।।এম. গোলাম মোস্তফা ভুইয়া ।।
১ অক্টোবর ২০২১, চীন বিপ্লবের ৭২তম বার্ষিকী। চীনের জাতীয় দিবস। ১৯৪৯ সালের এই দিনে চীনের মহান নেতা মাও সে তুংয়ের নেতৃত্বে সফল বিপ্লবের পর পিপলস রিপাবলিক অব চায়নার আনুষ্ঠানিক যাত্রা শুরু হয়েছিল। এ উপলক্ষে চীনের জনগণকে অভিনন্দন।
স্বাধীন-সার্বভৌম বাংলাদেশে যে দলই রাষ্ট্রীয় ক্ষমতায় থাকুক, বিশ্বের সবচেয়ে জনবহুল দেশটির সঙ্গে আন্তরিক বন্ধুত্ব ও সহযোগিতার সম্পর্ক সবাই রক্ষা করতে চায়। অর্থনৈতিক সম্পর্ক জোরদার করতে সচেষ্ট সবাই। এশিয়া-প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলের সমৃদ্ধ দেশটি সঙ্গত কারণেই এখন বাংলাদেশের বাণিজ্য ও উন্নয়নের প্রধান অংশীদারে পরিণত হয়েছে।
চীন-বাংলাদেশ সম্পর্ক হলো দুই দেশের মধ্যকার দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ক। বাংলাদেশ-চীন সম্পর্ক প্রাচীন ও প্রায় তিন হাজার বছরের পুরনো বলে ইতিহাসবিদরা বলে থাকেন। বাঙালি সভ্যতা ও চীনা সভ্যতার মাঝে খ্রিস্টের জন্মেরও হাজার বছর আগে থেকে যোগাযোগ আছে। প্রাচীনকাল থেকে ব্রহ্মপুত্র নদীর মাধ্যমে চীন এবং বাংলায় মানুষের যোগাযোগ স্থাপিত হয়। ১৯৭৫ সাল থেকে চীন-বাংলাদেশের আধুনিক ক‚টনৈতিক সম্পর্ক স্থাপিত হলেও বর্তমানে বাংলাদেশের উন্নয়নের এক অন্যতম অংশীদার হলো চীন। এবং বাংলাদেশ চীনের দ্বিতীয় বৃহত্তম ব্যবসায়িক পক্ষ।
ঐতিহাসিকরা বলে থাকেন, বাংলাদেশকে চীনের সঙ্গে যুক্ত করেছিল যে পথ, তার নাম সিল্ক রোড নামে ইতিহাসে প্রসিদ্ধ। ছিল পশ্চিমা সিল্ক রোড, যার সূচনা হয়েছিল রাজধানী সিয়ান (তৎকালীন ছাংআন) থেকে। সেই পথ সিনজিযাং হয়ে আফগানিস্তানের ভেতর দিয়ে ভারত হয়ে পৌঁছেছিল বাংলাদেশে (মংচিয়ালা)। কয়েক শতাব্দী ধরে এই মংচিয়ালাই ছিল চীন ও দক্ষিণ এশিয়ার মধ্যকার সম্পর্কের সেতুবন্ধন। একটি পূর্ব সিল্ক রোডও ছিল, যার উৎপত্তি হয়েছিল দক্ষিণ চীনের কুনমিং থেকে। মিয়ানমারের মধ্য দিয়ে তা সংযোগ স্থাপন করেছিল বাংলাদেশের সঙ্গে। এই দুটি পথ ধরে ব্যবসা-বাণিজ্যের প্রসার ঘটেছিল, বৃদ্ধি পেয়েছিল সাংস্কৃতিক আদান-প্রদান।
প্রাচীনকাল থেকেই চীন ও বাংলাদেশ উভয়ই সমুদ্র উপক‚লীয় দেশ বিধায় সমুদ্রপথে তাদের মধ্যকার আদান-প্রদান ছিল চমৎকার। প্রায় ৬০০ বছর আগে চীনের মিং রাজবংশের পরাক্রমশালী সম্রাট ছিলেন ইয়ংলে। সেই সময়ের শ্রেষ্ঠ নাবিক অ্যাডমিরাল ঝেং হে ছিলেন স¤্রাটের শান্তির দূত; তিনি ভারত মহাসাগর ও প্রশান্ত মহাসাগর পরিভ্রমণ করেন। তিনিই সমুদ্রপথে চীনা