ডেঙ্গুতে আক্রান্ত ও মৃতের তালিকা বাড়ছে। সব বয়সী মানুষ এই রোগে আক্রান্ত হচ্ছে। ডেঙ্গু পরিস্থিতি নিয়ে কথা বলেছেন স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের রোগ নিয়ন্ত্রণ বিভাগের পরিচালক অধ্যাপক ডা. মো. নাজমুল ইসলাম। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন শিমুল মাহমুদ
অধ্যাপক ডা. মো. নাজমুল ইসলাম: নানা জনে নানা কথা বলবে, ওষুধ দেয় মশা মরে না কেন? এ অভিযোগগুলো করে কোনো লাভ নেই।
যারা মশা মারার তারা কিন্তু চেষ্টা করছে। আর মশা আছে বলেই ডেঙ্গু হচ্ছে। সিটি করপোরেশন চিরুনি অভিযান চালাচ্ছে।
স্থানীয় সরকার তাদের কাজ করছে। সমস্যা হলো আমাদের ব্যক্তি সচেতনতার অভাব। করোনার সময় আমরা বলেছি, মাস্ক পরেন, নিয়ম মানেন, তবু কিন্তু করোনা হয়েছে। কারণ করোনার অনেক বিষয় অজানা ছিল। ডেঙ্গুর ক্ষেত্রে কিন্তু সেটি নেই। এ ক্ষেত্রে দরকার ব্যক্তি সচেতনতা।
ঘরে থাকা ফ্রিজ বা এসির পানি জমিয়ে না রেখে প্রতিদিন পরিষ্কার করা। ঘরের বাইরে আবর্জনাগুলো পরিষ্কার রাখা, ছাদে বা বারান্দায় ফুলের টবে পানি জমতে না দেওয়া। যাঁরা নতুন ভবন বানাচ্ছেন, সেখানে যদি একটু কেরোসিন বা লবণ পানি ছিটিয়ে দেন, তাহলে কিন্তু এডিস মশার লার্ভা ফুটতে পারে না।
কালের কণ্ঠ : ডেঙ্গুতে মৃত্যু দিন দিন বাড়ছে। কমানোর উপায় কী?
নাজমুল ইসলাম : বেশির ভাগ ব্যক্তির জ্বর হলেও পরীক্ষা করাচ্ছে না। সময়মতো চিকিৎসকের কাছে যাচ্ছে না। চার থেকে পাঁচ দিনের মাথায় রোগীর যখন দ্রুত অবনতি (শকড্) হয়, তখন তারা হাসপাতালে আসছে। অনেকে আবার হাসপাতালে আসতে আসতে মারা যাচ্ছে।
গত দুই সপ্তাহ আগে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের এক জরিপে দেখা গেছে, ১২০ জনের মধ্যে ৮০ জনের ডেঙ্গুতে মৃত্যু হয়েছে হাসপাতালে আসার ৭২ ঘণ্টার মধ্যে। এই রোগীরা যদি জ্বর হওয়ার প্রথম দিনেই আসত তাহলে মৃত্যু আরো কমানো যেত।
কালের কণ্ঠ : জ্বর হওয়ার কয় ঘণ্টার মধ্যে পরীক্ষা করা উচিত?
নাজমুল ইসলাম : জ্বর হওয়ার ৭২ ঘণ্টার মধ্যে যদি (NS1)
অ্যান্টিজেন পরীক্ষা করেন, তাহলে ডেঙ্গু শনাক্ত করা যায়। কিন্তু ৭২ ঘণ্টা পর সেটি পজিটিভ না-ও আসতে পারে। এ ক্ষেত্রে রোগীদের মধ্যে একটি ভুল ধারণা তৈরি হয় যে তার ডেঙ্গু হয়নি। তখন সে দিব্যি ঘুরে বেড়ায়। অথচ সে সময়টা রোগীকে ডাক্তারের কাছে থাকার কথা। আমাদের এখানে মৃত্যুর এটি একটি বড় কারণ।
এবার ডেঙ্গু মূলত তিনভাবে প্রকাশিত হচ্ছে। সাধারণ ডেঙ্গু, রক্তক্ষরণজনিত ডেঙ্গু ও এক্সপ্যান্ডেড ডেঙ্গু সিনড্রোম। চার-পাঁচ দিন পর যখন জ্বর কমতে শুরু করে তখন রোগী সুস্থ হতে শুরু করে। আবার যদি অতীতে কখনো ডেঙ্গু হয়ে থাকে, তাহলে তার বিপদের আশঙ্কা মারাত্মক।
কালের কণ্ঠ : একজন ডেঙ্গু রোগীর প্লাটিলেট কখন প্রয়োজন হয়?
নাজমুল ইসলাম : প্লাটিলেট যদি কোনো কারণে একটু কমে যায় তাহলে রোগীর স্বজনরা প্লাটিলেট সংগ্রহের জন্য পাগলের মতো ছোটাছুটি করতে থাকে। অথচ রোগী মারা যাচ্ছে পানি শূন্যতায় ও রক্তক্ষরণজনিত সমস্যায়। প্লাটিলেট ১০ হাজারের নিচে নামলেও অনেক রোগীর ক্ষেত্রে প্লাটিলেট দেওয়ার দরকার হয় না।
কালের কণ্ঠ : আরো সচেতনতার জন্য কী করা যেতে পারে।
নাজমুল ইসলাম : এই সময়ে ছোট বাচ্চাদের ফুলহাতা জামা পরিয়ে রাখা, পায়জামা পরিয়ে দেওয়া; বয়স্ক মানুষ যাঁরা একটু হাঁটাচলা কম করেন বা এক জায়গায় বসে থাকেন, তাঁদের মোজা পরিয়ে রাখা, ফুল হাতা পাঞ্জাবি পরিয়ে দেওয়া বা একটা ফুলহাতার শার্ট পরিয়ে দেওয়া। ঘুমানোর সময়ে মশারি টানিয়ে দেওয়া। তাহলে মশা কামড়ানোর সুযোগ কম পাবে। জনগণ যদি সচেতন হয় তাহলে দ্রুতই ডেঙ্গু কমে আসবে। ডেঙ্গুতে হাসপাতালের শয্যা বাড়ানো, আইসিইউ বাড়ানো—এটা কোনো সমাধান নয়।