‘মরিশাসে ধর্ষণের ঘটনায় গোলাম রাব্বি ইন্টারন্যাশনালকে জড়িয়ে মানবপাচার ও দমন আইনে যে মামলা হয়েছে তা উদ্দেশ্যপ্রণোদিত ও মিথ্যা। আইন মেনেই সকল কাজ করার পরও মিথ্যা মামলার ফলশ্রুতিতে আমাকে জেলহাজতে যেতে হয়েছে এবং আমার এজেন্সি আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত ও মানুষের বিশ্বস্ততা হারিয়েছে।’
‘৫ এপ্রিল ২০১৯ মরিশাসের প্যারামাউন্ট টেক্সটাইল লিমিটেড রাব্বি ইন্টারন্যাশনালকে ২০৫ জন কর্মীর চাহিদাপত্র পাঠায় যা মরিশাসের বাংলাদেশ হাইকমিশন কর্তৃক সত্যায়িত ছিল। পরবর্তীতে দেশটি থেকে ওয়ার্ক পারমিট পাঠানোর পর ব্যুরো অব ম্যানপাওয়ার ইমপ্লয়মেন্ট ও ট্রেইনিংয়ের ছাড়পত্র নিয়ে লিখিত চুক্তির মাধ্যমে সকল আইন মেনেই তাকে সেই দেশে পাঠানো হয়েছে।’
রোববার (২৬ সেপ্টেম্বর) বায়রা সাধারণ সদস্যদের ব্যানারে ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির সাগর রুনি হলে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে গোলাম রাব্বি ইন্টারন্যাশনালের মালিক আক্তার হোসেন এসব কথা বলেন।
বিভিন্ন রিক্রুটিং এজেন্সির মালিকদের বিরুদ্ধে মিথ্যা মানব পাচারের মামলায় হয়রানির শিকারের প্রতিবাদে এবং মানব পাচার আইন সংশোধনের দাবীতে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ও প্রবাসী কল্যানমন্ত্রীর হস্তক্ষেপ কামনা করে বায়রার সাধারন সদস্যদের পক্ষ থেকে এই সংবাদ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়।
আক্তার হোসেন বলেন, মরিশাসে যদি সেই নারীর সঙ্গে অন্যায় হয়েও থাকে তাহলে সেদেশে অবস্থিত দূতাবাস বা সরকার দুদেশীয় তদন্তের মাধ্যমে বিচার করুক। এ ঘটনায় মামলার পর সংবাদমাধ্যমে আসলে বিষয়টি আমি জানতে পারি। কিন্তু এর আগে আমাদের কাছে কোনো কিছু সেই নারীর পক্ষ থেকে জানানো হয়নি। আমরা লাইসেন্স ও বৈধ কাগজপত্র নিয়ে জনশক্তি পাঠানোর জন্য কাজ করলেও কীভাবে আমরা মানবপাচারকারী হলাম। যারা নৌপথে, ট্রলারে অবৈধভাবে বিদেশে মানবপাচারে জড়িত তাদের কঠিন শাস্তির আওতায় আনা হোক।
তিনি বলেন, আমি জীবনের বেশিরভাগ সময়ই মরিশাসে কাটিয়েছি, এর ফলে সেদেশের ভাষা ও গণ্যমান্য ব্যক্তিদের সঙ্গে আমার ভালো সম্পর্ক গড়ে ওঠে। ২০১০ সালে দেশে এসে জনশক্তি কর্মসংস্থান ও প্রশিক্ষণ ব্যুরো থেকে রিক্রুটিং লাইসেন্স নিয়ে জনশক্তি পাঠানোর কাজ করে আসছি। আমি প্রায় আট থেকে ১০ হাজার কর্মী সে দেশে পাঠাই যা আমাদের বিদেশে শ্রমবাজার ও বৈদেশিক মুদ্রা অর্জনে বড় ভূমিকা পালন করেছে।
সংবাদ সম্মেলনে মুল বক্তব্য উপস্থাপন করেন মানব পাচার আইনের ভুক্তভোগী মেসার্স গোলাম রাব্বী ইন্টারন্যাশনাল এর স্বত্ত্বাধিকারীহাজী মোঃ আকতার হোসেন এর পক্ষে উপস্থাপন করেন বাংলাদেশ জাতীয় মানবাধিকার সমিতির চেয়ারম্যান মো. মঞ্জুর হোসেন ঈসা। বক্তব্য রাখেন রিক্রুটিং এজেন্সী ঐক্য পরিষদের সাধারণ সম্পাদক আরিফুর রহমান, বায়রা কল্যাণ পরিষদের মহাসচিব লিমা বেগম, ইস্টল্যান্ড নেটওয়ার্কের স্বত্ত্বাধিকারী গোলাম মোস্তফা বাবুল, মাহাবুব ইন্টারন্যাশনালের আহামুদুর রহমান, মানবাধিকার প্রতিষ্ঠা ও বাস্তবায়ন সংস্থার পরিচালক আব্দুল্লাহ আল মামুন, সবুজ আন্দোলন পরিচালনা ও প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান বাপ্পি সরদার, মরিশাস থেকে সফলভাবে দেশে ফিরে আসা প্রতিনিধিদের পক্ষ বক্তব্য রাখেন ইয়াসমিন আক্তার। উপস্থিত ছিলেন সেন্টু দত্ত, মো. লিটন, আরিফ হোসেন, আব্দুস সাত্তার, আলো বেগম, রাশেদা বেগম, জেসমিন আক্তার, রাজন সাহা। যারা রাব্বি ইন্টারন্যাশনালের পক্ষ থেকে মরিশাসে গিয়ে আবার সফলভাবে ফিরে এসেছেন।
রিক্রুটিং এজেন্সি সমিতির সভাপতি এম টিপু সুলতান বলেন, যারা লাইসেন্স নিয়ে বৈধ উপায়ে বিদেশে জনশক্তি পাঠাচ্ছে, যাদের মাধ্যমে বিদেশি শ্রমবাজারে আমাদের দেশের অনেক বেকার জনশক্তি কাজ পেয়েছে, যাদের অবদানে আমাদের দেশে বিপুল পরিমাণ বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন হচ্ছে; তাদের এভাবে হয়রানি এ ব্যবসাকে হুমকির মুখে ফেলবে। এ ধরনের মিথ্যা মামলায় ব্যবস্থা নেওয়া হলে রিক্রুটিং এজেন্সি ব্যবসায় কেউ আসতে চাইবে না। এতে দেশ শ্রমবাজার হারাবে। এ শ্রমবাজার অন্য দেশ দখল করবে।
মরিশাসের এ ঘটনার ফলে সেদেশের বিশাল বাজার আজ হুমকির মুখে। সম্প্রতি আমরা ৫০০ জন কর্মচারীর চাহিদাপত্র পাওয়ার কথা থাকলেও তা হারিয়েছি। এই চাহিদাপত্র ভারত পেয়েছে। এ ধরনের মামলা কোনো বিশেষমহলের উসকানি কিংবা ষড়যন্ত্র কিনা তা খুঁজে বের করতে হবে।
অনুষ্ঠানে বক্তারা বলেন, ২০১২ সালের মানবপাচার আইন একটি কালো আইন। এই আইনে অভিযুক্ত জামিন পায় না। বাদী চাইলেও মামলা উঠিয়ে নিতে পারেন না। সেখানে অভিযুক্তের আত্মপক্ষ সমর্থনের কোনো সুযোগ নেই। এই আইন সংশোধন করা প্রয়োজন।
উল্লেখ্য, মরিশাসে ধর্ষণের অভিযোগ তুলে এক নারী রাজধানীর রামপুরা থানায় মানবপাচার এবং নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনের পৃথক ধারায় মামলা করেন।