সিল্ক রোড সৃষ্টি করেন। ১৪০৫-৩৩ খ্রিস্টাব্দ পর্যন্ত অ্যাডমিরাল ঝেং হে শতাধিক জাহাজের বিশাল বহর নিয়ে সাতটি আন্তঃসমুদ্র অভিযান পরিচালনা করেন এবং এশিয়া ও আফ্রিকার ৩০টি দেশ ও অঞ্চল পরিভ্রমণ করেন। অ্যাডমিরাল ঝেং হের নৌবহর দুবার চট্টগ্রাম বন্দরে এসেছিল। বাংলার শাসক সুলতান গিয়াস উদ্দিন আজম শাহ তার রাজধানী সোনারগাঁয়ে সাদর অভ্যর্থনা জানান চীন থেকে আসা অ্যাডমিরালকে।
সুলতান পরবর্তী সময়ে একটি দীর্ঘ গ্রিবার জিরাফসহ মূল্যবান নানা উপহার পাঠান মিং রাজার দরবারে। চীনা ঐতিহ্য অনুসারে জিরাফকে সৌভাগ্যের প্রতীক বলে মনে করা হয়। প্রাচীনকাল থেকে চীন নৌ ও স্থলশক্তিতে অত্যন্ত বলবান দেশ হওয়া সত্ত্বেও সমগ্র ইতিহাসে চীন অন্য কোনো দেশে নিজেদের উপনিবেশ স্থাপন করেনি, অন্য কোনো দেশ দখল করে নেয়নি। বরং সব দেশের স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্বের প্রতি গভীর শ্রদ্ধা প্রদর্শন করে এসেছে।
১৯৪৯ সালে চীনা বিপ্লবের অব্যবহিত পর থেকে বাংলাদেশের সঙ্গে চীনের সম্পর্ক এক নতুন রূপ নেয়। এ সম্পর্ক রাষ্ট্রীয় আনুষ্ঠানিক ক‚টনৈতিক নিয়মে আবদ্ধ ছিল না; এটা ছিল আদর্শিক ও আত্মিক সম্পর্ক। এ সম্পর্ক গড়ে উঠেছিল বাংলাদেশের বামপন্থি আন্দোলনের সূত্র ধরেই। বিগত শতাব্দীর পঞ্চাশ ও ষাটের দশকে চীনা প্রধানমন্ত্রী চৌ এন লাই একাধিকবার বাংলাদেশ (তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তান) সফর করেছেন। স্বাধীনতার আগে থেকেই চীনা কমিউনিস্ট পার্টি বাংলার জাতীয়তাবাদী নেতাদের সঙ্গে, বিশেষ করে স্বাধীন বাংলাদেশের স্বপ্নদ্রষ্টা মজলুম জননেতা মওলানা আবদুল হামিদ খান ভাসানী ও হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দীর সঙ্গে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক বজায় রেখেছিল। মশিউর রহমান যাদু মিয়া ১৯৬২ সালে পাকিস্তান জাতীয় পরিষদে বিরোধী দলের উপনেতা হিসেবে চীন সফর করেন এবং চীনের সঙ্গে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ককে এগিয়ে নিয়ে যেতে উদ্যোগী হন। সে সময় মওলানা ভাসানী অসুস্থ হয়ে পড়লে তিনিই প্রতিনিধিদলের নেতৃত্ব প্রদান করেন।
চীন-বাংলাদেশের সম্পর্কের ছন্দপতন ঘটে বাংলাদেশের স্বাধীনতা সংগ্রামকে কেন্দ্র করে। ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধের সময় দক্ষিণ এশিয়ায় জটিল ভ‚-রাজনৈতিক প্রতিদ্বন্দিতায় চীন পাকিস্তানের পক্ষে ও বাংলাদেশের বিপক্ষে অবস্থান নেয়। তৎকালীন সোভিয়েত রাশিয়ার সঙ্গে নানা কারণে চীনের বৈরী সম্পর্ক এবং ১৯৬২ সালের চীন-ভারত যুদ্ধে ভারতের সঙ্গে চীনের তিক্ততা মারাত্মক রূপ ধারণ করেছিল। এ অবস্থায় সোভিয়েত রাশিয়া ও ভারত বাংলাদেশের স্বাধীনতাযুদ্ধে বাংলাদেশের পক্ষে অবস্থান নিলে চীন দক্ষিণ এশিয়ার একমাত্র রাষ্ট্র হিসেবে পাকিস্তানের পক্ষাবলম্বন করে।
