বাঁশখালী উপকূলে পুরোদমে শুরু হয়েছে লবণ উৎপাদন। চিংড়ি ঘের গুটিয়ে চাষিরা দিনের বেশিরভাগ সময় পার করছেন উপকূলের লবণ উৎপাদনের কাজে। ইতোমধ্যে অনেক জমিতে লবণ উৎপাদন শুরু হয়ে গেছে।
গত মৌসুমে উৎপাদিত লবণের বর্তমানে প্রতি মণ বিক্রি হচ্ছে ৫০০-৬০০ টাকায়। এতে খুশি উপকূলের প্রান্তিক লবণ চাষিরা।
সরেজমিন ঘুরে দেখা গেছে, উপজেলার ছনুয়া, শেখেরখিল, পশ্চিম পুঁইছড়ি, চাম্বল ইউনিয়নের ডেপুটিঘোনা, শীলকূপের মনকিচর, সরল, গণ্ডামারা, বাহারছড়া, খানখানাবাদ ইউনিয়নে লবণ মাঠে লবণ উৎপাদনের কাজ চলছে।
চলতি মৌসুমে প্রতি কানি লবণের মাঠ লাগিয়ত হয়েছে ৩০-৩৫ হাজার টাকায়। ন্যায্যমূল্যে লবণ বিক্রি হওয়ার ফলে লবণ উৎপাদনে আগ্রহ বেড়েছে চাষিদের। ফলে এক ইঞ্চি জমিও অনাবাদী নেই।
বাংলাদেশ ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্প করপোরেশন (বিসিক) সূত্রে জানা যায়, বাঁশখালীতে ৭০ হাজার একর জায়গায় লবণ উৎপাদন শুরু হয়েছে। বাঁশখালীর সরল ইউনিয়নে বিসিকের আঞ্চলিক অফিস। সেখানে নিজস্ব তদারকির মাধ্যমে লবণ উৎপাদন ও রপ্তানি করে থাকেন চাষিরা। ইতোমধ্যে বাঁশখালীর উপকূলে উন্নত পদ্ধতিতে সাদা দানাদার ও পরিপক্ব লবণ উৎপাদনে চাষিদের উদ্যাক্তা উন্নয়ন প্রশিক্ষণ প্রদান করেছে বিসিক।
চাষিরা জানান, গত বছর প্রতি মণ লবণের দাম ছিল ১৫০ টাকায়। ডলার সংকটে লবণ আমদানি বন্ধ হওয়ায় দেশে উৎপাদিত লবণের দাম বেড়েছে।
বিগত দিনে উপকূলের অনেক আবাদী জমি অনাবাদী হয়ে পড়ে থাকলেও এ বছর ন্যায্যমূল্য পাওয়ায় এক ইঞ্চি জমিও অনাবাদী নেই। যদি শেষ পর্যন্ত এ অবস্থা অব্যাহত থাকে তা হলে বাঁশখালীর উপকূলীয় কয়েক সহস্রাধিক লবণচাষি পরিশ্রমের সুফল পাবেন এমনটি প্রত্যাশা লবণচাষিরা। বর্তমানে সরকার লবণচাষিদের স্বার্থ সুরক্ষার জন্য বিদেশ থেকে লবণ আমদানি বন্ধ করে দেওয়ায় চাষিরা উচ্ছ্বসিত।
চলতি মৌসুমেও বাঁশখালীর প্রায় লক্ষাধিক লবণচাষি ন্যায্যমূল্য ও পরিশ্রমের যথাযথ মূল্য পাবে এ আশায় লবণ মাঠে রাত-দিন পরিশ্রম করে যাচ্ছে। সরকার যদি বাঁশখালীর উপকূলে উৎপাদিত এসব লবণ দেশের সর্বত্র রপ্তানিতে সহযোগিতা করেন তা হলে এখানকার লবণচাষিরা আরও বেশি উপকৃত হবে এবং মানসম্মত লবণ উৎপাদনে আরও বেশি মনোযোগী হবেন এমনটি প্রত্যাশা বাঁশখালীর উপকূলীয় জনপদের চাষিদের।
ছনুয়া ইউনিয়নের ছোট ছনুয়া এলাকার লবণচাষি মনজুর আলম বলেন, ‘ব্যাংক থেকে লোন নিয়ে লবণ উৎপাদনের কাজ শুরু করেছি। ৫ কানি জমিতে দৈনিক ছয়জন শ্রমিকের বেতন দিতে হচ্ছে। আমরা চাই লবণের ন্যায্যমূল্য মৌসুমের শেষ পর্যন্ত অব্যাহত থাকুক।’
বাঁশখালী উপজেলা লবণ ব্যবসায়ী আবু আহমদ বলেন, ‘বর্তমানে মোকামে লবণ বিক্রি হচ্ছে প্রতি মণ ৫০০-৬০০ টাকায়। মৌসুমের শুরু থেকে উচ্চমূল্যে লবণের দাম থাকায় চাষিদের মুখে হাসি রয়েছে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত চাষিরা এই দাম পাবে কিনা সেটি নিয়ে শঙ্কিত।’
বাংলাদেশ ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্প করপোরেশন (বিসিক) বাঁশখালী উপজেলা কেন্দ্র প্রধান আনসারুল হক বলেন, ‘সরকার চলতি মৌসুমে দেশে লবণ উৎপাদনে স্বয়ং সম্পূর্ণতা অর্জন করতে একাধিক পরিকল্পনা গ্রহণ করেছে। বিদেশ থেকে যাতে লবণ আমদানি করতে না হয়, সে লক্ষ্যে চলতি মৌসুমে ৬০ হাজার একর জমিতে ১৮ লাখ টন পরিশোধিত লবণ উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছে।
তিনি আরও বলেন, ‘কালো লবণ উৎপাদনে লবণ মাঠ ক্ষয়প্রাপ্ত হয় এবং লবণের সঙ্গে মিশ্রিত কাদা দ্বারা মিল এলাকার নদনদী ক্রমান্বয়ে ভরাট হয়ে যাচ্ছে, যা পরিবেশের ওপর মারাত্মক প্রভাব ফেলছে। কাজেই পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষার্থে পলিথিন পদ্ধতিতে সাদা দানাদার ও পরিপক্ব লবণ উৎপাদনের মাধ্যমে দেশের লবণের চাহিদা পূরণ করার জন্য উদ্যোক্তা ও চাষিদের আমরা প্রশিক্ষণ দিয়েছিলাম।
উপজেলা নির্বাহী অফিসার সাইদুজ্জামান চৌধুরী বলেন, চলতি মৌসুমে লবণের দাম ভালো থাকায় চাষিরা উৎসাহ-উদ্দীপনার মধ্য দিয়ে লবণ চাষ শুরু করেছে।