বুধবার, ২৩ এপ্রিল ২০২৫, ০২:৩১ পূর্বাহ্ন
শিরোনাম ঃ
৩১ বাংলাদেশি নাগরিককে ফেরত পাঠিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। চুল পড়ার পেছনে থাকতে পারে নানা কারণ।। ঝটিকা মিছিলের পর আওয়ামী লীগ ও ছাত্রলীগের ১০ নেতাকর্মী গ্রেফতার, ঐকমত্য কমিশনের সঙ্গে আবার বৈঠকে বিএনপি সারা দেশে পলিটেকনিক শিক্ষার্থীদের মহাসমাবেশ, আবারো জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সঙ্গে বৈঠক। রাশিয়ার নাগরিকত্ব দেয়ার প্রলোভন দেখিয়ে যুদ্ধে নেয়া, যুদ্ধেই প্রাণ হারান ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আশুগঞ্জের এক যুবক। ডিসেম্বরের মধ্যে নির্বাচনের জন্য শক্ত অবস্থানের ইঙ্গিত দিচ্ছে বিএনপি উপদেষ্টার নির্দেশ সেনাবাহিনীকে সদা প্রস্তুত থাকার প্রধান আ. লীগ সমর্থকদের যে বার্তা দিলেন প্রেসসচিব, ৫ মাস হাসিনা পালানোর অশ্লীল দৃশ্য রেলস্টেশনের মনিটরে : খোঁজার নির্দেশ জড়িতদের গোসল করেন না শীতের ভয়ে, গোসল দুই দিন না করলে কী হয় জেনে নিন

পরকীয়া বিয়েতে যত জালিয়াতি, নাসির-তামিমার

Reporter Name
  • Update Time : শনিবার, ২ অক্টোবর, ২০২১

তখনও কেবিন ক্রু তামিমা সুলতানা তাম্মি রাকিব হাসানের স্ত্রী। তামিমা কাজ করতেন সৌদিয়া এয়ারলাইন্সে। সে সুবাদে বেশিরভাগ সময় বিদেশেই থাকতে হতো তাকে। ওই সময় ফেসবুকে পরিচয় হয় ক্রিকেটার নাসির হোসেনের সঙ্গে। এরপর থেকে প্রায়ই কথা হতো দুজনের। ২০১৭ সালের ৮ জানুয়ারি তামিমা বাংলাদেশে এসে গুলশান-২ এর একটি রেস্তোরাঁয় দেখা করেন নাসিরের সঙ্গে। এরপর দুজনই নিয়মিত কথাবার্তা বলতে থাকেন। একপর্যায়ে নাসির-তামিমার মধ্যে পরকীয়া সম্পর্ক গড়ে উঠে।  বিয়ের আগে তারা বিভিন্ন জায়গায় বেশ কয়েকবার দেখা করেন।

পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশনের (পিবিআই) তদন্তে এসব তথ্য বেরিয়ে আসে। পিবিআইয়ের কাছে নাসির ও তামিমা- দুজনই জবানবন্দি দেন।

পিবিআইকে দেওয়া জবানবন্দিতে নাসির জানান, ২০১৭ সালের জানুয়ারিতে নাসিরের সঙ্গে পরিচয় হলেও তামিমা ওই বছরের শেষ দিকে রাকিবের সঙ্গে তার (তামিমা) বিয়ের বিষয়টি তাকে জানান। বিয়ের বিষয়ে জানতে চাইলে তামিমা অস্বস্তিবোধ করতেন। চেষ্টা করতেন এড়িয়ে যাওয়ার। পরে ২০২০ সালের শেষের দিকে তারা বিয়ের সিদ্ধান্ত নেন। ২০২১ সালের ১৪ ফেব্রুয়ারি রাজধানীর উত্তরার ১৩ নম্বর সেক্টরের হাভেলি রেস্তোরাঁয় ২০ লাখ ১০০ টাকা দেনমোহর ধার্য করে বিয়ে করেন নাসির-তামিমা।

নাসির ও তামিমা বিয়েতে বড় ধরনের জালিয়াতি করেছেন, যা পিবিআইয়ের তদন্তে বেরিয়ে এসেছে।

মুসলিম বিবাহ ও তালাক নিবন্ধন বিধিমালা ২০০৯-এর ২৫ ধারা মোতাবেক, বিয়ে ও তালাক যে স্থানে সম্পন্ন হয়েছে সেই স্থানের নাম উল্লেখ করতে হয়।

কিন্তু তদন্তে নেমে পিবিআই পেয়েছে, নাসির ও তামিমার বিয়ে হয়েছে ঢাকার উত্তরায়। কিন্তু তাদের কাবিননামায় ‘বিবাহ কার্যনিষ্পন্ন স্থান’ হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে ঘারিন্দা ইউনিয়ন কাজী অফিস টাঙ্গাইল সদর।  টাঙ্গাইলের ৩নং ঘারিন্দা ইউনিয়নের নিয়োগপ্রাপ্ত কাজী দেলোয়ার হোসাইন এই বিয়ে নিষ্পন্ন করেন।

