পরিস্থিতির কারণে এক বছর আগে দেশে ফেরত আসা প্রবাসী কর্মীদের ৪৭ শতাংশই এখনও কর্মহীন আছেন। ফলে দৈনন্দিন খরচ চালাতে তাদের অনেককেই পরিবারের ওপর নির্ভরশীল বা আত্মীয়-স্বজনের কাছ থেকে ধার-দেনা করতে হচ্ছে। বিদেশফেরতদের ৫৩ শতাংশ বর্তমানে কৃষিকাজ, ছোট ব্যবসা বা শ্রমিক হিসেবে কাজ করছেন। তবে, বিদেশফেরতদের ৯৮ শতাংশই এখনও তাদের ভবিষ্যৎ নিয়ে চরম উদ্বিগ্ন।
বেসরকারি সংস্থা ব্র্যাকের মাইগ্রেশন প্রোগ্রামের ‘বিদেশফেরতদের আর্থ-সামাজিক পরিস্থিতি অন্বেষণ এবং বিশ্লেষণ’ শীর্ষক জরিপে এসব তথ্য উঠে এসেছে। শুক্রবার (৩০ এপ্রিল) অনলাইনে এ প্রতিবেদন প্রকাশ করা হয়।
ব্র্যাকের অভিবাসন কর্মসূচির প্রধান শরিফুল হাসান প্রতিবেদনটি তুলে ধরেন। তিনি জানান, বিশ্বব্যাপী করোনা সংক্রমণ শুরুর পর গত বছরের মার্চ-এপ্রিলে ফেরত আসা প্রবাসী কর্মীদের সঙ্গে কথা বলে ২২ মে একটি জরিপ প্রতিবেদন প্রকাশ করেছিল ব্র্যাক। এক বছর পর পরিস্থিতির কতটা উন্নতি হয়েছে সেটা জানতেই ফের জরিপ করা হয়।’
গুণগত এবং পরিমাণগত—উভয় পদ্ধতিতেই দেশের সাতটি বিভাগের অভিবাসনপ্রবণ ৩০ জেলায় এ বছরের মার্চ ও এপ্রিলে জরিপ চালানো হয়। গত বছর যাদের সঙ্গে কথা বলেছিল ব্র্যাক, তারাসহ এবার মোট ১ হাজার ৩৬০ জন বিদেশফেরত প্রবাসী কর্মীর সঙ্গে কথা বলার চেষ্টা করেছে ব্র্যাক। তাদের মধ্যে ২০৭ জন পুনরায় বিদেশে গেছেন। একটা বড় অংশকেই ফোনে পাওয়া যায়নি। অনেকেই তথ্য দিতে রাজি হননি। তবে ৪১৭ জন বিদেশফেরত ব্যক্তি বিস্তারিত তথ্য দিয়েছেন। তাদের উত্তরের ভিত্তিতেই জরিপ প্রতিবেদনটি করা হয়েছে।
উত্তরদাতাদের বেশিরভাগই সৌদি আরব, সংযুক্ত আরব আমিরাত, মালয়েশিয়াসহ বিভিন্ন দেশ থেকে ফিরেছেন। গবেষণায় অংশগ্রহণকারীদের মধ্যে ৯৫.৬৮ শতাংশ পুরুষ এবং এবং ৪.৩২ শতাংশ নারী। তাদের মধ্যে বেশিরভাগই গ্রামে বাস করছেন (৮৮.০১%) এবং বাকিরা শহর এলাকায় বসবাস করছেন (১১.৯৯%)।
জরিপের ফলে দেখা গেছে, গত বছর বিদেশফেরতদের ৮৭ শতাংশ জানিয়েছিলেন, তাদের কোনো আয়ের উৎস নেই। এবার দেখা গেছে, উত্তরদাতাদের প্রায় ৫৩ শতাংশ (৫২.৭৭) কোনো না কোনো কাজে নিজেকে যুক্ত করতে পেরেছেন। এর মধ্যে ২৪ দশমিক ১৯ শতাংশ কৃষি কাজে যুক্ত হয়েছেন, ২২ দশকি ৩৩ শতাংশ দিনমজুরি বা এ ধরনের কোন কাজে যুক্ত হয়েছেন এবং ৩৫.৩৫ শতাংশ ছোট ব্যবসা শুরু করেছেন। এছাড়া, ১৭ দশমিক ৬৭ শতাংশ অন্যান্য কাজ করছেন।
তবে উত্তরদাতাদের মধ্যে ৪৭ শতাংশ (৪৭ দশমিক ২২ শতাংশ) বিদেশফেরত ব্যক্তিই গত এক বছরেও কোনো প্রকার কাজ যোগাড় করতে পারেননি।
উত্তরদাতাদের ২৮ শতাংশ জানিয়েছেন, তারা ইতোমধ্যেই ধার-দেনায় জর্জরিত হয়েছেন এবং ৭২ শতাংশ জানিয়েছেন, তারা ফের বিদেশে যেতে চান।
প্রতিবেদনে প্রবাসীদের বর্তমান মানসিক অবস্থাও উঠে আসে। গতবছর অংশগ্রহণকারীদের ৭৪ শতাংশ জানিয়েছিলেন, তারা ভবিষ্যত নিয়ে প্রচণ্ড দুশ্চিন্তা, মানসিক চাপ, উদ্বেগ ও ভীতির মধ্যে আছেন। কিন্তু এবার ৯৮ শতাংশ উত্তরদাতাই বলেছেন, অপর্যাপ্ত আয়, বেকারত্ব, পুনরায় বিদেশ যেতে না পারা, পারিবারিক চাপ ইত্যাদির কারণে চরম উদ্বেগ এবং মানসিক চাপের মধ্যে আছেন।
দেশে ফেরত আসা প্রবাসীরা বলছেন, ৭১ শতাংশই প্রতিবেশী বা আত্মীয়-স্বজনদের কাছ থেকে সহযোগিতামূলক আচরণ পেয়েছেন। তবে ২৯ শতাংশ জানিয়েছেন, তারা তাদের প্রতিবেশীদের কাছ থেকে কোনো ধরনের সহযোগিতামূলক আচরণ পাননি।
কোভিড শুরুর পর গত বছরের মার্চ থেকে এই বছরের এপ্রিল পযর্ন্ত প্রায় ৫ লাখ প্রবাসী দেশে ফেরত আসতে বাধ্য হয়েছেন। তাদের মধ্যে অনেকে ফিরেছেন আতঙ্কে, অনেক ফিরেছেন চাকরি হারিয়ে, কেউ ফিরেছেন স্থায়ীভাবে আবার কেউ বা কেবল ছুটি নিয়ে দেশে এসেছিলেন।
উত্তরদাতাদের মধ্যে ৩৫ শতাংশ ছুটিতে দেশে এসেছিলেন। ১৯ শতাংশ জানিয়েছেন, তারা চাকরি হারিয়ে দেশে ফিরতে বাধ্য হয়েছেন। ১৬ শতাংশ জানিয়েছেন, তারা ফিরতে বাধ্য হয়েছেন। ১২ শতাংশ বলেছেন, তারা একেবারেই চলে এসেছেন এবং ২ শতাংশ অসুস্থতার কারণে ফিরেছেন।
বর্তমানে ১ কোটিরও বেশি বাংলাদেশি বিদেশে আছেন। করোনা পরিস্থিতির মধ্যেও ২০২০ সালে প্রায় ২২ বিলিয়ন ডলার প্রবাসী আয় এসেছে বাংলাদেশে।