১৯৭৬ সালের জানুয়ারিতে চীনের সঙ্গে বাংলাদেশের কূটনৈতিক সম্পর্ক স্থাপিত হয়। ১৯৭৫ সালের শেষে ও ১৯৭৬ সালের শুরুতে চীন-বাংলাদেশ সম্পর্কের যে ভিত্তি রচিত হয়েছিল তার প্রধান অবলম্বন ছিল নিরাপত্তা ইস্যু। সেদিক থেকে এ সম্পর্ক সামরিক-রাজনৈতিক বলয়ের মধ্যে বৃত্তাবদ্ধ ছিল। ফলে স্বাধীনতা-উত্তর বাংলাদেশের সঙ্গে দেশটির সম্পর্কের প্রাথমিক সূত্র তৈরি হয় অস্ত্র সরবরাহের মধ্য দিয়ে।
আমাদের স্বাধীনতা যুদ্ধের সময় চীন ‘কৌশলগত’ কারণে পাকিস্তানের পক্ষে অবস্থান নিয়েছিল বিধায় চেতনাগত কারণে আমাদের প্রজন্মের অনেকের মনে খানিকটা সংশয় থাকাটা অস্বাভাবিক নয়। তবে চীনের সে সময়কার অবস্থান যে আঞ্চলিক রসায়নের বাইরে গিয়ে আন্তর্জাতিক রাজনীতির ফসল ছিল, সেটাও আমরা বুঝতে পারি। বাংলাদেশের স্থপতি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের রাজনৈতিক অনুধাবন এবং দর্শনে চীনের কী পরিমাণ প্রভাব ছিল তা বোঝা যায় তার ‘অসমাপ্ত আত্মজীবনী’ গ্রন্থের কয়েক পাতার বর্ণনায়। সেখানে তিনি তার প্রত্যক্ষ অভিজ্ঞতা, অনুধাবন, অনুভ‚তি এবং প্রতিক্রিয়া বর্ণনা করেছেন। যা আমাদের অনেক কিছু বুঝতে এবং সিদ্ধান্ত নিতে সহায়ক হিসাবে কাজ করে। ১৯৫২ সালের ১ অক্টোবর চীনের তৃতীয় স্বাধীনতা দিবসে আয়োজিত শান্তি সম্মেলনে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান এবং নানা দেশ থেকে আগত অতিথিরা অংশগ্রহণ করেন। বিপ্লবের মধ্য দিয়ে স্বাধীনতা পাওয়া চীনের প্রশাসকরা নতুন চিন্তাধারা দিয়ে মানুষের মাঝে শৃঙ্খলা ফিরিয়ে এনে যে সমৃদ্ধির পথে যাত্রা শুরু করেছেন, তার ভূয়সী প্রশংসা করেছেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান।
বাংলাদেশের জনপ্রিয় রাজনৈতিক নেতা মওলানা আবদুল হামিদ খান ভাসানী চীনের কমিউনিস্ট পার্টির চেয়ারম্যান মাও সে তুংয়ের আমন্ত্রণে চীন সফর করেছিলেন। মওলানা ভাসানী চীনা বিপ্লবের সাফল্যে চমৎকৃত হয়েছিলেন। তিনি দেশে-বিদেশে সফরকালে বারবার বলেছেন, ‘চীনের কমিউনিস্টরা তাদের দেশে জনকল্যাণে যা কিছু করছে, তার সঙ্গে ইসলামের সাম্য-মৈত্রীর বাণীর মিল রয়েছে।’ পঞ্চাশের দশকে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানও দুবার চীন সফরে গিয়েছিলেন। বাংলা ভাষার শ্রেষ্ঠ কবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর দুবার চীনে গেছেন এবং দীর্ঘ সময় অবস্থান করেন।
