যারা নিয়েছেন তারা করোনায় আক্রান্ত হলেও গুরুতর অসুস্থ হচ্ছেন না বলে দাবি করেছেন চট্টগ্রাম ভেটেরিনারি ও অ্যানিম্যাল সায়েন্সেস বিশ্ববিদ্যালয় (সিভাসু)-এর একদল গবেষক। অ্যাস্ট্রাজেনেকার টিকার প্রথম ডোজ নেওয়া ২০০ জনের ওপর গবেষণা করে এ তথ্য পান তারা। মঙ্গলবার (২০ এপ্রিল) বিষয়টি নিশ্চিত করেন বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য ও গবেষণা দলের প্রধান অধ্যাপক ড. গৌতম বুদ্ধ দাস।
প্রতিষ্ঠানটি জানায়, সম্প্রতি সিভাসু’র উপাচার্য প্রফেসর ড. গৌতম বুদ্ধ দাশের নেতৃত্বে একদল গবেষক অক্সফোর্ড-অ্যাস্ট্রাজেনেকার প্রথম ডোজ টিকা গ্রহণকারী কোভিড-১৯ আক্রান্ত রোগীদের স্বাস্থ্যঝুঁকি নিয়ে একটি গবেষণা পরিচালনা করেন। সিভাসুর কোভিড-১৯ শনাক্তকরণ ল্যাবে গত ১৫ ফেব্রুয়ারি থেকে ১৪ এপ্রিল পর্যন্ত মোট ৬ হাজার ১৪৬ জন ব্যক্তির নমুনা পরীক্ষা করা হয়। যার মধ্যে ১ হাজার ৭৫২টি নমুনায় করোনাভাইরাসের উপস্থিতি শনাক্ত হয়। এই ব্যক্তিদের মধ্যে ২০০ জন অক্সফোর্ড-অ্যাস্ট্রাজেনেকার কোভিশিল্ড-এর প্রথম ডোজ টিকা নিয়েছিলেন।
গবেষণা দলে আরও আছেন প্রফেসর ড. শারমিন চৌধুরী, ডা. ইফতেখার আহমেদ রানা, ডা. ত্রিদীপ দাশ, ডা. প্রনেশ দত্ত, ডা. মো. সিরাজুল ইসলাম ও ডা. তানভীর আহমদ নিজামী।
গবেষকরা জানান, প্রথম ডোজ টিকা গ্রহণকারীদের মধ্যে কোভিড-১৯ এ আক্রান্ত হয়েছেন যারা, তাদের গুরুতর স্বাস্থ্যঝুঁকি দেখা যায়নি বললেই চলে। আক্রান্ত ২০০ জনের মধ্যে ১৬৫ (৮২.৫ শতাংশ) জন রোগীকে হাসপাতালেই যেতে হয়নি। বাকি ৩৫ জন ভর্তি হলেও তাদের মধ্যে মারাত্মক স্বাস্থ্যঝুঁকি দেখা যায়নি।
এ গবেষণায় আরও দেখা যায়, কোভিড-১৯ টিকা গ্রহণকারীদের মধ্যে ১৭৭ জনের মধ্যে শ্বাসকষ্ট দেখা যায়নি। সেই সঙ্গে ১৮৪ জনকে অতিরিক্ত অক্সিজেনও দিতে হয়নি। বার্ধক্যজনিত কারণ ও বিভিন্ন কো-মরবিডিটির কারণে বাকিদের শ্বাসকষ্ট ও অতিরিক্ত অক্সিজেন সরবরাহ লেগেছে।
গবেষকরা বলছেন, এ গবেষণার ইতিবাচক দিক হচ্ছে, প্রথম ডোজ নেওয়া ২০০ জনের মধ্যে মাত্র একজন (০.৫ শতাংশ) রোগীকে আইসিইউতে যেতে হয়েছিল এবং এর ছয়দিন পর তিনি মারা গিয়েছিলেন। তার বয়স ছিল ৪৮ বছর। অবশ্য দুই বছর আগে তার কিডনি প্রতিস্থাপন করা হয়েছিল বলে জানা যায়।
বাকি ১৯০ জন রোগীর দ্বিতীয়বার আরটি-পিসিআর পরীক্ষায় নেগেটিভ ফলাফল পাওয়া গেছে। তারা প্রত্যেকেই এখন সুস্থ। বাকি ৯ জন রোগী বাসায় চিকিৎসা নিচ্ছেন।
টিকাগ্রহীতাদের উপসর্গ কম
বিশেষজ্ঞদের মতে করোনা আক্রান্ত রোগীদের প্রাথমিক উপসর্গ হচ্ছে জ্বর, হাঁচি ও কাশি। সিভাসুর গবেষণায় দেখা যায়, প্রথম ডোজ গ্রহণকারী রোগীদের ক্ষেত্রে করোনায় আক্রান্ত হওয়ার পরও ৯১ শতাংশ রোগীর কাশি বা হাঁচি দেখা যায়নি। ১১৩ জনের ক্ষেত্রে স্বাদ ও ১১১ জনের ঘ্রাণশক্তিতেও কোনও পরিবর্তন দেখা যায়নি।
গবেষণার তথ্য বলছে, প্রথম ডোজ টিকা গ্রহণকারীদের মধ্যে যাদের শ্বাসকষ্ট হয়েছিল তা গড়ে ৫ দিনের বেশি থাকেনি। তাদের ক্ষেত্রে সর্বনিন্ম অক্সিজেন স্যাচুরেশন পাওয়া যায় ৯০ শতাংশ। গড়ে সকল রোগীর অক্সিজেন স্যাচুরেশন ছিল ৯৬.৮ শতাংশ।
উল্লেখ্য, কোভিড-১৯ আক্রান্তদের মধ্যে যারা টিকা নেননি তাদের অধিকাংশের ক্ষেত্রে অক্সিজেন স্যাচুরেশন পাওয়া যায় ৮৫ শতাংশ বা তারও কম।
সিভাসু জানায়, সরকার কর্তৃক অক্সফোর্ড-অ্যাস্ট্রাজেনেকার যে টিকা বিনামূল্যে দেওয়া হচ্ছে, তা আক্রান্তের হার নিন্মমুখী করার পাশাপাশি মৃত্যুঝুঁকিও কমাবে। এ ছাড়াও গবেষকরা মনে করছেন, এই ধরনের উচ্চ গবেষণা বড় পরিসরে চালানো দরকার। এতে টিকা প্রয়োগের পর রোগীদের স্বাস্থ্যঝুঁকি কমে যাওয়ার আরও শক্তিশালী প্রমাণ পাওয়া যাবে। এতে মানুষও টিকা নিতে আরও আগ্রহী হবে।
গবেষক দলের প্রধান গৌতম বুদ্ধ দাশ বলেন, গবেষণায় প্রমাণ হয়েছে টিকা নেয়ার পর করোনা আক্রান্ত হলেও মৃত্যুঝুঁকি কমে। টিকার প্রথম ডোজ নেয়ার পর আক্রান্ত ২০০ জনের মধ্যে মাত্র একজন মারা গেছেন। তিনি দীর্ঘদিন কিডনি জটিলতায় ভুগছিলেন। এ ছাড়া তার অন্য রোগও ছিল।