করেন।
১৯৩৩ সালে আব্দুল মতিনের মাত্র ৮ বছর বয়সে তার মা অ্যাকলেমশিয়া রোগে মারা যান। ১৯৩৬ সালে দার্জিলিং গভর্মেন্ট হাই স্কুলে পঞ্চম শ্রেণীতে ভর্তি হন। তিনি ১৯৪৩ সালে এনট্রেন্স (মাধ্যমিক সার্টিফিকেট পরীক্ষা) পরীক্ষায় ৩য় বিভাগ নিয়ে উত্তীর্ণ হয়ে রাজশাহী গভর্মেন্ট কলেজে ইন্টারমিডিয়েটে ভর্তি হন। ১৯৪৫ সালে তিনি এইচ এস সি পরীক্ষায় তৃতীয় বিভাগে উত্তীর্ণ হন।
দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের শেষের দিকে আব্দুল মতিন বৃটিশ আর্মির কমিশন র্যা ঙ্কে ভর্তি পরীক্ষা দেন। দৈহিক আকৃতি, উচ্চতা, আত্মবিশ্বাস আর সাহসিকতার বলে তিনি ফোর্ট উইলিয়াম থেকে পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়ে কমিশন পান। ১৯৪৫ সালে তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ব্যাচেলর অব আর্টসে (পাশ কোর্স) ভর্তি হন। ১৯৪৭ সালে গ্র্যাজুয়েশন কোর্স শেষ করেন এবং পরে মাস্টার্স করেন ইন্টারন্যাশনাল রিলেশন বিভাগ থেকে।
১৯৫২ সালে বাংলাকে পাকিস্তানের রাষ্ট্রভাষা করার প্রথম যারা দাবি জানিয়েছেলেন আবদুল মতিনের তাদের অন্যতম। সে বছর ২১ ফেব্রয়ারি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কলাভবনের ছাত্রসভায় সভাপতিত্ব করেছিলেন তিনি। শিার্থীদের সংগঠন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় রাষ্ট্রভাষা সংগ্রাম কমিটির আহ্বায়কও ছিলেন তিনি। তার সভাপতিত্বে কলাভবনের জনসভায় সিদ্ধান্ত নেয়া হয় ১৪৪ ধারা ভাঙার। তারই নেতৃত্বে একুশে ফেব্রুয়ারি বাংলাকে রাষ্ট্রভাষা করার দাবিতে আন্দোলনের নানা কর্মসূচি গ্রহণ করা হয়।
ভাষা আন্দোলনের পর তিনি ছাত্র ইউনিয়ন গঠনে ভূমিকা রাখেন এবং পরে সংগঠনটির সভাপতি হন। এরপর কমিউনিস্ট আন্দোলনে সক্রিয় হন। মওলানা ভাসানী ন্যাপ গঠন করলে তিনি ১৯৫৭ সালে তাতে যোগ দেন। ১৯৯২ সালে তিনি বাংলাদেশের ওয়ার্কার্স পার্টি গঠনে সক্রিয় ভূমিকা রাখেন এবং ২০০৬ সালে ওই দল থেকে পদত্যাগ করেন।
ভাষা আন্দোলনে অবদান রাখায় ২০০১ সালে তিনি বাংলাদেশের জাতীয় এবং সর্বোচ্চ বেসামরিক পুরস্কার একুশে পদক লাভ করেন।আবদুল মতিন ২০১৪ সালের ৮ অক্টোবর বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বিএসএমএমইউ) চিকিৎসাধীন অবস্থায় ইন্তেকাল করেন। তিনি মরণোত্তর চক্ষু ও দেহদান করে গেছেন।