মোহাম্মদপুর এলাকা থেকে জাল টাকার কারবারের সঙ্গে জড়িত একটি চক্রের প্রধান মো. হুমায়ন কবির (৪৮) নামের এক সাবেক পুলিশ সদস্যকে গ্রেফতার করেছে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি)।
বুধবার রাতে মোহাম্মদপুর থানার চাঁদ উদ্যান এলাকার একটি বাসায় অভিযান চালিয়ে তাকে গ্রেফতার করা হয়। জাল টাকার কারবারের সঙ্গে সাবেক পুলিশ সদস্য হুমায়ন ছাড়াও কয়েকজন ব্যাংক কর্মকর্তা জড়িত বলে তথ্য পাওয়া গেছে। তথ্য যাচাই-বাচাই করে ওই সব অসাধু ব্যাংক কর্মকর্তাদের আইনের আওতায় নিয়ে আসা হবে বলে জানায় ডিবি।
জাল টাকার কারবার ও গ্রেফতারের বিষয় জানাতে বৃহস্পতিবার ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) মিডিয়া সেন্টারে এক সংবাদ সম্মেলন করে ডিবি।
এ সময় ডিবির প্রধান মোহাম্মদ হারুন অর রশীদ বলেন, প্রতি মাসে ৬০ লাখ জাল টাকা বিক্রির লক্ষ্য নিয়ে কাজ করছিলেন হুমায়ন কবির। জাল টাকার কারবার পরিচালনার জন্য তিনি ঢাকাসহ সারা দেশে একটা নেটওয়ার্ক গড়ে তুলেছেন। এই চক্রের সদস্যরা বিভিন্ন উৎসবকে সামনে রেখে বাজারে জাল টাকা ছড়িয়ে দেন। বিভিন্ন হাট-বাজারের দোকান, মার্কেট ও ব্যাংকের মাধ্যমে এসব টাকা ছড়িয়ে দেয় চক্রের সদস্যরা। ব্যাংকে যখন ভিড় থাকে তখন কৌশলে গ্রাহককে জাল টাকা দিয়ে দেওয়া হয়। এক্ষেত্রে ব্যাংকের কিছু অসাধু কর্মকর্তারা জড়িত বলেও জানা গেছে।
এক প্রশ্নের জবাবে হারুন অর রশিদ বলেন, আমরা তাকে অপরাধী হিসেবে গ্রেফতার করেছি। তিনি এক সময় পুলিশে চাকরি করতেন। তবে কী কারণে তার চাকরি চলে গিয়েছিল সেই তথ্য আমার জানা নেই। তিনি বলেন, আইনের ঊর্ধ্বে কেউ নয়। অবৈধভাবে কেউ বড়লোক হতে চাইলে তাকেও আমরা আইনের আওতায় আনব।
গ্রেফতার হুমায়নকে প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদের বরাত দিয়ে ডিবি জানায়, তিনি তার পাঁচ সহযোগীর নাম বলেছেন। তারা হলেন- ইমাম হোসেন (৩০), মো. আলাউদ্দিন (৩৫), মো. সাইফুল (৩০), মো. মজিবর (৩২), আলাউদ্দিন (৪২)। এদের সঙ্গে যোগসাজশে জাল টাকা প্রস্তুত এবং বিপণন করে আসছিলেন হুমায়ন।
ডিবি আরও জানায়, মামলায় গ্রেফতার হয়ে এই চক্রের সদস্যরা বিভিন্ন সময় কারাগারে ছিলেন। কারাগারে বসেই তারা একজন আরেকজনের সঙ্গে পরিচিত হন। পরে জামিনে বেরিয়ে এক সঙ্গে জাল টাকার কারবারে জড়িয়ে পড়েন। গ্রেফতার হুমায়ন কবির মোহাম্মদপুরে ভাড়া নেওয়া বাসায় জাল টাকা বানানোর কারখানা হিসেবে ব্যবহার করে জাল টাকা তৈরি করে আসছিলেন। তার বিরুদ্ধে জাল টাকার চারটি মামলা আছে। তার অন্যান্য সহযোগীরা পলাতক রয়েছেন।
ডিবি জানায়, গ্রেফতারের সময় হুমায়ন কবিরের ফ্ল্যাটে তল্লাশি করে ১৬ লাখ জাল টাকা ও জাল টাকা তৈরির ল্যাপটপ, প্রিন্টার, লেমিনেশন মেশিন, পেস্টিং গামের কৌটা, টাকা তৈরির ডাইস, ফয়েল পেপার, টাকা তৈরির কাগজ, মোবাইল সেট উদ্ধার করা হয়।
ব্যাংকের কোন পর্যায়ের কর্মকর্তা এবং কতদিন ধরে এই চক্রটি জাল টাকা ব্যাংকে জমা দিয়ে আসছিল- সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নের জবাবে ডিবির হারুন বলেন, আমরা তাকে গ্রেফতারের পর জিজ্ঞাসা করি, এই জাল টাকাগুলো কোথায় কোথায় দেন। তিনি জানান, কেরানীগঞ্জ, নারায়ণগঞ্জ ও টঙ্গী এলাকায় চক্রের এজেন্টদের কাছে জাল টাকাগুলো সাপ্লাই করতেন। আবার বিভিন্ন ব্যাংকে যখন প্রচুর ভিড় হতো তখন ব্যাংকের অসাধু কর্মকর্তাদের যোগসাজশে জাল টাকা ব্যাংকে জমা দিতেন।