শনিবার, ২৩ নভেম্বর ২০২৪, ১০:০৩ অপরাহ্ন

বাসার সবার করোনা খালেদা জিয়াসহ

Reporter Name
  • Update Time : সোমবার, ১২ এপ্রিল, ২০২১

আক্রান্ত হয়েছেন বিএনপি চেয়ারপারসন ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়া। শুধু তিনি একাই নন, গুলশান এভিনিউয়ে তাঁর ‘ফিরোজা’ বাসভবনের ৯ সদস্যের সবাই করোনায় আক্রান্ত। বাসাটি এখন একটি ‘মিনি হাসপাতালে’ পরিণত হয়েছে। দলের নেতা-কর্মীসহ রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকদের প্রশ্ন, ফিরোজা বাসভবনে করোনায় আক্রান্ত ৭৫ বছর বয়সী বয়োবৃদ্ধ বেগম খালেদা জিয়া কেমন আছেন? দল, চিকিৎসক ও পরিবারের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, বেগম জিয়ার শারীরিক অবস্থা এখন ভালো। করোনার কোনো উপসর্গ নেই। অধ্যাপক ডা. এফ এম সিদ্দিকীর নেতৃত্বে বেগম জিয়ার ব্যক্তিগত চিকিৎসক টিমের তত্ত্বাবধানে ইতিমধ্যে চিকিৎসা শুরু হয়েছে। একটি নির্ভরযোগ্য সূত্রে জানা গেছে, বেগম জিয়ার হালকা জ্বর ও কাশি আছে। তবে সহনীয় মাত্রায়। বাড়তি সতর্কতার অংশ হিসেবে এরই মধ্যে গুলশানের আশপাশের এলাকায় একটি বেসরকারি হাসপাতালে আইসিইউসহ একটি কেবিন বুকিং দিয়েও রাখা হয়েছে। বেগম জিয়ার চিকিৎসা টিমের একজন বলেন, ‘করোনা একটি জটিল রোগ। এ ছাড়া ম্যাডামেরও বয়স হয়েছে। তাঁর আরও বেশ কিছু জটিল রোগ আছে। এটাই ভয়ের কারণ। যে কোনো সময় অবস্থার অবনতি হলে যেন মুহূর্তেই হাসপাতালে নেওয়া যায় সে জন্যই কেবিন খালি রাখা হয়েছে।’

গতকাল বিকাল সাড়ে ৪টায় দলের গুলশান কার্যালয়ে জরুরি সংবাদ সম্মেলনে দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর আনুষ্ঠানিকভাবে বেগম জিয়ার করোনার তথ্য প্রকাশ করেন। তিনি বলেন, ‘বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার করোনা পরীক্ষা করা হয়েছে। আইসিডিডিআরবিতে করা হয়েছে তাঁর নমুনা পরীক্ষা। আমরা জানতে পেরেছি, সেই টেস্ট রিপোর্টটা পজিটিভ। অর্থাৎ তিনি করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন। তবে তাঁর শারীরিক অবস্থা স্থিতিশীল। তিনি ভালো আছেন।’ নির্ভরযোগ্য সূত্রে জানা যায়, বেগম জিয়ারও কয়েক দিন আগে জ্বর আসে। এর পরই তাঁর করোনার নমুনা পরীক্ষা করার উদ্যোগ নেওয়া হয়। শনিবার তাঁর স্বাভাবিক পরীক্ষা-নিরীক্ষার পাশাপাশি দুই দফায় করোনার নমুনা পরীক্ষা করা হয়। প্রথম দফায় ল্যাবএইড হাসপাতালের একজন টেকনোলজিস্ট, দ্বিতীয় দফায় আইসিডিডিআরবির একজন টেকনোলজিস্টের মাধ্যমে পরীক্ষা করা হয়। রাতে দুই পরীক্ষাতেই রেজাল্ট করোনা পজিটিভ আসে। এখন তাঁর সামান্য জ্বর ও কাশি রয়েছে বলে জানা গেছে। বিএনপির এক সিনিয়র নেতা জানান, বিএনপি চেয়ারপারসন এমনিতেই অনেক অসুস্থ। এ ছাড়া তিনি ডায়াবেটিসের রোগী। উচ্চ রক্তচাপও আছে। তিনি আর্থ্রাইটিসে ভুগছেন। অ্যাজমারও সমস্যা আছে। এ সমস্যাগুলো করোনাভাইরাসের জন্য মারাত্মক সমস্যা। এটাই চিন্তার বড় কারণ। এদিকে বেগম জিয়ার ‘ফিরোজা’ বাসভবনের সবাই করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন বলে বাংলাদেশ প্রতিদিনকে জানিয়েছেন তাঁর ব্যক্তিগত চিকিৎসক ও ভাগ্নে ডা. মামুন। তিনি বলেন, ‘প্রথমে ওই বাসভবনের কেয়ারটেকারদের করোনার নমুনা পরীক্ষা করা হলে তাদের রিপোর্ট পজিটিভ আসে। এরপর গৃহকর্মীর (ফাতেমা) নমুনা পরীক্ষা করা হলে তারও করোনা পজিটিভ রিপোর্ট আসে। এর পরই মূলত ম্যাডামের করোনার নমুনা পরীক্ষা করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। গতকাল অন্যান্য শারীরিক পরীক্ষা-নিরীক্ষার সঙ্গে করোনার নমুনাও পরীক্ষা করা হয়। এতে তাঁর পজিটিভ রিপোর্ট আসে। বাসা এখন হাসপাতালে পরিণত হয়েছে। তবে ম্যাডাম শারীরিকভাবে ভালো আছেন। এর পরও আমরা একটি বেসরকারি হাসপাতালে তাঁর জন্য কেবিন বুকিং দিয়ে রেখেছি।’

খালেদা জিয়ার গৃহকর্মী ফাতেমাও করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন কি না- জানতে চাইলে তিনি ‘হ্যাঁ-সূচক’ মন্তব্য করেন। দুই দিন ধরে ম্যাডামের করোনা রেজাল্টের বিষয় নিয়ে আপনি দ্বিমত পোষণ কেন করেছেন- জানতে চাইলে ডা. মামুন বলেন, ‘একজন ডাক্তার হিসেবে প্রত্যেকটা রোগীর প্রাইভেসি রক্ষা করা আমার ইমানি দায়িত্ব। মানে ডাক্তারের রুলসে তা-ই বলে। সকাল থেকে অনেকে ফোন করেছেন। কিন্তু আমি পুরোপুরি জিনিসটাকে এড়িয়ে যাওয়ার চেষ্টা করেছি। এখন যেহেতু পজিটিভ ফল এসেছে, তা মহাসচিব বলেছেন। ডাক্তার হিসেবে যেটা আমার করার আমি তা-ই করেছি।’ সংবাদ সম্মেলনে বিএনপি মহাসচিব বলেন, ‘বেগম জিয়ার কোনো টেম্পারেচার নেই, অন্য কোনো উপসর্গও তাঁর নেই। তাঁর চিকিৎসা ইতিমধ্যে শুরু হয়েছে। আমরা দেশবাসীকে আশ্বস্ত করতে চাই, তাঁর ব্যক্তিগত চিকিৎসক যারা আছেন, তাঁরা দেশের অত্যন্ত বরেণ্য চিকিৎসক। ম্যাডাম তাঁদের তত্ত্বাবধানে আছেন এবং তিনি ভালো আছেন। তাঁর চিকিৎসকদের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী পরবর্তী সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হবে। অর্থাৎ যদি কোনো প্রয়োজন হয়, তখন সেভাবেই ফারদার ট্রিটমেন্টের ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’ জরুরি সংবাদ সম্মেলনে তিনি বলেন, ‘এই ব্যাধি এখন যেভাবে সারা দেশে একটা ভয়াবহ রূপ ধারণ করেছে, সেই পরিপ্রেক্ষিতে দেশবাসীকে আমরা আহ্বান জানাব, বেগম খালেদা জিয়াও আহ্বান জানিয়েছেন, তাঁর জন্য, তাঁর মুক্তির জন্য সবাই যেন দোয়া করেন। বিশেষ করে আমাদের দলের সব স্তরের নেতা-কর্মীদের প্রতি আহ্বান থাকবে যে, তারা যেন স্বাস্থ্যবিধি মেনে দেশনেত্রীর রোগমুক্তির জন্য পরম করুণাময় আল্লাহতায়ালার কাছে দোয়া করেন। আমাদের অনুরোধ থাকবে, স্থানীয় মসজিদে তাঁর জন্য দোয়া করবেন।’ জানা যায়, এর আগে নিয়মিত স্বাস্থ্য পরীক্ষার অংশ হিসেবে বিএনপি চেয়ারপারসন শনিবার দুই দফায় করোনার নমুনা পরীক্ষা দেন। দুই রিপোর্টে রাতেই খালেদা জিয়া করোনা পজিটিভ বলে উল্লেখ করা হয়। কিন্তু বেগম জিয়ার চিকিৎসক ও পরিবারের পক্ষ থেকে প্রথমে বিষয়টি অস্বীকার করা হয়। দলের দায়িত্বশীল নেতারাও এ বিষয়ে অবগত নন বলে গণমাধ্যমকে জানান। এ নিয়ে শুরু হয় ধূম্রজাল। দিনভর নানা জল্পনা-কল্পনার পর গতকাল বিকাল সাড়ে ৪টার দিকে জরুরি সংবাদ সম্মেলনে এসে বিষয়টি স্পষ্ট করেন দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।
গতকাল নমুনা পরীক্ষার একটি প্রতিবেদন আসে সোশ্যাল মিডিয়ায়। ‘করোনাভাইরাস পজিটিভ’ ওই প্রতিবেদন খালেদা জিয়ার বলে লেখা ছিল। ওই প্রতিবেদনে থাকা কিউআর কোড স্ক্যান করলে তা স্বাস্থ্য অধিদফতরের ওয়েবসাইটের একটি প্রতিবেদন দেখায়, যেখানে রোগীর নাম দেখায় বেগম খালেদা জিয়া। আর আইসিডিডিআরবিতে আরটি-পিসিআর পরীক্ষা করে করোনাভাইরাস পজিটিভ পাওয়া গেছে বলে প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়। এই প্রতিবেদনের সত্যতা নিশ্চিত করে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের জ্যেষ্ঠ তথ্য কর্মকর্তা মাইদুল ইসলাম প্রধান বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, ‘আমাদের কাছে যে রিপোর্ট এসেছে, তাতে বেগম খালেদা জিয়া করোনা পজিটিভ শনাক্ত হয়েছেন।’ এ জন্য নমুনা শনিবারই সংগ্রহ করা হয়েছিল বলে জানান তিনি। প্রতিবেদনে দেখা যায়, রিপোর্টে বেগম খালেদা জিয়ার বাসার ঠিকানা দেওয়া হয়েছে গুলশান-২। আইসিডিডিআরবির ডায়াগনস্টিক ল্যাবরেটরিতে খালেদা জিয়ার করোনার নমুনা পরীক্ষা করা হয়েছে বলে রিপোর্টটিতে উল্লেখ করা হয়েছে। রিপোর্টে যে ফোন নম্বর দেওয়া হয়েছে, সেটি বিএনপি চেয়ারপারসনের মেডিকেল টিমের টেকনোলজিস্ট মো. সবুজের।

