যুক্তরাষ্ট্রের স্থানীয় সময় রবিবার ব্লিনকেন বলেন, ‘আফগানিস্তান থেকে সন্ত্রাসের হুমকি সরে অন্যত্র চলে গেছে। ওয়াশিংটনের এখন চীন এবং মহামারি করোনাভাইরাসের মতো বিষয়ে মনযোগ দেওয়া দরকার।’ বার্তা সংস্থা এএফপি’র খবরে এ কথা বলা হয়েছে।
মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন গত সপ্তাহে ঘোষণা দেন, ৯/১১ সন্ত্রাসী হামলার ২০ বছর পূর্তির সময় অর্থাৎ ১১ সেপ্টেম্বরের আগেই আফগানিস্তান থেকে সব সেনা প্রত্যাহার করা হবে।
গত বছর আফগানিস্তান থেকে মার্কিন সেনা প্রত্যাহারে তালেবানের সঙ্গে চুক্তি হয়। চুক্তি অনুযায়ী, এ বছরের ১ মে সব সেনা প্রত্যাহার করার কথা। সেই সময়সীমা থেকে আরও চার মাস পেছাচ্ছে যুক্তরাষ্ট্র।
সিআইএ প্রধান উইলিয়াম বার্নস ও সাবেক আর্মড ফোর্সেস চিফ ডেভিড পেট্রাউসসহ বেশ কয়েকজন জেনারেল সেনা প্রত্যাহারের সিদ্ধান্তের বিরোধিতা করেছেন। তাদের দাবি, এর ফলে আফগানিস্তান সহিংসতায় ডুবে যাবে এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রও সন্ত্রাসী হামলার হুমকির মধ্যে পড়বে।
যুক্তরাষ্ট্রের সংবাদমাধ্যম এবিসির ‘দিস উইক’ অনুষ্ঠানে অ্যান্টনি ব্লিনকেন বলেন, ‘সন্ত্রাসবাদের হুমকি অন্য জায়গাগুলোতে চলে গেছে। আমাদের হাতে আরও অনেক জরুরি এজেন্ডা রয়েছে। চীনের সঙ্গে সম্পর্ক থেকে শুরু করে জলবায়ু পরিবর্তন ও মহামারি করোনাভাইরাস রয়েছে। এখন আমাদের সেসব জায়গায় আমাদের শক্তি সামর্থ্য ব্যয় করতে হবে।’
গত সপ্তাহে কাবুল সফরে গিয়ে মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী আফগান প্রেসিডেন্ট আশরাফ ঘানিসহ যুক্তরাষ্ট্রের জ্যেষ্ঠ সেনা কর্মকর্তাদের সঙ্গে দেখা করে বাইডেনের ঘোষণার বিষয়টি পরিষ্কার করেছেন। তাঁর ভাষ্য মতে, ২০০১ সালের সন্ত্রাসী হামলার জবাবে শুরু হওয়া অনন্তকালের যুদ্ধের পরিসমাপ্তি চাইছেন বাইডেন।
ব্লিনকেন বলেন, আমরা আফগানিস্তানে আমাদের অভিষ্ট লক্ষ্য অর্জন করেছি। আল-কায়েদা ব্যাপক মাত্রায় দুর্বল হয়ে গেছে। তাদের অবস্থা এখন আর আফগানিস্তান থেকে যুক্তরাষ্ট্রে সন্ত্রাসী হামলা পরিচালনার পর্যায়ে নেই।
আফগানিস্তানে বর্তমানে আড়াই হাজারের মতো মার্কিন সেনা রয়েছে। এক সময় এই সংখ্যা এক লাখও ছিল। এই আড়াই হাজারের মধ্যে এক হাজারের মতো সেনা ন্যাটো জোটের নয় হাজার ৬০০ সেনার অংশ হিসেবে রয়েছে। মার্কিন সেনাদের সঙ্গে একই সময়ে ন্যাটো জোটেরও আফগানিস্তান ছাড়ার কথা রয়েছে।
তালিবানের পক্ষ থেকে চার মাসের মার্কিন সেনা প্রত্যাহারের বিলম্বের বিষয়টি মেনে নেওয়া হয়েছে।
তবে অ্যান্টনি ব্লিনকেন এটাও বলেছেন, আফগানিস্তান যদি আবার আগের মতো সহিংসতা চালায় তাহলে তারা আরও দীর্ঘ যুদ্ধে জড়াবে। তবে তালিবানের স্বার্থ তালিকায় তেমন কিছু নেই বলেও আশ্বস্ত করেন মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী।
এদিকে, আফগানিস্তানে যুক্তরাষ্ট্রের দীর্ঘ ২০ বছরের যুদ্ধে এখন পর্যন্ত মোট খরচ হয়েছে দুই দশমিক ২৬ ট্রিলিয়ন মার্কিন ডলার। দীর্ঘ এ যুদ্ধে মোট দুই লাখ ৪১ হাজার মানুষের প্রাণহানি হয়েছে। যুক্তরাষ্ট্রের ব্রাউন ইউনিভার্সিটির ওয়াটসন ইনস্টিটিউট এবং বোস্টন ইউনিভার্সিটির পারডি সেন্টার তাদের গবেষণা প্রতিবেদনে এসব তথ্য জানিয়েছে।
আফগান যুদ্ধের মোট খরচের ২৯৬ বিলিয়ন ডলার ব্যয় হয়েছে আফগান ফেরত সেনাদের চিকিৎসার জন্য। মোট খরচের শতকরা ৪১ ভাগ বা ৯৩৩ বিলিয়ন ডলার এসেছে মার্কিন প্রতিরক্ষা দপ্তরের ওভারসিজ কন্টিনজেন্সি অপারেশন্স খাত থেকে।
দীর্ঘ এই যুদ্ধে দুই হাজার ৪৪২ জন মার্কিন সেনা, ৬৬ হাজার থেকে ৬৯ হাজার আফগান সেনা ও পুলিশ এবং নয় হাজার ৩১৪ পাকিস্তানের সেনা মারা গেছে।