সাভারে রাতের আঁধারে পুলিশ পরিচয়ে অসহায় দরিদ্র দিনমজুরের ১৮ হাজার টাকা ছিনতাইয়ের অভিযোগে এক জনকে আটক করেছে পুলিশ।
ভুক্তভোগী ও স্থানীয়দের অভিযোগ, পুলিশ পরিচয়দানকারী ব্যক্তি সুদীপ কুমার গোপ নামে আশুলিয়া থানার এক উপ-পরিদর্শকের (এসআই) ব্যক্তিগত লোক।
তবে এসআই সুদীপ বিষয়টি অস্বীকার করে আটক ব্যক্তির বিরুদ্ধে মাদক সংশ্লিষ্টতা ও পুলিশের সোর্স হিসেবে কাজ করার বিষয়টি নিশ্চিত করেন।
বৃহস্পতিবার (১৫ এপ্রিল) দিবাগত রাত ২টার দিকে আশুলিয়ার পল্লীবিদ্যুৎ পূর্ব ডেন্ডাবর আরইবি রোড এলাকা থেকে মনির হোসেন নামে পুলিশ পরিচয়দানকারী ব্যক্তিকে আটক করে পুলিশ।
এসময় আশুলিয়া থানার উপ-পরিদর্শক কায়সার হামিদ ঘটনাস্থলে উপস্থিত হলে উত্তেজিত পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়। মূলত পুলিশ পরিচয় দিয়ে দরিদ্র মানুষের টাকা ছিনিয়ে নেওয়ায় স্থানীয়রা পুলিশের প্রতি ক্ষোভ প্রকাশ করেন।
এর আগে রাত ১১টার দিকে আরইবি রোডের হাজী মার্কেটের রাসেল স্টোর নামে একটি দোকানের সামনে থেকে পুলিশ পরিচয়ে কৌশলে টাকা ছিনিয়ে নিয়ে পালিয়ে যায় মনির।
পল্লীবিদ্যুৎ আরইবি অফিস সংলগ্ন হাজী মার্কেটের মুদি ও চা দোকানী আব্দুল জব্বার বলেন, ‘আমার দোকানের নাম রাসেল স্টোর। রাইতে আমার দোকানে ওনারা (লেবার) গাড়ি থাইকা কলা নামায় আইসা ট্যাকা ভাগ করতাছিল। পলাশবাড়ী স্কাইলাইনের সামনে প্রতি রাইতেই ওনারা কলা নামায়। তখন একজন যাইয়া তুই-তুই ভাষা করতাছে। পরিচয় দিছে আমি পুলিশের লোক। বলতাছে, এত রাইতে দোকান খোল ক্যা? আমি বললাম যে, দোকান বন্ধ কইরা সাটার নামায় দিছি। এখন ওনারা ট্যাকাটা হিসাব কইরা ভাগ করতাছে এইর লাইগা দেরি (রাত ১১টা) হয়্যা গেছে। এই কথা বলতে বলতে কয় দোকান বন্ধ কর। আমি পরে দোকান বন্ধ কইরা দিছি। বন্ধ কইরা দেয়ার পর ওই লোক (পুলিশ পরিচয়দানকারী) ওনাদের তিন জনরে বাইরে নিয়া গেছে (কলার লেবার) চইলা গেছে।’
দিনমজুর (কলার লেবার) মো. কাজল বলেন, ‘রাইতে আমরা এনো ওই দোকানে বইসা থাইক্কা হাইরা ট্যাকা গুনতাছি। পুলিশ লোক কইয়া যাইয়া হাইরা কইতাছে, তোমরা কি কর? আমরা কইছি, ছার আমরা এহানে চা-টা খাইতাছি। অ্যার লাইগা দাঁড়াইছি, ট্যাকা ভাগ করুম আমরা। কয়, এই কিয়ের ট্যাকা ভাগ করা? এই কথা কইয়া দোকানের সাটার-মাটার ফালায় দিয়া লোক আলদা কইরালসে। পরে আমরা একজনরে ট্যাকা দিছি। হ্যারে ডাক দিয়া নিয়া কইছে কি, এই সামনে পুলিশের গাড়ি আছে পুলিশের গাড়িত উঠো যাইয়া। মানে একজনরে ধইরা নিয়া আনচে সামনে এহানু খাড়া করায় রাইকখা কয়, গাড়ি আইতাছে দাড়াও।
‘পরে আমগো তিনডারে খারা কইরা রাইকখা হেই সামনেত্তে যাইয়া হাইরা মুরুব্বির ওহান থাইকা খাবলা মাইরা ট্যাকা নিয়া দৌড় দিয়া পলায় গেছে। পরেদে আমরা তিন-চারটা হুনডা নিয়া আশুলিয়া থানাথুনা দিয়া, পলাশবাড়ী দিয়া দিক দিয়া ঘুইরা আমরা পাই নাই। পরেদে স্টানে (পল্লীবিদ্যুৎ বাস স্ট্যান্ড) আইসা পাইছি। আমাগো লগে কাজ করে হেই হ্যারে (পুলিশ পরিচয়দানকারী) ধরছে। হ্যারে ধাক্কা দিয়া পরে দৌড় দিছেতো হেই চুরচুর কইয়া এমুরা আইয়া ওরে ধরছে এই জায়গায় (নতুন ডেন্ডাবর)। হেই সুদীপ পুলিশের পার্সোনাল লুক। হের নাম বেইচ্চা চলে আর কি।’’
তিনি আরও বলেন, ‘আমাগো পাঁচ জনের তিনশ’ কম ১৮ হাজার ট্যাকা নিছে। আমরা কলা নামাই, লেবার আমরা। খাজা, মইনুদ্দিন, আশরাফ, মালেক এইডি আমরা। হারা সপ্তাহের ট্যাকা প্রত্যেক বিস্সতবারে (বৃহস্পতিবার) পাই। ১৮-২০ হাজার কইরা আমরা ট্যাকা পাই।’
পরে পুলিশ এসে কী করেছে এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, ‘পুলিশে আইসা কইছে বিচার হইব থানায়। এই জায়গায় বিচার হয় নাই। আমগো এই জায়গা থাইকা খাজা, মালেক আর স্বাক্ষী কইয়া আরেকজন মুরুব্বিরে পুলিশ নিয়া গেছে। হেইডারেও (পুলিশ পরিচয়দানকারী) পুলিশের গাড়িতে নিয়া গেছে। পরে হেরে ভিতরে (লকাপে) ঢুকায় দিছে আর আমাগো লোকজনরে ছাইরা দিছে। কিন্তু কোনো অভিযোগ করতে কয় নাই।’
আশুলিয়া থানার উপ-পরিদর্শক (এসআই) সুদীপ কুমার গোপ বলেন, ‘সে সম্ভবত সোর্সের কাজ করে। ওহানে বলে কি করছে? ও মনে হয় মাদকের ইয়ে…। ফোন দেয়ার সাথে সাথে ওদিকে আমাদের ডিউটিতে যারা ছিল, ওনারা গেছে। বলছে, নিয়া আসছে থানায়। এটার ব্যবস্থা নিব আমরা। আর অসুবিধা নাই, যার টাকা সে পাইয়া যাবে।