পিবিআইকে দেওয়া জবানবন্দিতে নাসির আরও জানান, সব জেনেই তামিমাকে তিনি বিয়ে করেছেন। বিয়ের আগে তামিমার স্বামী রাকিবের সঙ্গে তার (নাসির) কখনো দেখা বা কথা হয়নি। তবে ২০২১ সালের ১৭ ফেব্রুয়ারি রাকিবের সঙ্গে তার মোবাইল ফোনে একবার কথা হয়েছে বলে জানান নাসির।

এদিকে রাকিবের সঙ্গে তামিমার তালাক নোটিশ নিয়েও করা হয়েছে জালিয়াতি। তালাক নোটিশ দিলেও তামিমা ও তার মা সুমি ছিলেন রাকিবের বাসায়।

গত ৩০ সেপ্টেম্বর ক্রিকেটার নাসির হোসেন ও তামিমা সুলতানা তাম্মির বিয়ে অবৈধ উল্লেখ করে ঢাকার মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট মোহাম্মদ জসীমের আদালতে তদন্ত প্রতিবেদন দাখিল করেন পিবিআইয়ের তদন্ত কর্মকর্তা মিজানুর রহমান।

তদন্ত প্রতিবেদনে বলা হয়েছে— তালাক যথাযথ হয়নি জেনেও নাসির বিয়ে করেছেন তামিমাকে।  তামিমা রাকিবকে তালাক দেননি।  আইনগতভাবে রাকিব তালাকের কোনো নোটিশও পাননি। তামিমা উল্টো জালিয়াতি করে ডাকবিভাগের তালাকের নোটিশ তৈরি করে তা বিভিন্ন মাধ্যমে প্রকাশ করেছেন। যথাযথ প্রক্রিয়ায় তালাক না দেওয়ার ফলে তামিমা তাম্মী এখনও রাকিবের স্ত্রী হিসেবে বহাল রয়েছেন। দেশের ধর্মীয় বিধিবিধান ও আইন অনুযায়ী এক স্বামীকে তালাক না দিয়ে অন্য কাউকে বিয়ে করা অবৈধ এবং শাস্তিযোগ্য অপরাধ। এমন পরিস্থিতিতে ক্রিকেটার নাসির হোসেন ও তামিমা তাম্মীর বিয়ে অবৈধ বলে প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে।

ব্যবসায়ী রাকিব-তামিমা ও তার পরিবারসহ ২০১৪ সালের ডিসেম্বর থেকে ২০১৭ সালের জুলাই পর্যন্ত উত্তরার ৯নং সেক্টরের একাধিক বাসায় একসঙ্গে ছিলেন। ২০১৭, ২০১৮, ২০১৯ ও ২০২০ সালে রাকিবের ভাড়া বাসা, হোটেল ও আত্মীয়-স্বজনের বাসায় স্বামী-স্ত্রী পরিচয় ছিলেন তামিমা। যদিও তামিমার দাবি, তিনি রাকিবকে ২০১৬ সালের ডিসেম্বরে ডিভোর্স দিয়েছেন।

পিবিআইয়ের কাছে জবানবন্দিতে তামিমা বলেন, ২০১৭ ও ২০১৮ সালে হোটেল লা মেরিডিয়ানে রাকিবের সঙ্গে তার অনেকবার দেখা হয়েছে। এছাড়াও ২০১৯ সালের ২৪ জুলাই হোটেল লা মেরিডিয়ানের রিজারভেশন রুম নম্বর ১০১৭-তে রাকিব ‘অ্যাকমপ্যানিং গেস্ট’ হিসেবে তার (তামিমা) সঙ্গে একদিন ছিলেন।

এদিকে ২০১৮ সালের ৩ মার্চ শেষ হয় তামিমার পাসপোর্টের মেয়াদ। পরে নবায়নের সময় স্বামীর নাম রাকিব হাসানই উল্লেখ করেন তামিমা। ২০১৬ সালে ডিভোর্স হয়ে থাকলে স্বামীর নাম রাকিব হাসান লেখার আইনগত বৈধতা নেই বলে জানায় পিবিআই।

এ ছাড়া চাকরির সমস্ত নথি, মেডিকেল কার্ড, সৌদি আইডি কার্ড, লাইসেন্স GACA আইডেনটিফিকেশন কার্ড- সব জায়গাতেই স্বামীর নাম রাকিব হাসান ব্যবহার করেছেন তামিমা।

আদালতে দাখিল করা পিবিআইয়ের তদন্ত প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, তালাক যথাযথ হয়নি জেনেও নাসির বিয়ে করেছেন তামিমাকে। তামিমা রাকিবকে তালাক দেননি। আইনগতভাবে রাকিব তালাকের কোনো নোটিশও পাননি।  তামিমা উল্টো জালিয়াতি করে ডাকবিভাগের তালাকের নোটিশ তৈরি করে তা বিভিন্ন মাধ্যমে প্রকাশ করেছেন। যথাযথ প্রক্রিয়ায় তালাক না দেওয়ার ফলে তামিমা তাম্মী এখনও রাকিবের স্ত্রী হিসেবে বহাল রয়েছেন। দেশের ধর্মীয় বিধিবিধান ও আইন অনুযায়ী এক স্বামীকে তালাক না দিয়ে অন্য কাউকে বিয়ে করা অবৈধ এবং শাস্তিযোগ্য অপরাধ। এমন পরিস্থিতিতে ক্রিকেটার নাসির হোসেন ও তামিমা তাম্মীর বিয়ে অবৈধ বলে চার্জশিটে উল্লেখ করা হয়েছে।