ফিরোজা বাসভবনের সবাই করোনায় আক্রান্ত : গুলশানের ‘ফিরোজা’ বাসভবনে বিএনপি চেয়ারপারসন ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়াসহ অন্যরা সবাই করোনায় আক্রান্ত। এ তথ্য জানিয়ে ডা. মামুন বলেন, ‘আমরা খুবই সতর্কতার সঙ্গে দেখভাল করছি সবাইকে। পুরো বাসভবনকে হাসপাতালের মতো করে রাখা হয়েছে। দু-একজনের করোনার উপসর্গ থাকলেও ম্যাডামের কোনো উপসর্গ নেই। তিনি সুস্থ আছেন, ভালো আছেন। এখন পর্যন্ত তাঁর শারীরিক কোনো জটিলতা দেখা যায়নি। ফলে আমাদের আপাতত চিন্তা, বাসায় রেখে তাঁকে চিকিৎসা করানো। তবে রাজধানীর একটি হাসপাতাল আমরা ঠিক করে রেখেছি। যদি কোনো ধরনের শারীরিক জটিলতা তৈরি হয় তাহলে আমরা হাসপাতালে চিকিৎসা করানোর চিন্তা করব।’ ফিরোজা বাসভবনের মোট কতজন বাসিন্দা আক্রান্ত হয়েছেন- জানতে চাইলে ডা. মামুন বলেন, ‘এটা এ মুহূর্তে আমি বলতে পারছি না। পরে জানাতে পারব।’ তবে একটি সূত্র জানায়, বাসায় থাকা ৯ জন সদস্যের সবাই করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন।

এদিকে বিকালে ‘ফিরোজা’য় গিয়ে দেখা যায়, নিরাপত্তাকর্মীরা ফটকের বাইরে পাহারা দিচ্ছেন। নিরাপত্তাকর্মীদের একজন বলেন, ‘ম্যাডাম দোতলায় আছেন। কারও প্রবেশাধিকার এখন নেই সেখানে। আগে কয়েকজন আত্মীয়স্বজন আসতেন। আজকে কেউ আসেননি। তারা টেলিফোনে ম্যাডামের খোঁজখবর রাখছেন।’ খালেদা জিয়ার বোন ও ভাই বিভিন্ন সময় তাঁর খোঁজখবর নিতে ফিরোজায় যান। তাঁর বড় ছেলে তারেক রহমান সপরিবারে যুক্তরাজ্যে রয়েছেন।

৭৫ বছর বয়সী সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়া দুর্নীতির দুই মামলায় দন্ডিত। সাজা নিয়ে তিন বছর আগে তাঁকে কারাগারে যেতে হয়। দেশে করোনাভাইরাসের সংক্রমণ শুরুর পর পরিবারের আবেদনে সরকার গত বছর ২৫ মার্চ ‘মানবিক বিবেচনায়’ শর্তসাপেক্ষে তাঁকে সাময়িক মুক্তি দেয়। তখন থেকে তিনি গুলশানে নিজের ভাড়া বাসা ফিরোজায় থেকে ব্যক্তিগত চিকিৎসকদের তত্ত্বাবধানে চিকিৎসা নিচ্ছেন।

এইচ বিডি নিউজ টুয়েন্টি ফোর এ আপনাকে স্বাগতম। “সময়ের প্রয়োজনে- HBD NEWS24” নিয়ে আমরা আছি আপনার পাশে। আপনার পাশে ঘটে যাওয়া নানা সংগতি, অসংগতি আর তথ্য নিয়ে আপনিও যোগ দিন HBD NEWS 24 এ আমাদের কাছে মেইল করুন: hbdnews24@yahoo.com

More News Of This Category

© All rights reserved © 2012 HBDNEWS24

POWERED BY MH GROUP OF COMPANY.