সেতু চালুর পর আর পশুবাহী গাড়িগুলোকে ঘণ্টার পর ঘণ্টা অপেক্ষা করতে হবে না। কমবে যানবাহন সংশ্লিষ্ট কর্মীদের খরচ ও সময়। দীর্ঘ অপেক্ষার কারণে অসুস্থ হয়ে পশুর মৃত্যুর আশঙ্কাও থাকবে না। এসব কারণে এবার ঢাকায় কোরবানির পশুর সরবরাহ বাড়বে। পশু ব্যবসায়ী ও খামারিদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে এ তথ্য।
সময় কম লাগবে বলে ব্যবসায়ীরা রাজধানীর বাজারে পশু বিক্রি করে দ্রুত ফিরেও যেতে পারবেন। এতে ট্রাক মালিকরা পাবেন অতিরিক্ত ট্রিপ দেওয়ার সুযোগ।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ফরিদপুর, শরীয়তপুর, মাদারীপুর, মাগুরা, ঝিনাইদহ, নড়াইল, সাতক্ষীরা, যশোর থেকে পশু নিয়ে খামারিরা সরাসরি রাজধানীতে আসেন ভালো দামের আশায়।
পরিবহন খরচ কমাতে মাদারীপুর, শরীয়তপুর ও ফরিদপুরের অধিকাংশ পশু ব্যবসায়ী ট্রলারে পশু নিয়ে রাজধানীতে আসেন। বাকিরা আনেন ট্রাকে।
যশোর, মাগুরা, সাতক্ষীরা, নড়াইল ও ঝিনাইদহের ব্যবসায়ীরাও ট্রাকে করে গবাদিপশু ঢাকায় আনেন। পদ্মা পার হতে এসব ট্রাকের জন্য এতদিন ফেরিই ছিল ভরসা। বিড়ম্বনার সঙ্গে যুক্ত হতো বাড়তি খরচ। ব্যবসায়ীরা তটস্থ থাকতেন, অতিরিক্ত গরম বা ঠান্ডায় পশু আবার মরে না যায়। অনেক সময় ফেরিঘাটে অসুস্থ গরু জবাই করে কম দামে মাংস বিক্রির নজিরও রয়েছে।
এ বছর পদ্মা সেতু দিয়ে ট্রাক পার হবে বলে ব্যাপারীরা খুব একটা টেনশনে নেই।
তবে পশুর সরবরাহ বাড়লেও দাম কমবে না বলে জানিয়েছেন ব্যবসায়ীরা। গাবতলী হাটের ব্যবসায়ী মোবারক হোসেন জানিয়েছেন, গত দুবছর করোনার কারণে অনেকে কোরবানিই দিতে পারেনি। তবে এবছর অনেকে কোরবানি দেবেন বলে আমাদের ধারণা। পশুর চাহিদাও বাড়বে। তাই দাম কমার সম্ভাবনা নেই।
গাবতলীর গরুর হাটে ঝিনাইদহ থেকে পশু বিক্রি করতে আসা খামারি শেখ লিয়াকত হোসেন জানিয়েছেন, পদ্মা সেতু চালু হওয়ায় আমাদের দুর্ভোগ কমবে। কিন্তু এ বছর পশুর দাম বাড়তি। কারণ পশুর খাবারের দাম বেড়েছে, ওষুধের দাম বেড়েছে। মজুরিও বেড়েছে। বেড়েছে পরিবহন খরচও।
তিনি আরও জানান, আগে একটি ট্রাকে ২০টি গরু আনতে খরচ হতো ১৪-১৮ হাজার টাকা। এখন হয় ২২-২৫ হাজার টাকা। কোরবানির সময় এ খরচ আরও বাড়বে।
এদিকে রাজধানীর মাংস ব্যাবসায়ী সমিতির সভাপতি রবিউল ইসলাম জানিয়েছেন, জ্বালানি তেলের মূল্য বৃদ্ধির কারণে পরিবহন খরচ বেড়েছে আগেই। সম্প্রতি বেড়েছে পশুখাদ্যের দাম। জীবনযাত্রার ব্যায় মেটাতে বেড়েছে শ্রমিকের মজুরি। তাই আগের চেয়ে এবার কোরবানির পশুর দাম কমার সুযোগ নেই।
প্রাণিসম্পদ অধিদফতরের তথ্যমতে, গত বছর কোরবানিযোগ্য ২৮ লাখ ২৩ হাজার ৫২৩টি পশু অবিক্রিত থেকে গেছে। এতে বড় আর্থিক ক্ষতির মুখে পড়েছিলেন খামারি-ব্যাপারীরা।
অধিদফতরের তথ্যমতে, গতবছর কোরবানিযোগ্য পশু ছিল ১ কোটি ১৯ লাখ ১৬ হাজার ৭৬৫টি। বিক্রি হয়েছিল ৯০ লাখ ৯৩ হাজার ২৪২টি।
এ প্রসঙ্গে মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রী শ ম রেজাউল করিম জানিয়েছেন, কোরবানির পশু আমদানি করতে হবে না। গত বছরের থেকে যাওয়া পশুও এবার বাজারে যুক্ত হবে। তাই পশুর সংকট নিয়ে শঙ্কার কারণ নেই।
উল্লেখ্য, মন্ত্রিপরিষদ সচিব খন্দকার আনোয়ারুল ইসলাম জানিয়েছেন, আগামী ২৫ জুন শনিবার সকালে বাঙালির স্বপ্নের পদ্মা সেতু যান চলাচলের জন্য খুলে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার।