মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, সারা দুনিয়ায় ধর্মীয় উৎসবের সময় জিনিসপত্রের দাম কমে। অথচ বাংলাদেশে এমনকি সরকার নিয়ন্ত্রিত প্রতিষ্ঠান ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশ’র (টিসিবি) থেকেও দাম বাড়ানোর ঘোষণা আসে। যা বাজারের মুল্যবৃদ্ধিতে নতুন অনুষঙ্গ হিসেবে কাজ করে। এবারে যেমন টিসিবি পবিত্র রমজান মাসের আগে সয়াবিন তেলের দাম প্রতি লিটারে বাড়ালো ১০ টাকা। সংস্থাটি প্রতি লিটার তেল ১০০ টাকা দরে বিক্রি করছে। এ নিয়ে টিসিবি জানুয়ারির পর দুই দফায় লিটারে ২০ টাকা বাড়লো সয়াবিন তেলের দাম। শুধু সয়াবিন তেল নয়, টিসিবি চিনির দামও কেজিতে ৫ টাকা করে বাড়িয়েছে। এখন সংস্থাটি প্রতি কেজি চিনি ও মসুর ডাল ৫৫ টাকা দরে বিক্রি করছে।
আজ মঙ্গলবার এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর এসব কথা বলেন। বিজ্ঞপ্তিতে তিনি বলেন, বৈশ্বিক মহামারি কভিড-১৯ আজ আমাদের সমগ্র জাতীয় জীবনকে এক ভয়ঙ্কর অনিশ্চয়তার মাঝে ঠেলে দিয়েছে। প্রতিদিন প্রিয়জন হারানোর সংবাদ আমাদের প্রত্যেকের ব্যক্তি জীবনকে স্থবির করে তুলেছে। করোনায় আক্রান্ত নতুন রোগী ও মৃত্যুর সংখ্যা বেড়েই চলছে। এরই মধ্যে আমাদের দলের ও দেশের অনেক প্রথিতযশা বরেণ্য ব্যক্তিত্ব করোনার ছোবলে সবার মাঝ থেকে হারিয়ে গেছেন। সমাজ ও রাষ্ট্র জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রে এ ধরনের অভিজ্ঞ ও বরেণ্য মানুষের চলে যাওয়া সমগ্র জাতিকে এক অপূরণীয় ক্ষতির সম্মুখীন করে ফেলেছে।
মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, আজ আমি আসন্ন রমজান এবং বর্তমান কভিড পরিস্থিতিতে তথাকথিত লকডাউনের প্রাক্কালে সরকারের ব্যর্থতার কারণে বাজারে নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যের মূল্যবৃদ্ধিতে মানুষের জীবনযাত্রায় যে নাভিশ্বাস ওঠেছে সে সম্পর্কে বলতে চাই। এ সরকার প্রথম থেকেই জনজীবনকে তাচ্ছিল্য করে আসছে। ১০ টাকা কেজি দরে চাল খাওয়ানোর মিথ্যা ও প্রতারণামূলক শ্লোগান দিয়ে ক্ষমতায় আসার পর থেকে তারা কিভাবে চালসহ প্রত্যেকটি নিত্যপণ্যের দাম বাড়িয়ে চলেছে তা ভুক্তভোগীরা সবাই অবগত আছেন। দ্রব্যমূল্যের ঊধ্বগতির সাথে সাধারণ মানুষ পাল্লা দিতে পারছে না। বিদ্যুতের দাম, বাসা ভাড়া, নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যের লাগামহীন ঊর্ধ্বগতিতে মানুষ এতই হার্ড-হিট যে, নিম্ন আয়ের শ্রেণি যারা একসময় খেয়ে-পরে ভালোই ছিল, তারা আজ প্রায় অবলুপ্ত হতে চলেছে।
তিনি আরো বলেন, বাজারে দ্রব্যমূল্য সরকার নিয়ন্ত্রণ করতে পারছে না। প্রকৃতপক্ষে বাজার সিন্ডিকেটগুলো সবই আওয়ামী লীগের তথা সরকারের মদদপুষ্ট লোকজন দিয়ে পরিচালিত বিধায় এরাই যোগসাজশ করে দ্রব্যমূল্য বাড়িয়ে দিচ্ছে। আগে মানুষ টিসিবি’র ট্রাকে কম মূল্যে জিনিসপত্র পাবে বলে আশায় থাকত। কিন্তু এখন টিসিবিও নিত্যপণ্যের মূল্য বাড়িয়ে দিয়েছে। অন্যদিকে আগে যারা কষ্ট হলেও দোকান থেকেই নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিস খরিদ করত, তাদের অনেককেই এখন টিসিবি’র লাইনে দাঁড়াতে দেখা যায়। জাতীয় দৈনিকে এ বিষয়ে বিস্তারিত প্রতিবেদন ছাপা হয়েছে। এই শ্রেণির মানুষের জীবনযাত্রার মান দ্রুত অবনত হয়ে তারা ডিক্লাসড হয়ে নিম্নতর পর্যায়ে নেমে গেছে। আর যারা আগে থেকেই টিসিবি’র ওএমএস’র পণ্য কিনত তারাও আর কিনতে পারছে না মূল্যবৃদ্ধির কারণে।
বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর আরো বলেন, মানুষের জীবনে হাহাকার আর ত্রাহি অবস্থা বিরাজ করছে। বিশেষ করে মধ্য ও নিম্নবিত্তের খাবারের সংস্থান কঠিন হয়ে পড়েছে। এক জরিপে দেখা গেছে যে জরিপে অংশ নেয়া ৩৪.৮ শতাংশ পরিবারেরর কমপক্ষে একজন সদস্য চাকরি হারিয়েছে। ২০২০ সনের মার্চ থেকে মে মাসের মধ্যে গড়ে পারিবারিক উপার্জন কমেছে প্রায় ৭৪ শতাংশ। মধ্য ও নিম্ন বিত্তের হাজার হাজার মানুষ কর্মহীন হয়ে পড়েছে। নয়ত বেতন পাচ্ছে না, নয়ত বেতন কমিয়ে অর্ধেক করা হয়েছে। জীবনযুদ্ধে টিকতে না পেরে শহর ছেড়ে গ্রামে ছুটছেন অনেকে।