কুরবানি করার মধ্য দিয়ে এই ঈদে মুসলিমরা ত্যাগের মহিমায় মহিমান্বিত হবে। এরই মধ্যে শুরু হয়েছে পশুর হাটে কেনাবেচা। অনলাইনেও পশু কিনছেন অনেকেই।
তবে আপনি কুরবানির যে পশুটি কিনছেন, সেটি কি সুস্থ ও নিরাপদ কিনা, তার মাংস খাওয়া নিরাপদ হবে কিনা- এসব বিষয়ে ভাবতে হবে।
কারণ এ সময় অনেক পশু কুরবানি দেওয়া হয়। সেই সুযোগে অসাধু পশু ব্যবসায়ীরা পশুর ওপর অমানবিক আচরণ করে। সেই অমানবিক আচরণের প্রভাব পড়ে ক্রেতাদের ওপর। কারণ সেই পশুটি নিরাপদ নয়। তাকে দেওয়া হয়েছে অবৈধ ওষুধ। গরু মোটাতাজাকরণ ট্যাবলেট ব্যবহার করা হয়েছে।
মোটাতাজাকরণে যে ওষুধ ব্যবহার করা হয়েছে, তা মানবদেহের জন্য খুবই ক্ষতিকর। গরু মোটাতাজাকরণে ব্যবহার করা হয় স্টেরয়েড, যা মানুষের জন্য ক্ষতিকর।
নিরাপদ কুরবানির ক্ষেত্রে পশু পালনকারী, পশু বিক্রেতা এবং ক্রেতাকে কিছু জিনিস লক্ষ্য রাখার বিষয়ে পরামর্শ দিয়েছে বাংলাদেশ নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষ এবং প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তর।
যারা গরু লালন-পালন তো দূরের কথা, পাশে থেকে ভালোভাবে কখনও দেখেননি; শুধু কুরবানির জন্য গরু কিনতে গিয়ে অল্পসময়ে ভেতর তিনি কীভাবে বুঝবেন- স্টেরয়েড ব্যবহার করা হয়নি?
এ বিষয়ে প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের সহকারী পরিচালক ডা. এবিএম খালেকুজ্জামান বলেছেন, ‘একটা গরুর চামড়ায় আঙুল দিয়ে চাপ দেওয়ার পর যদি আঙুলের ছাপ লেগে থাকে, চামড়ার নিচে যদি পানি জমে এবং সহসা চামড়াটা আগের অবস্থায় ফিরে না আসে, তা হলে বুঝতে হবে গরুটিকে মোটাতাজা করতে গিয়ে অবৈধ উপায়ে হরমোন বা ওষুধ ব্যবহার করা হয়েছে।
তিনি আরও বলেন, এ ধরনের গরুর চাহনিতে ঘুম ঘুম ভাব থাকবে। চোখ দেখলে মনে হবে, গরুটা ঘুমিয়ে যাচ্ছে। চোখের চাহনি চঞ্চল বা পরিষ্কার হবে না। এ ছাড়া গরুটিকে খুব ক্লান্ত মনে হবে। সুস্থ গরু চঞ্চল হয়, নড়াচড়া করে। কিন্তু স্টেরয়েড বা হরমোন দেওয়া গরু তেমন নড়াচড়া করবে না।
এ ছাড়া সুস্থ-সবল পশু চেনার উপায় হচ্ছে— সতেজ, স্বাভাবিক ভঙ্গি, জাবর কাটা, নাকের নিচে লোমবিহীন অংশে (মাজল) ভেজা ভাব ও উজ্জ্বল চেহারা থাকবে। তার গায়ে হাত দিলে চামড়াতে একটু কাঁপুনি দেবে এবং মাছি তাড়ানোর মতো করে লেজ নাড়াবে।
আর অসুস্থ পশু পিঠ ওপরের দিকে বাঁকা করে দাঁড়িয়ে থাকে, ভাঙাস্বরে বেশি বেশি ডাকাডাকি করে। এ ছাড়া অতিরিক্ত পরিমাণে লাফানো এবং পানি খেতে অনীহা বা ভয় পায়। পশু রোগাক্রান্ত হলে শরীরের চামড়া কুচকে অতিরিক্ত হাড্ডিসার হয়ে যায়। এ ছাড়া পশুর চামড়ায় উশকোখুশকো লোম, ক্ষত ও চর্মরোগের উপস্থিতি দেখা গেলেও বুঝতে হবে তার সেটি রোগাক্রান্ত।
এ ছাড়া রোগাক্রান্ত পশুর মুখ থেকে অনবরত লালা ঝরা, মুখে ও পায়ে ক্ষত, তীব্র ডায়রিয়া এবং পায়ুপথে পুঁজ, ওলান/অণ্ডকোষ অস্বাভাবিক ফোলা থাকা, শ্বাসকষ্ট, নাকে সর্দি ভাব ও রক্ত মিশ্রিত গাঁজলা (ঘন ফেনা) থাকবে।