ফোন করে বলে আব্বু কক্সবাজার যাচ্ছি, আমাকে ৫০০ টাকা দেন। এ সময় বিকাশে আমি ৩০০ টাকা দিই। বলেছিল গাড়িতে তেল নিতে হবে। রবিবার রাত ৯টা ৫৮ মিনিটে ছেলের সঙ্গে আমার সর্বশেষ কথার পর সোমবার সকালে খবর আসে আমার আদরের ছোট ছেলে সাকিব (সাকিব হাসান রিজভী)সহ তাদের পাঁচ বন্ধুর জীবন ঘাতক ট্রাক কেড়ে নিয়েছে।
ছেলেকে ঘিরে আমার সব স্বপ্ন শেষ হয়ে গেছে। কান্নাজড়িত কণ্ঠে কথাগুলো বলছিলেন চট্টগ্রামের লোহাগাড়ায় ট্রাক-প্রাইভেট কারের মুখোমুখি সংঘর্ষে নিহত রিফাতের বাবা ফারুক হাসান।
সাকিবের বাবা বলেন, ‘সে লেখাপড়ায় ভালো ছিল। অনেক প্রতিভাবান ও কর্মঠ ছিল। ছেলেকে এভাবে অকালে হারাবো তা কল্পনাও করতে পারেনি। ’ কান্নাজড়িত কণ্ঠে তিনি আরো বলেন, ‘কক্সবাজার সমুদ্রসৈকতে বেড়াতে বিভিন্ন সময় তারা যেত। রবিবার রাতে আমি ওই সময় বাসায় ছিলাম না। একটা মিটিংয়ে ছিলাম। সাকিব যখন ফোন করে বলল, আব্বু তুমি কোথায়, আমার ৫০০ টাকা লাগবে। ওই সময় সে কোথায় ছিল তাও জিজ্ঞেস করতে পারিনি। খুব তাড়াহুড়ো করছিল সাকিব। আমাকে এই-ও বলছিল আব্বু আমি কি আপনার কাছে আসব। এখন মনে হচ্ছে ছেলে যদি আমার সঙ্গে দেখা করতে আসলে হয়তো আজকে এভাবে অকালে ছেলেকে হারাতে হতো না। ’
সাকিব হাসান রিজভী চট্টগ্রামের সরকারি হাজী মুহাম্মদ মহসিন কলেজ থেকে বিবিএ পাস করে এখন এমবিএ করছে। প্রায় দেড় মাস আগে প্রাইভেট কারটি কিনেছিলো তার পরিবার। নতুন ওই গাড়িতে করে সাকিবসহ তার অপর চার বন্ধু কক্সবাজার যাচ্ছিল। অপর চার বন্ধুর মধ্যে একজন প্রিমিয়ার বিশ্ববিদ্যালয়ের, দুইজন মহসিন কলেজে অধ্যয়নরত।
গতকাল সন্ধ্যার আগ মুহূর্তে সাকিবের মরদেহ অ্যাম্বুলেন্সে করে বাসভবনের বিপরীত পাশে মুসলিম এডুকেশন সোসাইটি উচ্চ বিদ্যালয় মাঠে আনা হলে সেখানে স্বজনদের আহাজারিতে হৃদয়বিদারক দৃশ্যের অবতারণা হয়। দুই ভাই ও এক বোনের মধ্যে সাকিব দ্বিতীয়। ওই মাঠে রাতে প্রথম দফা ও গ্রামের বাড়ি পটিয়ায় চরকানাই গ্রামের বাড়িতে দ্বিতীয় দফা জানাজা শেষে পারিবারিক কবরস্থানে দাফন করা হয়।
এদিকে একই দুর্ঘটনায় প্রাণ হারানো হারুনর রশিদ হীরণ, মুহাম্মদ হুমায়ুন, খোরশেদ আলী সাদ্দাম এবং মনছুর আলীর পরিবার ও স্বজনদের মাঝে শোকের ছায়া নেমে এসেছে।