সেখানকার সাহিত্য-শিল্পকলা-দর্শন সম্পর্কে তার ছিল ধারণা ছিল ব্যাপক। চীনারাও কবির কাছ থেকে বাংলা ভাষা ও সাহিত্যের কথা এবং এখানকার মানুষের কথা জানেন। চীনের অনেক শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে রয়েছে রবীন্দ্র চেয়ার। তার লেখাও সেখানে জনপ্রিয়।
জিয়াউর রহমান বাংলাদেশের রাষ্ট্রপ্রধান হিসেবে দায়িত্ব পালনকালে পূর্বমুখী কূটনীতি অনুসরণ করেন। এ সময়ে চীনও বাংলাদেশের সঙ্গে সম্পর্ক উন্নয়নে যতœবান ছিল। দুই দেশের রাজনৈতিক দর্শন ভিন্ন। ভাষা-সংস্কৃতিতেও বিস্তর পার্থক্য। তারপরও আমাদের সম্পর্ক বিশ্বের রোল মডেল হয়ে আছে। কখনও তা ঝিমিয়ে পড়েনি। জিয়াউর রহমান, হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ, খালেদা জিয়া ও বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা চীন সফর করেছেন। দু’দেশের মধ্যে সম্পর্ক উন্নয়নের সর্বোচ্চ প্রচেষ্টা অব্যাহত রাখেন।
ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগসহ বিএনপি, জাতীয় পার্টি, ওয়ার্কার্স পার্টি-সাম্যবাদী দল-বাংলাদেশ ন্যাপ চীনের সঙ্গে সুসম্পর্ক কামনা করে। এ জন্য য্ত্নবান হয়। আমাদের জনগণও চায় এ মৈত্রীর বন্ধন চিরকাল অট‚ট থাকুক। আমরা এ দেশ থেকে নানাভাবে সহযোগিতা পাচ্ছি। বাণিজ্য সম্পর্ক, অবকাঠামো নির্মাণ, খেলাধুলা কত ক্ষেত্রেই না সহযোগিতা করছে চীন। প্রতিরক্ষা খাতে রয়েছে বিশেষ সহযোগিতা। বাংলাদেশের সশস্ত্র বাহিনী বিশ্বের বিভিন্ন দেশের শান্তি রক্ষায় অবদান রাখছে। তারা দক্ষ ও চৌকস বাহিনী হিসেবে সুনাম অর্জন করেছে। একটি আধুনিক ও পেশাদার বাহিনী হিসেবে যে মর্যাদা আমাদের দেশের সশস্ত্র বাহিনীর, তার পেছনে চীনের ভ‚মিকা অবশ্যই স্মরণ রাখবে।
চীন স্বাধীন হওয়ার পর প্রথমে কৃষিবিপ্লব করেছে। এ জন্য তাদের কেউ অনাহারে মারা যায়নি। শিল্পবিপ্লব হওয়ার পর চীন এখন তাদের চরিত্র পরিবর্তন করেছে। এ জন্য অকারণে তাদের প্রতি অতিভক্তি দেখিয়ে লাভ নেই। কিন্তু তাদের ভালোটি আমাদের গ্রহণ করতে হবে।
