ঘূর্ণিঝড় ‘অশনি’ বৃষ্টি ঝরিয়ে দুর্বল হতে শুরু করেছে। আজ বুধবার সকালের মধ্যেই ‘অশনি’ প্রবল থেকে শুধু ঘূর্ণিঝড়ে পরিণত হবে। এরই মধ্যে ‘অশনি’ বাংলাদেশ থেকে আগের চেয়েও দূরে সরে গেছে। তবে এর অগ্রবর্তী অংশের প্রভাবে সারা দেশেই বৃষ্টি শুরু হয়েছে।
বিশেষ করে উপকূলীয় এলাকায় ভারি বৃষ্টি হচ্ছে। আগামী শুক্রবার পর্যন্ত সারা দেশেই এই বৃষ্টি থাকতে পারে বলে আবহাওয়া অফিস জানিয়েছে।
ভারি বৃষ্টিতে ক্ষতির মুখে পড়েছেন উপকূলীয় এলাকার কৃষকরা। রবিশস্য ও ধানক্ষেতে পানি জমে ফসল নষ্ট হওয়ার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। প্রয়োজনীয় লোকের অভাবে অনেকেই পাকা ফসলও ঘরে তুলতে পারছেন না।
আবহাওয়াবিদ মো. হাফিজুর রহমান গত রাতে কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘পশ্চিম মধ্য বঙ্গোপসাগর ও তত্সংলগ্ন এলাকায় থাকা ঘূর্ণিঝড় অশনি কিছুটা দুর্বল হতে শুরু করেছে। আর এর গতিপথ এখনো ভারতের ওড়িশা ও অন্ধ্র প্রদেশের দিকে রয়েছে। আগামী বৃহস্পতিবার এটি ওড়িশায় যেতে পারে। আবার ঘূর্ণিঝড়টি স্থলভাগে ওঠার আগে আরো দুর্বল হয়ে নিম্নচাপেও পরিণত হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। ’
হাফিজুর রহমান বলেন, ‘এরই মধ্যে ঘূর্ণিঝড়ের প্রভাবে বৃষ্টি হচ্ছে, যা আগামী শুক্রবার পর্যন্ত অব্যাহত থাকতে পারে। সারা দেশে কমবেশি বৃষ্টিপাত হলেও উপকূলীয় এলাকায় দমকা হাওয়ার সঙ্গে ভারি থেকে অতিভারি বৃষ্টি হতে পারে। তবে অশনি নিয়ে আমাদের আর কোনো আতঙ্ক নেই। ’
আবহাওয়া অধিদপ্তর আগের দুই দিনের মতো গতকালও চট্টগ্রাম, কক্সবাজার, মোংলা ও পায়রা সমুদ্রবন্দরগুলোকে ২ নম্বর দূরবর্তী হুঁশিয়ারি সতর্কসংকেত দেখাতে বলেছে। এ সময় উত্তর বঙ্গোপসাগরে অবস্থানরত সব মাছ ধরার নৌকা ও ট্রলারকে উপকূলের কাছাকাছি এসে সাবধানে চলাচল করতে বলা হয়েছে। তাদের গভীর সাগরে বিচরণ না করতে বলা হয়েছে।
আবহাওয়া অধিদপ্তরের তথ্যানুযায়ী, ঘূর্ণিঝড় কেন্দ্রের ৬৪ কিলোমিটারের মধ্যে বাতাসের একটানা সর্বোচ্চ গতিবেগ ঘণ্টায় ৮৯ কিলোমিটার, যা দমকা অথবা ঝোড়ো হাওয়ার আকারে ১১৭ কিলোমিটার পর্যন্ত বৃদ্ধি পাচ্ছে। ঘূর্ণিঝড় কেন্দ্রের নিকটবর্তী এলাকায় সাগর খুবই বিক্ষুব্ধ রয়েছে।
ঘূর্ণিঝড়ের ‘অশনি’র অবস্থান জানিয়ে আবহাওয়া অধিদপ্তর বলছে, গতকাল সন্ধ্যায় চট্টগ্রাম সমুদ্রবন্দর থেকে এক হাজার ৩০০ কিলোমিটার দক্ষিণ-পশ্চিমে, কক্সবাজার সমুদ্রবন্দর থেকে এক হাজার ২৭০ কিলোমিটার দক্ষিণ-পশ্চিমে, মোংলা সমুদ্রবন্দর থেকে এক হাজার ১৩৫ কিলোমিটার দক্ষিণ-পশ্চিমে এবং পায়রা সমুদ্রবন্দর থেকে এক হাজার ১৬০ কিলোমিটার দক্ষিণ-পশ্চিমে অবস্থান করছে।
গতকাল সন্ধ্যা ৬টা থেকে আগামী ২৪ ঘণ্টার আবহাওয়ার পূর্বাভাসে বলা হয়েছে, রাজশাহী, ময়মনসিংহ, ঢাকা, খুলনা, বরিশাল, চট্টগ্রাম ও সিলেট বিভাগের বেশির ভাগ জায়গায় এবং রংপুর বিভাগের অনেক জায়গায় হালকা থেকে মাঝারি ধরনের বৃষ্টি বা বজ্রবৃষ্টি হতে পারে।
এদিকে নৌপথে বৈরী আবহাওয়ায় গতকাল সন্ধ্যা ৬টা থেকে মুন্সীগঞ্জের লৌহজংয়ের শিমুলিয়া থেকে মাদারীপুরের বাংলাবাজার ও শরীয়তপুরের মাঝিরকান্দি লঞ্চ চলাচল বন্ধ রাখা হয়েছে। এ ছাড়া সকাল-সন্ধ্যা চলাচলকারী স্পিডবোট এমনিতেই বন্ধ রয়েছে। তবে ফেরি চলাচল করছে।
শিমুলিয়া বন্দর কর্মকর্তা শাহাদাত হোসেন জানান, আবহাওয়া অনুকূলে থাকলে বুধবার ভোর ৬টা থেকে লঞ্চ ও স্পিডবোট যথারীতি চলাচল করবে।
ভারি বৃষ্টিতে ভোলায় রবিশস্যের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। এরই মধ্যে প্রায় ১০ হেক্টর জমির ফসলের ক্ষতি হয়েছে। ক্ষতিগ্রস্ত ফসলের মধ্যে রয়েছে সয়াবিন, মরিচ, চিনাবাদাম ও মুগডাল। এদিকে গত ২৪ ঘণ্টায় ভোলা জেলায় ৫৪ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে।
বরিশালের বানারীপাড়ায় ঘূর্ণিঝড় অশনির প্রভাবে টানা বৃষ্টিতে ধান কেটে গোলায় তুলতে পারছেন না কৃষকরা। এমনকি ধান কাটা শ্রমিকেরও সংকট দেখা দিয়েছে। বিশারকান্দি ইউনিয়নের কৃষক মো. মামুন জানান, বৃষ্টির পানিতে ফসল তলিয়ে যাওয়ার উপক্রম হয়েছে। আরো দু-এক দিন বৃষ্টি হলে বড় ধরনের ক্ষতির মুখে পড়ব আমরা। আর এখন আউশ মৌসুমের বীজতলা তৈরির উপযুক্ত সময়।