দেশের বিশিষ্ট নাগরিক বিচারপতি মীর হাসমত আলী বলেছেন, করোনাকালে ক্ষতির সঙ্গে শিক্ষা খাতে সৃষ্ট বিপর্যয় অভিভাবক, শিক্ষক, শিক্ষার্থী এবং রাষ্ট্রকে প্রতিনিয়ত ভাবিয়ে তুলছে। এ অবস্থার পরিত্রাণ কীভাবে সম্ভব? এই বিষয়ে সরকারকে কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহন করতে হবে। বাংলাদেশের শিক্ষা ব্যবস্থায় চলমান ত্রুটি করোনার সময় আরও বড় আকার ধারণ করেছে।
শনিবার (২৫ সেপ্টেম্বর) রাজধানীর শিশু কল্যাণ পরিষদ মিলনায়তনে অনন্যা সোসাল ফাউন্ডেশন আয়োজিত “বৈশ্বিক করোনা মহামারী ও আমাদের বর্তমান শিক্ষার প্রেক্ষাপট” শীর্ষক আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।
তিনি বলেন, শিক্ষা প্রক্রিয়া বন্ধ না থাকলেও প্রযুক্তিগত প্রক্রিয়া ব্যবহার করে অনলাইনে শিক্ষা ব্যবস্থা চালু করা হয়েছে। কিন্তু অনলাইন প্রক্রিয়ায় শিক্ষা কার্যক্রম সচল রাখার জন্য যেসব উপায়ের সহজলভ্যতা প্রয়োজন তা সঠিকভাবে ব্যবস্থা করা সম্ভব হয়নি।
তিনি বলেন, কম্পিউটার, মোবাইল, ইন্টারনেট সংযোগ ও গতি এবং নিরবচ্ছিন্ন বিদু্যৎ সুবিধাগুলো অপরিহার্য। এসব সুবিধার কথা বিচার করলে আমাদের অবস্থান কোথায় তা সহজেই অনুমেয়। শিক্ষার ভার্চুয়াল পস্ন্যাটফর্ম এমন একটি বিষয় যেখানে উপকরণের সহজলভ্যতা ও ব্যবহারে আগ্রহের মানসিকতা সর্বাগ্রে প্রয়োজন। বাংলাদেশসহ অনেক দেশের জন্য অনলাইন শিক্ষা ব্যবস্থা নতুন অভিজ্ঞতা। তবে সেই অভিজ্ঞতা সচল রাখার সহায়ক উপায়ের ব্যবস্থা বজায় রাখার জন্য সরকারের পর্যাপ্ত বাজেট বরাদ্দ ও প্রশিক্ষণের প্রয়োজন রয়েছে।
সংগঠনের সভাপতি মো. মুজিবুর রহমান খোকনের সভাপতিত্বে আলোচনায় অংশগ্রহন করেন বাংলাদেশ ন্যাপ মহাসচিব এম. গোলাম মোস্তফা ভুইয়া, গণ রাজনৈতিক জোট-গর্জো সভাপ্রধান সৈয়দ মঈনুজ্জামান লিটু, জাতীয় মানবাধিকার সমিতির চেয়ারম্যান মো. মঞ্জুর হোসেন ঈসা প্রমুখ।
বাংলাদেশ ন্যাপ মহাসচিব এম. গোলাম মোস্তফা ভুইয়া বলেন, করোনাকালে জীবন ও জীবিকার মধ্যে সমন্বয় সাধন করতে গিয়ে শিক্ষা খাতে যথেষ্ট মনোযোগ দেওয়া হয়েছে। সরকার অনেক কিছুর আশ্বাস দিলেও বাস্তবতায় ভিন্ন সুর। আমাদের শিক্ষা খাত উপেক্ষিত। শুধু করোনাকালে নয়, সব সময়ই উপেক্ষিত।
তিনি বলেন, শিক্ষা ব্যবস্থা নিয়ে আরও মনোযোগী হতে হবে। শিক্ষা ব্যবস্থা নিয়ে এ দেশে রাজনীতি হয়েছে বেশি। কিন্তু শিক্ষার গুণগতমান বৃদ্ধি ও প্রচলিত অব্যবস্থাপনা কাটিয়ে উঠতে সমন্বিত উদ্যোগে রাজনীতির শুভ দৃষ্টিভঙ্গি ও ইতিবাচক মনোভাব প্রয়োগ হয়েছে কম। যা আশানুরূপ নয়। সেই রাজনীতি এখনো চলছে, গভীরভাবে কান পেতে শুনলে সেই ষড়যন্ত্রের শব্দ শোনা যায়।
গর্জো সভাপ্রধান সৈয়দ মঈনুজ্জামান লিটু বলেন, করোনাকালে শিক্ষা কার্যক্রম পরিচালনা করতে গিয়ে কতিপয় নিত্য-নতুন সমস্যা সৃষ্টি হয়ছে। যা অভিভাবকসহ সরকারকে নতুন করে ভাবনায় ফেলেছে। এর মধ্যে অন্যতম হলো-প্রযুক্তিগত আসক্তি। শিক্ষার্থীরা ক্লাস সময়ের পরে অনলাইনে বিভিন্ন কনটেন্ট উপভোগ করছে। যা অধিকাংশ ক্ষেত্রে অগ্রহণযোগ্য ও নীতি-নৈতিকতা বিরুদ্ধ।
মানবাধিকার সংগঠক মো. মঞ্জুর হোসেন ঈসা বলেন, করোনা কালিন এই সময়ে অভিভাবকদের অজ্ঞতার সুযোগ নিয়ে সন্তানরা পড়াশোনার কথা বলে টিকটক, লাইকি, পর্নো ভিডিও, লাইভ শো, প্রেমের সম্পর্কে জড়িয়ে পড়ছে। আবার অনেকে মাদকের সঙ্গে জড়িয়ে পড়ছে। জড়িয়ে পড়ছে সেবনে, জড়িয়ে পড়ছে মাদক বাণিজ্যে। তরুণদের এই অংশটি সমাজ বিরুদ্ধ আচরণধারা নিয়ে বড় হবে এবং সমাজের প্রচলিত মূল্যবোধ ও আদর্শের বিরুদ্ধে প্রযুক্তিগত আধুনিকতা দ্বারা প্রভাবিত হবে। যা বিপদসংকেত সৃষ্টি করবে পরিবারের জন্য, সমাজের জন্য এবং নাগরিকদের নিয়ে রাষ্ট্রের লক্ষ্য পূরণে।