চীন জাতি বিভিন্ন শ্রেণি-পেশায় বিভক্ত ছিল। কিন্তু মাও সেতুং তাদের জাতীয়তাবাদের বিষয়ে এক করতে সক্ষম হয়েছিলেন। এ কারণেই বর্তমান আধুনিক চীনের জন্ম হয়েছে। মাও সেতুংয়ের রাষ্ট্রনীতি চীনকে আমূল বদলে দিয়েছিল। তার যোগ্য নেতৃত্বের ফলেই সামন্তবাদী সমাজ থেকে চীন অতি অল্প সময়ে আধুনিক সমাজে পরিণত হয়। জীবদ্দশায় নিজের প্রণীত রাজনৈতিক দর্শন ও বিপ্লবীতত্ত্বের জন্য মাও সেতুং যেমন পৃথিবীর নিপীড়িত মানুষের সংগ্রামের প্রতীকে পরিণত হয়েছিলেন তেমনি নানা মহলের তীব্র সমালোচনারও সম্মুখীন হয়েছিলেন।
মাও সেতুং শুধু বিপ্লবী নেতা নন, তিনি নেতাদের নেতা ছিলেন। তার কারণেই আজকে চীন নিজেদের পায়ের ওপর দাঁড়াতে পেরেছে। তবে এ জন্য তাদের অনেক লড়াই সংগ্রাম করতে হয়েছে। মাও সেতুং ছাড়া চীনের ইতিহাস কল্পনাও করা যায় না।
চীন আমাদের বন্ধু দেশ, প্রাণের দেশ। ১ অক্টোবর ২০২১ চীন বিপ্লবের ৭২তম বার্ষিকী। গণপ্রজাতন্ত্রী চীনের জাতীয় দিবস। প্রজাতন্ত্র প্রতিষ্ঠা দিবস। হাজার বছরের আধা-উপনিবেশ আধা-সামন্তবাদের অপমান আর গ্লানির জোয়াল চীন তার স্কন্ধ থেকে আজকের এই দিনে ছুড়ে ফেলে দেয়, পায়ের শৃঙ্খল খান খান করে ভেঙে ফেলে, দুই হাত উচ্চে তুলে সৃষ্টি সুখের উল্লাসে চিৎকার করে। আজ চীনের জনগণের মহামুক্তির, মহাবিজয়ের দিন।
চেয়ারম্যান মাও সেতুং-এর নেতৃত্বে বিপ্লবী চীনা মুক্তিফৌজ সমগ্র চীনকে মুক্ত করে ১ অক্টোবর ১৯৪৯ সালে। তিন লাখ জনতার বিশাল সমাবেশে তিয়েনআনমেন স্কয়ারের মঞ্চ হতে গণপ্রজাতন্ত্রী চীন প্রতিষ্ঠার ঘোষণা দেন মাও সেতুং। তিনি উদাত্তকণ্ঠে ঘোষণা করেন, ‘সমগ্র বিশ্ব চীনের বন্ধু’। চীন তার নিজের শক্ত পায়ের ওপর দাঁড়িয়েছে। সে হাজার বছরের পরাধীনতার গ্লানি, অপমান আর লজ্জাকে ঝেড়ে ফেলে দিয়েছে। ভবিষ্যতে চীন আর কখনও কোনোদিন কোনো অপমান, কোনো অবমাননা বরদাশত করবে না। মাও সেতুং তার কথা রেখেছেন। সিপিসি তার কথা রেখেছে। চীন তার কথা রেখেছে।
আজ অস্থির বিশ্ব শান্তিবাদী, সাম্যবাদী, প্রগতিবাদী গণচীনের দিকে তাকিয়ে আছে। চীনের কাছে উচ্চ প্রত্যাশা সবার। বিশ্বের শান্তি, শৃঙ্খলা, স্থিতিশীলতা এবং মানবজাতির উন্নয়ন ও প্রগতিতে চীন অনেক বড় ভূমিকা পালন করবে। মাও সেতুং বলেছিলেন, ‘গোটা বিশ্ব চীনের বন্ধু’ আগামী দিনে চীন যেমন শান্তি, অগ্রগতি ও মর্যাদার গৌরবে নতুন উচ্চতায় উন্নীত হবে তেমনি বাংলাদেশসহ প্রতিবেশী সব দেশ, সমগ্র এশিয়া অঞ্চল তথা সমগ্র বিশ্বকে শান্তিময়, সম্প্রীতিরময়, কল্যাণময়, মঙ্গলময়, নান্দনিক করে তুলতে প্রভুত অবদান রাখবে বলে বিশ্বাস। মহান গণচীনের ৭২তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর শুভদিনে আমাদের প্রাণঢালা অভিনন্দন। জয় হোক গণচীনের। জয় হোক গণচীনবাসীর। জয় হোক চীন-বাংলাদেশ মৈত্রীর।