সংক্রমণ বেড়ে যাওয়ায় রাজধানীর আশপাশের সাত জেলায় সোমবার লকডাউন ঘোষণার পর ঢাকার সঙ্গে সারা দেশে বাস, ট্রেন ও লঞ্চ যোগাযোগ বন্ধ হয়ে গেছে। এতে মঙ্গলবার জরুরি প্রয়োজনে ঢাকায় আসা ও রাজধানী থেকে বাইরে যাওয়া মানুষগুলো চরম ভোগান্তির শিকার হয়েছেন। বৃষ্টিস্নাত সকালে জলজট ও যানজটে বিপর্যস্ত শত শত মানুষ গাবতলী, সায়েদাবাদ, সাইনবোর্ড এবং আবদুল্লাহপুর প্রবেশ ও বহির্গমন পথে হেঁটে চলাচল করেছেন। গণপরিবহণ না পেয়ে নারী-পুরুষ নির্বিশেষ ব্যাগ হাতে-কাঁধে এবং মাথায় নিয়ে গন্তব্যের উদ্দেশ্যে রওনা হয়েছেন। এ সময় বয়স্ক মানুষ নারী এবং শিশুদের বেশি কষ্ট হয়েছে।
এদিকে সোমবার লকডাউন ঘোষণার পর রাতেই বাস, যাত্রীবাহী নৌযান বন্ধের ঘোষণা আসে। এরপর ট্রেন চলাচলে দেওয়া হয় বিধিনিষেধ। কিন্তু মঙ্গলবার মধ্য রাত থেকে ঢাকার সঙ্গে সারা দেশের ট্রেন যোগাযোগ বন্ধ করে দেওয়া হয়।
ফলে আজ ঢাকা থেকে কোনো ট্রেন ছেড়ে যাবে না এবং রাজধানীতে প্রবেশও করবে না। তবে ঢাকা ছাড়া দেশের অন্যান্য সেকশনে ট্রেনগুলো আপাতত চলবে। করোনা পরিস্থিতির আরও অবনতি ঘটলে সেগুলোও বন্ধ হয়ে যাবে। এ প্রসঙ্গে রেলপথমন্ত্রী মো. নূরুল ইসলাম সুজন বলেছেন, যে কোনো সময় সব যাত্রীবাহী ট্রেন চলাচল বন্ধ করে দেওয়ার সিদ্ধান্ত আসতে পারে। তিনি বলেন, করোনা সংক্রমণ প্রতিরোধে ট্রেন চলাচল বন্ধ করে দেওয়াই সবচেয়ে মঙ্গল কাজ। যাত্রীদের সেবা দিতে গিয়ে তাদের বিপদে ফেলতে পারি না।
লকডাউনের প্রথম দিন মঙ্গলবার জলজট, যানজটের ধকল মাড়িয়ে কর্মব্যস্ত, জরুরি প্রয়োজনে বের হওয়া মানুষকে বিকল্প উপায়ে গন্তব্যে পৌঁছানোর চেষ্টা করতে দেখা গেছে। আর্থিক সামর্থ্যরে ভিত্তিতে তারা বেছে নিয়েছেন মাইক্রোবাস, প্রাইভেটকার, সিএনজি অটোরিকশা, মোটরসাইকেল, ইজিবাইক ও ব্যাটারিচালিত রিকশা। এসব বাহনে চড়েও মানুষকে রাজধানীতে প্রবেশ ও বাইরে যেতে দেখা গেছে। এজন্য গুনতে হয়েছে অতিরিক্ত ভাড়া। বিধিনিষেধ উপেক্ষা করে ঢাকা থেকে বের হওয়া ও প্রবেশ করা মানুষকে স্বাস্থ্যবিধির ব্যাপারেও অসচেতন দেখা গেছে। পুলিশের কিছুটা তৎপরতা থাকলেও সার্বিক পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে সেটা বড় ভ‚মিকা রাখতে পারেনি।
এ প্রসঙ্গে নগর ও জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ ম. ইনামুল হক যুগান্তরকে বলেন, সরকার করোনার সংক্রমণ রোধে ঢাকার আশপাশের সাত জেলায় লকডাউন দিয়েছে। এর মধ্যে হঠাৎ করে সারা দেশের গণপরিবহণ বন্ধের সিদ্ধান্ত আসে। আগে থেকে প্রস্তুতি না থাকায় সাধারণ মানুষের দুর্ভোগ বেড়েছে। গণপরিবহণ বন্ধ হয়ে যাওয়ায় জনজীবন বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে।
অপর এক বিশেষজ্ঞ বলেন, করোনার সংক্রমণ বৃদ্ধির লক্ষণ কয়েক দিন ধরেই দেখা যাচ্ছে। এ পরিস্থিতিতে সরকার ২-১ দিনের সময় নিয়ে লকডাউনের ঘোষণা দিলে মানুষ প্রস্তুতি নেওয়ার সময় পেত। যারা ঢাকার বাইরে আছেন তারা ফিরতে পারতেন। একইভাবে যাদের ঢাকা ছাড়ার কথা তারা চলে যেতে পারতেন। কিন্তু এখন হঠাৎ লকডাউনের সিদ্ধান্ত নেওয়ায় গণপরিবহণ বন্ধ হয়ে গেছে। আটকে পড়া মানুষগুলোর ঘরে ফিরতে সীমাহীন দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে। অথচ ইচ্ছা করলেই এ দুর্ভোগ এড়ানো সম্ভব হতো।
সকালে সরেজমিন দেখা গেছে, ঢাকার সায়েদাবাদ বাস টার্মিনাল এলাকায় শত শত মানুষ ঢাকা ছেড়ে যাওয়ার জন্য অপেক্ষা করছেন। ঢাকা ছাড়ার জন্য এদিন বা সময়টি তারা আগে থেকেই ঠিক করে রেখেছিলেন। অনেকের আগাম টিকিট করা ছিল। তাদের অধিকাংশকেই জানানো হয়নি দূরপাল্লার বা ঢাকা থেকে কোনো বাস ছাড়বে না। দুর্ভোগে পড়েছেন আশপাশের জেলায় বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে কর্মরত মানুষগুলো। সরকারের বিধিনিষেধের কারণে সরকারি প্রতিষ্ঠান বন্ধ ঘোষণা করা হলেও গার্মেন্টসহ অনেক বেসরকারি প্রতিষ্ঠান খোলা রয়েছে। যে কোনোভাবে তাদের অফিসে যেতে হবে। একই চিত্র ছিল গাবতলী, আবদুল্লাহপুর, সদরঘাট, গুলিস্তান, ফুলবাড়ীয়া এলাকায়।