বঙ্গোপসাগর ও তত্সংলগ্ন এলাকায় একটি লঘুচাপ সৃষ্টি হয়েছে, যা ঘূর্ণিঝড়ে রূপ নিতে পারে। আবহাওয়াবিদরা এই শঙ্কা প্রকাশ করে বলেছেন, আগামী বুধবার ‘ইয়াস’ নামের এই ঘূর্ণিঝড় ভারতের পশ্চিমবঙ্গ ও বিহার এবং বাংলাদেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চল অর্থাৎ খুলনা উপকূলে আঘাত হানতে পারে। ওমানের পক্ষ থেকে দেওয়া নাম ‘ইয়াস’-এর বাংলা অর্থ ‘ধ্বংসকারী’। এদিকে দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে চলমান মৃদু থেকে মাঝারি মাত্রার তাপপ্রবাহ লঘুচাপের প্রভাবে অব্যাহত থাকতে পারে।
লঘুচাপটি ঘূর্ণিঝড়ে রূপ নিলে এর বাতাসের গতিবেগ ঘণ্টায় ৯০ থেকে ১১০ কিলোমিটারে উঠতে পারে। গতকাল শনিবার থেকেই চট্টগ্রাম, কক্সবাজার, মোংলা ও পায়রা সমুদ্রবন্দরকে ১ নম্বর দূরবর্তী সতর্কতা সংকেত দেখাতে বলেছে আবহাওয়া অধিদপ্তর। সেই সঙ্গে মাছ ধরার সব নৌকা ও ট্রলারকে গভীর সাগরে বিচরণ না করতে বলা হয়েছে। নৌকা ও ট্রলারগুলোকে আজ রবিবারের মধ্যে উপকূলে ফিরে আসতে বলা হয়েছে।
এদিকে সম্ভাব্য ঘূর্ণিঝড় মোকাবেলায় আগাম প্রস্তুতি নিতে গতকাল বৈঠক করেছে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়। প্রতিমন্ত্রী এনামুর রহমানের সভাপতিত্বে সভায় জানানো হয়, লঘুচাপটি এখনো হাজার কিলোমিটার দূরে রয়েছে। প্রাথমিকভাবে ১ নম্বর দূরবর্তী সংকেত দেওয়া হয়েছে। এটি নিম্নচাপে রূপ নিয়ে ধীরে ধীরে উপকূলের দিকে অগ্রসর হলে পরবর্তী সময়ে সংকেত বাড়ানো হবে। ২৫ মে রাত বা তারপর এটি পশ্চিমবঙ্গ-বাংলাদেশ উপকূল অতিক্রম করতে পারে। এ জন্য সব ধরনের সতর্কতামূলক ব্যবস্থা রাখতে হবে।
আবহাওয়াবিদ আব্দুল মান্নান গত রাতে কালের কণ্ঠকে বলেন, লঘুচাপটি সুস্পষ্ট লঘুচাপ, নিম্নচাপ এবং এরপর ঘূর্ণিঝড়ে রূপ নিতে পারে। এরই মধ্যে সমুদ্রবন্দরগুলোকে ১ নম্বর সতর্কতা সংকেত দেখাতে বলা হয়েছে। এটি ভারতের পশ্চিমবঙ্গ, বিহার ও বাংলাদেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলে আঘাত হানতে পারে। তবে দেশের পুরো উপকূলীয় এলাকায়ই এই ঘূর্ণিঝড়ের প্রভাব থাকবে।
ভারতের পশ্চিমবঙ্গের আবহাওয়া দপ্তর গতকাল পূর্বাভাস দিয়েছে, লঘুচাপের প্রভাবে আগামীকাল সোমবার থেকেই রাজ্যে আবহাওয়ার পরিবর্তন লক্ষ করা যাবে। ওড়িশা ও পশ্চিমবঙ্গ উপকূলে ৪০ থেকে ৫০ কিলোমিটার বেগে ঝোড়ো হাওয়া বয়ে যেতে পারে। পরের দিন মঙ্গলবার থেকে শুরু হবে বৃষ্টি। বুধবার থেকে ভারী বৃষ্টির সঙ্গে ঘূর্ণিঝড়টি আছড়ে পড়ার আশঙ্কা রয়েছে। ‘ইয়াস’ পশ্চিমবঙ্গ, সংলগ্ন উত্তর ওড়িশা এবং বাংলাদেশ উপকূল অতিক্রম করবে।
এদিকে রাঙামাটি, কুমিল্লা, চাঁদপুর, নোয়াখালী, ফেনী, পাবনা জেলাসহ ঢাকা, খুলনা ও বরিশাল বিভাগের ওপর দিয়ে মৃদু থেকে মাঝারি মাত্রার তাপপ্রবাহ বয়ে যাচ্ছে এবং তা অব্যাহত থাকতে পারে। এ ছাড়া ময়মনসিংহ ও সিলেট বিভাগের কিছু কিছু জায়গায় এবং কুষ্টিয়া অঞ্চলসহ রংপুর, রাজশাহী, ঢাকা ও চট্টগ্রাম বিভাগের দু-এক জায়গায় অস্থায়ীভাবে দমকা, ঝোড়ো হাওয়াসহ বজ বৃষ্টি হতে পারে।
গতকাল দেশের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে রাঙামাটিতে ৩৮.৬ ডিগ্রি সেলসিয়াস।