এর আগে গত ২৪ ফেব্রুয়ারি ঢাকা মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট মোহাম্মদ জসীমের আদালতে তাম্মির সাবেক স্বামী মো. রাকিব হাসান মামলাটি করেন। পরে আদালত বাদীর জবানবন্দি গ্রহণ করে নথি পর্যালোচনা শেষে মামলাটি পিবিআইকে তদন্ত করার নির্দেশ দেন।

মামলার এজাহারে উল্লেখ করা হয়েছে,  ২০১১ সালের ২৬ ফেব্রুয়ারি তাম্মি ও রাকিবের বিয়ে হয়। তাদের ৮ বছরের একটি মেয়েও রয়েছে। তামিমা পেশায় একজন কেবিন ক্রু। চলতি বছরের ১৪ ফেব্রুয়ারি তাম্মি ও ক্রিকেটার নাসিরের বিয়ের ছবি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়লে তা রাকিবের নজরে আসে। পরে গণমাধ্যমে তিনি ঘটনার বিষয়ে সম্পূর্ণ জেনেছেন।’

মামলায় অভিযোগ করা হয়েছে, রাকিবের সঙ্গে বৈবাহিক সম্পর্ক চলমান অবস্থাতেই তাম্মি নাসিরকে বিয়ে করেছেন; যা ধর্মীয় এবং রাষ্ট্রীয় আইন অনুযায়ী সম্পূর্ণ অবৈধ। নাসির তামিমাকে প্রলুব্ধ করে নিজের কাছে নিয়ে গিয়েছেন।’

এ বিষয়ে পিবিআই প্রধান বনজ কুমার মজুমদার বলেছেন, প্রথম স্বামী রাকিব হাসানকে তালাক হওয়ার ক্ষেত্রে যে নিয়ম মানা দরকার ছিল- তা মানা হয়নি। তামিমার মা সুমি আক্তার বেশ কিছু জালিয়াতিও করেছেন।

পিবিআই প্রধান বনজ কুমার মজুমদার একটি গণমাধ্যমকে বলেন, তালাক দেওয়ার ক্ষেত্রে তিনটি শর্ত থাকে। কাজীকে অবহিত করা, তালাক যাকে দেওয়া হবে, তার ঠিকানায় নোটিশ পাঠানো এবং ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যানকে ডাক বিভাগের মাধ্যমে চিঠি দেওয়া। এই তিনটি শর্তের পরের দুটি তামিমার ক্ষেত্রে সঠিকভাবে করা হয়নি। চার্জশিটে নাসিরের বিরুদ্ধে ‘অন্যের স্ত্রীকে প্রলুব্ধ’ করে নিয়ে যাওয়া, ‘ব্যাভিচার’ এবং তামিমার আগের স্বামীর মানহানি ঘটানোর অভিযোগ আনা হয়েছে। আর সব ‘জেনেও’ বিয়েতে সহায়তা করায় তামিমার মাকে চার্জশিটে আসামি করা হয়েছে।

পিবিআই প্রধান আরও বলেন, তালাকের ব্যাপারে যেসব কাগজ তৈরি করা হয়েছে, সেগুলো তামিমার মা সুমি আক্তার জালিয়াতির মাধ্যমে করেছেন। ডাক বিভাগের কাগজসহ যেগুলো জালিয়াতি করা হয়েছে, সেগুলো তিনিই করেছেন।

বনজ কুমার মজুমদার আরও বলেন, তামিমা দাবি করেছেন- রাকিবকে তিনি তালাক দিয়েছেন ২০১৬ সালে। অথচ ২০১৮ সালের তার তোলা পাসপোর্টে রাকিবকেই তিনি স্বামী হিসাবে উল্লেখ করেছেন। তার সমস্ত কর্মকাণ্ডকে এ বিষয়টিকে সাপোর্ট করছে। রাকিবকে যে ঠিকানায় চিঠি দেওয়ার কথা তিনি বলেছেন, সেই ঠিকানায় রাকিব থাকতেন না।

এইচ বিডি নিউজ টুয়েন্টি ফোর এ আপনাকে স্বাগতম। “সময়ের প্রয়োজনে- HBD NEWS24” নিয়ে আমরা আছি আপনার পাশে। আপনার পাশে ঘটে যাওয়া নানা সংগতি, অসংগতি আর তথ্য নিয়ে আপনিও যোগ দিন HBD NEWS 24 এ আমাদের কাছে মেইল করুন: hbdnews2012@gmail.com

More News Of This Category

© All rights reserved © 2012 HBDNEWS24

POWERED BY MH GROUP OF COMPANY.