তাপমাত্রা বৃদ্ধি এবং অত্যধিক গরমের কারণে শিশু এবং বৃদ্ধরা বেশি অসুস্থ হয়ে পড়ছেন বলে জানিয়েছেন আইসিডিডিআর`বির চিকিৎসক ডা. জোবায়ের চিশতী।
তিনি বলেন, ‘এই গরমে শিশু এবং বৃদ্ধদের প্রতি বেশি করে নজর রাখতে হবে। বেশি পানি জাতীয় খাবার খাওয়াতে হবে। দিনে কমপক্ষে এক প্যাকেট করে খাবার স্যালাইন দিতে হবে।`
গত ২৬ বছরের রেকর্ড ভেঙেছে ঢাকার আবহাওয়া। সর্বোচ্চ তাপমাত্রা বেড়ে হয়েছে ৪০ দশমিক ৭ ডিগ্রি সেলসিয়াস। আর বিভাগীয় শহর রাজশাহীতে তাপমাত্রা ৪১ দশমিক ৩ ডিগ্রি সেলসিয়াস হয়েছে বলে জানিয়েছে আবহাওয়া অধিদপ্তর।
শিশুরা পানি শূণ্যতা, ডায়রিয়া, বমি নিয়ে ভর্তি হচ্ছে রাজধানীর বিভিন্ন হাসপাতালে। মিরপুর এম আর খান শিশু হাসপাতালেই শিশুদের ভর্তির পাশাপাশি চিকিৎসা দিতে হিমশিম খাচ্ছেন বলে জানালেন সেখানকার অধ্যাপক ডা. ফরহাদ মনজুর।
শিশুরা ছাড়াও নিম্ন আয়ের লোকজন যারা রাস্তায় বের হচ্ছেন, তাদের অনেকেই চরম দাবদাহে আক্রান্ত হয়ে অসুস্থ্য হয়ে পড়ছেন। বিশেষ করে রিকশা, ভ্যান গাড়ি, অটো চালক ও ভ্যানে করে বিভিন্ন রকমের জিনিস ফেরি করে বিক্রি করা ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীরা হিট স্ট্রোকে আক্রান্ত হচ্ছেন।
জীবনের প্রয়োজনে রোজা রেখেও এই গরমে রিকশা নিয়ে বের হয়েছেন মতিন মিয়া। দুপুর পর্যন্ত চালিয়ে আর পারছিলেন না। শোয়ারিঘাট এলাকায় ছায়ায় বসে হাঁপাচ্ছিলেন। তিনি বলেন, `রোজা রেখেও এই গরমে বাধ্য হয়ে বের হয়েছি। না বের হলে সংসার চলবে না। আজ আর টিকতে পারছি না, বাবা। ৬২ বছরের জীবনে এত গরম টের পাইনি।`
গরমের কারণে শিশু এবং বয়ষ্কদের বেশি করে বিশুদ্ধ পানি, সবুজ, পানিওয়ালা ফল খেতে পরামর্শ দিয়েছেন অধ্যাপক ডা. মনজুর রহমান গালিব। তিনি বলেন, `বিশেষ প্রয়োজন না থাকলে ঘরের বাইরে বের হবেন না। ইফতারীর সময় ভাজা পোড়া বাদ দিয়ে প্রচুর তরল খাবার খান। পানি বেশি করে পান করুন, স্যালাইন খান। `সম্ভব হলে দিনে একাধিকবার গোসলেরও পরামর্শ দেন এই চিকিৎসক।
শিশুদের নিয়ে বাইরে বের না হবার পরামর্শ দিয়েছেন শিশু বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক ডা. তাহমিনা বেগম। তিনি বলেন, `একান্তই শিশুদের নিয়ে বাইরে বেরুতে হলে নিজের গাড়িতে বের হবেন। অথবা ছাতা নিয়ে বের হবেন। সঙ্গে পর্যাপ্ত পানি, জুস, স্যালাইন পানি রাখবেন। শিশুদের একটু পর পর খেতে দেবেন। এরকম তাপে শরীরে পানিশূন্যতা দেখা দিতে পারে।`
আবহাওয়া অধিদপ্তরের ওয়েবসাইটে জানানো হয়েছে, ঢাকায় গরমকালে সর্বশেষ তাপমাত্রা ৩৯ ডিগ্রি উঠেছিল ১৯৯৫ সালে। তার ২৬ বছর পর গত রোববার তাপমাত্রা ছিল ৩৯ দশমিক ৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস। গতকাল সেই রেকর্ড ভেঙে সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ৪০ দশমিক ৭ ডিগ্রি সেলসিয়াসে ওঠে। সংশ্লিষ্ট তথ্যমতে, ১৯৬০ সালে ঢাকার সর্বোচ্চ তাপমাত্রার রেকর্ড করা হয়েছিল ৪২ দশমিক ৩ ডিগ্রি।
এদিকে আবহাওয়াবিদ শাহিনুর রহমান জানিয়েছেন, দেশজুড়ে ক্রমেই তাপমাত্রা বাড়ার সম্ভাবনা রয়েছে। আপাতত বৃষ্টির সম্ভাবনা কম। আগামী চার-পাঁচ দিনেও আবহাওয়ার বড় কোন পরিবর্তনের সম্ভাবনা নেই।