এভারকেয়ার হাসপাতালে চিকিৎসাধীন বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার চিকিৎসার জন্য ১০ সদস্যের মেডিক্যাল বোর্ড গঠন করা হয়েছে।
আজ রাজধানীর গুলশানে বিএনপি চেয়ারপারসনের কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে খালেদা জিয়ার সর্বশেষ শারীরিক অবস্থা জানাতে গিয়ে তার ব্যক্তিগত চিকিৎসক টিমের সদস্য অধ্যাপক এ জেড এম জাহিদ হোসেন এসব তথ্য জানান।
এর আগে মঙ্গলবার রাতে খালেদা জিয়াকে এভার কেয়ার হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। সেখানে গত রাতে তার সিটি স্ক্যান (চেস্ট), ইসিজি, ইকো প্রভৃতি হৃদরোগে পরীক্ষাগুলো করা হয়েছে। সম্প্রতি করোনা ধরা পড়লেও খালেদা জিয়া দীর্ঘ কয়েক বছর যাবৎ আর্থ্রাইটিস, ডায়াবেটিস ও চোখের সমস্যায় ভুগছেন।
তিনি বলেন, ‘খালেদা জিয়ার যে চিকিৎসা বাসায় চলছিল সেই চিকিৎসাসহ সেখানে আরো কিছু নতুন ওষুধ যুক্ত করা হয়েছে এবং যোগ করার পরিপ্রেক্ষিতে আলহামদুলিল্লাহ উনি (খালেদা জিয়া) এখন স্টেবল।’
অধ্যাপক এ জেড এম জাহিদ হোসেন আরো বলেন, ‘আজকে একটি মেডিক্যাল বোর্ড করা হয়েছে। এভার কেয়ার হাসপাতালের ৭ সদস্যের মেডিক্যাল বোর্ড। আর এই বোর্ডে ম্যাডামের ব্যক্তিগত চিকিৎসক টিমের সদস্য অধ্যাপক এফ এম সিদ্দিকী, আমি এবং অধ্যাপক মো. আল মামুনও আজকে ছিলেন। অর্থাৎ ১০ সদস্যের একটা মেডিক্যাল বোর্ড ওনার এই পর্যন্ত যেগুলো পরীক্ষা-নিরীক্ষা হয়েছে, তার রিভিউ করেছেন। পরবর্তীতে ওনাকে তারা পরীক্ষা করে আরো কিছু পরীক্ষার সুপারিশ করেছেন।”
তিনি বলেন, ‘‘এই বোর্ডের সুপারিশ মোতাবেক পরীক্ষাগুলো আজকে অথবা কালকে হবে। সেসব পরীক্ষাগুলো রিভিউ করে ম্যাডামের সার্বিক চিকিৎসার প্ল্যানিংটা সম্পন্ন হবে।”
অধ্যাপক এ জেড এম জাহিদ হোসেন বলেন, ‘‘ম্যাডামের অবস্থা স্টেবল। দেশবাসীসহ দলের নেতা-কর্মীদের কাছে আমি ওনার জন্য দোয়া করার কথা বলছি। আমরা খুবই আশাবাদী। ইনশাআল্লাহ ম্যাডাম খুব শিগগিরই ওনার বাসায় ফিরে যাবেন।”
এভার কেয়ার হাসপাতালে চিকিৎসাধীন খালেদা জিয়ার জন্য গঠিত এই মেডিক্যাল বোর্ডের নেতৃত্বে রয়েছেন অধ্যাপক শাহাবুদ্দিন তালুকদার।
করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হওয়ার পর খালেদা জিয়ার অবস্থা সম্পর্কে অধ্যাপক জাহিদ বলেন, ‘‘আলহামদুলিল্লাহ গত ১৫ এপ্রিল ম্যাডামের সিটি স্ক্যান করা হয়েছিল, সেখানে আমরা রিপোর্ট দেখে বলেছিলাম, ফুসফুসে ওনার ‘মিনিমাম ইনভলবমেন্ট’ আছে। গতকালকে যে চেস্টে সিটি স্ক্যান হয়েছে, সেখানে বিন্দুমাত্র ‘ইনভলবমেন্ট’ নেই। কাজেই আল্লাহর কাছে শুকরিয়া- এটা ভালো দিক।”
তিনি বলেন, “ওনার হৃদযন্ত্রেও কোনো ধরনের কার্ডিও সমস্যা নেই। কালকে ডাক্তার সাহেবরা যে পরীক্ষার রিপোর্ট দিয়েছেন সেই রিপোর্টেও নেই।”
অধ্যাপক এ জেড এম জাহিদ হোসেন বলেন, ‘‘ওনার কোনো করোনা উপসর্গ নেই। উনি কিন্তু এখন নন-করোনা ইউনিটে চিকিৎসাধীন আছেন। আন্তর্জাতিক চিকিৎসার নিয়মই আছেই দুই সপ্তাহের পর রোগীর কোনো সিমটম না থাকে তাহলে করোনা টেস্ট আর করানোরই প্রয়োজন নেই্। তখন ধরে নিতে হবে ওনার কাছ থেকে করোনা সংক্রমণ ছড়ানোর সুযোগ নেই।”
খালেদা জিয়া কবে বাসায় ফিরবেন প্রশ্ন করা হলে তিনি বলেন, ‘‘বাসায় ফেরার বিষয়টা প্রেডিক্ট করাটা খুব টাফ। ওনার পরীক্ষাগুলো সম্পন্ন হলে বোর্ড রিভিউ করবেন। তারপর আমরা আশা করতে পারি খুব সহসাই ওনার বাসায় ফেরার সম্ভাবনা রয়েছে।”
জাহিদ বলেন, ‘‘আপনারা তো জানেন যে, ওনার অন্য সব অসুখ রয়েছে অর্থাৎ রেউমেটেড আর্থ্রইটিস, অ্যাপিলেট ডিভিশনের যে সিদ্ধান্ত মোতাবেক মেডিক্যাল বোর্ডের যে সুপারিশ ছিল- সিভিয়ার এসিটেন্স। সেই অসুখ তো ওনার আছেই।” তিনি বলেন, ‘‘সেই রোগের চিকিৎসার জন্য তার আধুনিক চিকিৎসার প্রয়োজন, আধুনিক কেন্দ্রের প্রয়োজন। অর্থাৎ সি নিডস মর্ডার টিট্রমেন্ট ইন এ ডেভেলপ সেন্টার। এই সুপারিশটি মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের মেডিকেল বোর্ড করেছিলেন। সেটা যদি আমাদের করতে হয়- পরিবারের সদস্যরা অনেক দিন আগে সরকারের কাছে দরখাস্ত করেছেন- ওনাকে বিদেশে নিয়ে যাওয়া উচিত সুচিকিৎসার জন্য। সেই তো ওই সময়ে করোনা পরিস্থিতি সার্বিক বিবেচনা করে সিদ্ধান্ত নিতে হবে।”
গত ১১ এপ্রিল খালেদা জিয়ার করোনা শনাক্ত হয়। এরপর থেকে গুলশানের বাসা ‘ফিরোজায়’ তার ব্যক্তিগত চিকিৎসক অধ্যাপক এফএম সিদ্দিকীর নেতৃত্বে চিকিৎসা শুরু হয়।