জানা গেছে, চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে বর্তমানে ১০২ জন দগ্ধ রোগী চিকিৎসা নিচ্ছেন। এর মধ্যে চক্ষু বিভাগে ভর্তি রয়েছেন ১৫ জন। এ ছাড়া বার্ন ইউনিট, সার্জারি বিভাগ এবং অর্থোপেডিক বিভাগে চিকিৎসাধীন আরও অন্তত ৫০ রোগীর চোখের সমস্যা রয়েছে বলে চক্ষু বিভাগ সূত্রে জানা গেছে।
জানতে চাইলে চমেকের চক্ষু বিভাগের প্রধান অধ্যাপক তনুজা তানজিম প্রথম আলোকে বলেন, অনেকের চোখে রক্ত জমাট বেঁধে গেছে। পানি জমে চোখ ও মুখমণ্ডল ফুলে গেছে। কারও কর্নিয়ায় আঘাত লেগেছে। আবার কারও চোখের সাদা অংশ লাল হয়ে গেছে। আগুন ও রাসায়নিক দুই কারণেই এ অবস্থা হতে পারে।
এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, দীর্ঘ মেয়াদে সমস্যা হবে কি না, এখনই কিছু বলা যাচ্ছে না। মনে হচ্ছে, ড্রপ দিলে ঠিক হয়ে যাবে। তবে চিকিৎসা নিতে হবে। চক্ষু বিভাগে ভর্তি রোগী ছাড়াও অন্য বিভাগে চিকিৎসাধীন অন্তত ৫০ জন রোগীকে চক্ষু বিভাগের অধীনে চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে বলে বিভাগীয় প্রধান জানান।
হাসপাতালের বার্ন ইউনিটে দেখা যায়, নূর হোসেন নামের এক যুবকের হাত ও পা আগুনে পুড়ে গেছে। তা আগের চেয়ে অনেকটা সুস্থ। তবে তার চোখের সমস্যা কাটছে না। কালো চশমা পরে আছেন তিনি। নূর হোসেন বলেন, চোখ খুব জ্বালা করছিল সেদিন। এখন ওষুধ দেওয়ার পর জ্বালাপোড়া কম। কিন্তু পুরোপুরি ভালো হয়নি।
নূর হোসেনের পাশের শয্যায় শুয়ে আছে রতন কারণ নামে আহত এক ব্যক্তি। রতন ওই ইয়ার্ডে পাঁচ বছর ধরে চাকরি করছেন। সেদিনকার ঘটনায় তিনি পা ও বুকে ব্যথা পান। তাঁর চোখ এখনো ফোলা রয়ে গেছে। রতন বলেন, ‘চোখের ড্রপ দিচ্ছি। এখনো ফোলা কমছে না।’
চিকিৎসকেরা জানিয়েছেন, হাইড্রোজেন পার–অক্সাইডের কারণে চোখ ও মুখ জ্বালাপোড়া করে ফুলে যাবে। এতে করে চোখের ক্ষতি বেশি হবে। চোখ জ্বলবে এবং লাল হয়ে যাবে। অনেক ক্ষেত্রে চোখের দৃষ্টিশক্তি কমে যাওয়ার আশঙ্কাও উড়িয়ে দেওয়া যাচ্ছে না।
এদিকে আজ সোমবার আহতদের দেখতে গিয়েছিলেন শেখ হাসিনা জাতীয় বার্ন ইনস্টিটিউটের প্রধান সামন্ত লাল সেন। এ সময় তিনি বার্ন ইউনিট ও পাশের প্রসবোত্তর ওয়ার্ডে রাখা রোগীদের খোঁজখবর নেন। চিকিৎসক ও রোগীদের সঙ্গে কথা বলেন।
সামন্ত লাল সেন সাংবাদিকদের বলেন, ‘তিনজন রোগী ছাড়া বাকিরা এখানে সুস্থ হয়ে যাবে মনে করছি। বাকি তিনজনের অবস্থা দেখে ঢাকায় নেওয়ার পরামর্শ দিয়েছি। তবে বেশির ভাগ রোগীর চোখের সমস্যা রয়েছে। অনেক রোগী ছাড়পত্র দেওয়ার পর্যায়ে রয়েছেন। কিন্তু চোখের কারণে ছাড়া যাচ্ছে না। তারপরও চোখের চিকিৎসকদের পরামর্শ নিয়ে কিছু কিছু রোগীকে ছাড়পত্র দেওয়া যেতে পারে।’
গত শনিবার রাতে চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ডের বিএম কনটেইনার ডিপোর ভেতরে আগুন লাগার পর বিস্ফোরণে কেঁপে উঠেছিল আশপাশের প্রায় আড়াই বর্গকিলোমিটার এলাকা।