দেশের বিভিন্ন খুচরা বাজারে হঠাৎ পেঁয়াজের দাম বেড়েছে কেজিপ্রতি ১৫ থেকে ২০ টাকা। ঢাকার বাইরে কোথাও কোথাও কেজিপ্রতি ৩০ টাকা বৃদ্ধির খবরও পাওয়া গেছে। খুচরা বিক্রেতারা বলছেন, আমদানি বন্ধ থাকায় পেঁয়াজের দাম বাড়িয়েছেন পাইকারি ব্যবসায়ীরা। এতে খুচরা বাজারেও বেড়েছে। আর পাইকারি ব্যবসায়ী ও আড়তদারদের সঙ্গে কথা বলে সুনির্দিষ্ট কোনো কারণ জানা যায়নি। তাঁরা বলছেন, কাঁচামাল যখন আমদানি (সরবরাহ) ভালো হয় তখন দাম কম থাকে, যখন আমদানি কমে যায় তখন দাম বাড়বে এটাই স্বাভাবিক। অনেকে গত বছর পেঁয়াজে লোকসান ও ভারতে দাম বৃদ্ধির অজুহাতও দেখালেন।
তবে ভারত বা বাংলাদেশ কোনো পক্ষই পেঁয়াজের আমদানি বন্ধ করেছে এমন কোনো তথ্য পাওয়া যায়নি। আমদানিকারকরাও বলছেন, পেঁয়াজের আমদানির গতি কিছুটা কমলেও বন্ধ হয়নি। ভারতে বৃষ্টির কারণে কিছু পেঁয়াজ নষ্ট হওয়ায় গতি কমেছে।
রাজধানীর খুচরা বাজার ঘুরে দেখা যায়, শুক্রবার দেশি জাতের যে পেঁয়াজ বিক্রি হয়েছে ৪৫ থেকে ৫০ টাকা কেজি, গতকাল সেগুলোই ৬০ থেকে ৬৫ টাকা চাইলেন বিক্রেতারা। এ ছাড়া আমদানির পেঁয়াজ দুদিন আগেও বিক্রি হয়েছে ৪০ টাকা কেজি। গতকাল খুচরা বিক্রেতারা সেই পেঁয়াজের দাম চাইলেন ৬০ টাকা কেজি।
জানতে চাইলে রাজধানীর বসুন্ধরা গেট-সংলগ্ন কাঁচাবাজারের বিক্রেতা আলাউদ্দিন কালের কণ্ঠকে বলেন, পাইকারি বাজারে গতকাল যে পেঁয়াজ কিনেছি ৫৫ টাকা কেজি, আজ সেগুলোই ৬০ টাকা কেজি। দিন গেলেই দাম বাড়ছে। গত পরশু এসব পেঁয়াজের দাম ছিল ৩৮ থেকে ৪০ টাকা কেজি। বর্ডার দিয়ে পেঁয়াজ আমদানি বন্ধ হওয়ায় দাম বেড়েছে।
দেশের অন্যতম বৃহত্তর পেঁয়াজের আড়ত শ্যামবাজারে গত সপ্তাহের শেষ দিকে দেশি পেঁয়াজ বিক্রি হয়েছিল ৩৫ থেকে ৩৬ টাকা কেজি। গতকাল সেই পেঁয়াজ বিক্রি হয়েছে ৫২ থেকে ৫৪ টাকা কেজি। আমদানির পেঁয়াজ গত সপ্তাহে ছিল ৩০ থেকে ৩২ টাকা কেজি। গতকাল তা ৪৭ থেকে ৪৮ টাকা কেজিতে উঠে গেছে।
জানতে চাইলে শ্যামবাজার পেঁয়াজ ব্যবসায়ী সমিতির সাধারণ সম্পাদক হাজি আবদুল মাজেদ কালের কণ্ঠকে বলেন, কাঁচামালের বাজার এমনই। সরবরাহ কমে গেলে দাম বাড়ে। বাজারে এখন পেঁয়াজ কম তাই দামও বেশি। পেঁয়াজে এখন কৃষকের খরচ ৫০ টাকা।
তবে হঠাৎ দুদিনে বাড়ার কারণ আছে কি না জানতে চাইলে তিনি আরো বলেন, ‘গত বছর আমি পেঁয়াজে লোকসান গুনেছি তিন কোটি টাকা। এখন আমদানি কম। ভারতেও পেঁয়াজের দাম বেড়েছে।’
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, হিলি বা বেনাপোল কোনো বন্দর দিয়েই পেঁয়াজ আমদানি বন্ধ হয়নি। তবে পূজার কারণে সীমান্তের ওপার থেকে পেঁয়াজসহ সব ধরনের পণ্যবাহী পরিবহন আসছে কম। তবে পেঁয়াজের তেমন কোনো ঘাটতি নেই। তার পরও দাম বাড়ছে। গতকাল হিলিতে পেঁয়াজ বিক্রি হয়েছে ৪০ টাকার কাছাকাছি। দিন চারেক আগে বিক্রি হয়েছিল সর্বোচ্চ ৩২ টাকা কেজি।
হিলি স্থালবন্দর আমদানি ও রপ্তানিকারক সমিতির সভাপতি হারুন অর রশিদ কালের কণ্ঠকে বলেন, পেঁয়াজ আমদানি বন্ধ হয়নি, চলছে। তবে কয়েক দিন ধরে ভারতে বৃষ্টি হওয়ায় পরিবহনে থাকা পেঁয়াজে পচন ধরেছে। এতে ভালো পেঁয়াজ আসছে কম। এ ছাড়া যেগুলো আসছে সেগুলোর দামও কেজিতে ১০ টাকা বেশি।
দেশে আমদানির পেঁয়াজ না হলেও ঘাটতি হবে না জানিয়ে তিনি আরো বলেন, ‘আমাদের পেঁয়াজের উৎপাদন এবার অনেক বেশি। পাবনা, ফরিদপুরসহ বিভিন্ন অঞ্চলে মজুদও রয়েছে পর্যাপ্ত। কিন্তু ভারতের বাজারে দাম বেড়েছে এবং আমদানি কম হচ্ছে—এমন খবরে মধ্যস্বত্বভোগীরা সুযোগ নিচ্ছেন।